গণবাণী ডট কম:
আসন্ন ঈদ যাত্রায় যানজটের শংকার মধ্যে অস্বস্তির খবর হলো যানজট ও দীর্ঘসূত্রিতাসহ নানা কারণে বহুল আলোচিত বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের কাজ এবছরেও শেষ হচ্ছে না। ঈদযাত্রাকে স্বিস্তিদায়ক করতে বিআরটি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা কি ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে তা জানতে কথা বলার সময় জানা গেল মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এ প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। জানিয়েছেন প্রকল্পটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, চলমান বিআরটি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কোম্পানীর অংশের কাজের মেয়াদ ২০২৪ সালে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কনস্ট্রাকশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এখনো বাড়ানো হয়নি। মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। চেষ্টা করা হচ্ছে ডিসেম্বর/২৪ পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য।
তিনি বলেন, এ কাজের সাথে অনেকগুলি বিভাগ জড়িত। ফলে এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। ২৪ সাল পর্যন্ত প্রকল্প চলমান থাকবে। এর আগেই আমরা কাজ শেষ করে প্রকল্প উন্মুক্ত করে দিব। মেয়াদ বাড়িয়ে রাখার কারণ হলো, এই সময়ের মধ্যে সড়কে যদি কোন সমস্যা হয়, তাহলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তার নিজ খরচে সে সমস্ত সমস্যার সমাধান করে দিবে। কিন্তু কাজ শেষ করার কথা তার এক বছর আগে।
এদিকে, বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় অনেক অংশে যান চলাচলে সড়ক এক লেন হয়ে যাওয়া, সড়কের গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী থেকে টঙ্গী বিসিক এলাকা পর্যন্ত অংশে বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ রয়েছে, অনেক অংশ কার্পেটিং করার বাকী রয়েছে। এসব কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এ অংশে যানজটের আশঙ্কা করছেন এ পথে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। গাজীপুর মহানগর পুলিশ এসবব বিষয় মাথায় নিয়ে ঈদযাত্রা নির্বিগ্ন করতে বিআরটি কর্তৃপক্ষের নিকট বেশকিছু সুপারিশ করেছে।
গাজীপুরকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলা হয়। এপথ দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন চলে। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৭টি এবং উত্তরবঙ্গের ২৩ জেলার মানুষ এপথ ধরেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করেন। যোগাযোগের ক্ষেত্রে গাজীপুরের গুরুত্ব অপরিসীম।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ পথে মানুষের যানজটের ভোগান্তি দূর করতে ২০১২ সালে হাতে নেওয়া হয় বিআরটি প্রকল্প। প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সময় বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যয়ও বেড়েছে। সবশেষ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। প্রকল্প চালু হওয়ার পর এক দশকের বেশী সময় পেরিয়ে গেল। চলতি বছরেও চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই এই বিআরটি। ফলে এ পথে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের সঙ্গ ছাড়ছে না দুর্ভোগ আর ভোগান্তী। আসন্ন ঈদে এ ভোগান্তী আরো বাড়বে বলে শংকা তাদের।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে ১২ কি: মি সড়ক ঘুরে দেখা গেল, রাজধানী থেকে গাজীপুরে প্রবেশের মূখে তুরাগ সেতুতে দুটি লেনে গাড়ী প্রবেশ করছে এবং একটি লেনে গাড়ী ঢাকা যাচ্ছে। ফলে ঢাকা মূখী লেনে যানবাহনের গতি কমে গিয়ে সারি বড় হচ্ছে। টঙ্গী এলাকায় বাটার সামনে ফ্লাইওভারে উঠার জন্য নির্মাণ কাজ করার কারণে এখানে সড়ক এক লেন করে ফেলা হয়েছে। ফলে উভয়মুখী লেনে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে সিঙ্গেল লেনে রয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ, যেখানে পানি জমে কাদা, ময়লা এবং গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ এলাকায় উড়াল সড়কের নিচে কার্পেটিং এখনও অনেক জায়গায় শেষ হয়নি। টঙ্গীর বাটার সামনে থেকে টঙ্গী বিসিক পর্যন্ত সড়কের নিচের অংশে অনেক জায়গায় কারপেটিং করা হয়নি। কাজ চলমান থাকায় সড়ক সংকুচিত হয়ে মহাড়কের কোথাও দুই লেন, কোথাও আবার এক লেনে পরিণত হয়েছে। এছাড়া খানাখন্দ ও ভাঙাচোরা থাকায় গতি কমে গিয়ে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এতে টঙ্গী এলাকায় যানবাহন চলছে ধীরগতিতে।
এ কারণে আজমপুর থেকে ফ্লাইওভারে উঠে ওই এলাকায় গিয়ে নামার সময় যানজটের মুখে পড়ছেন যাত্রীরা। আবার ফ্লাইওভারে ওঠার সময়ে এক লেনে থাকায় উপরে ও নীচে একই কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া সড়কের ছয়দানা, গাজীপুরা বাস স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় বিআরটি প্রকল্পের যাত্রী ছাউনীর কাজ চলছে। এসব এলাকায় উভয়মূখী লেন সংকুচিত হয়ে একলেনে গাড়ী চলছে। ফলে দুপুরেও এসব এলাকায় যানবাহনের গতি কমে দীর্ঘ লাইন তৈরী হচ্ছে। এছাড়া মূল সড়কের ওপর নির্মাণসামগ্রী, ক্রেন ও জিনিসপত্র, যন্ত্রাংশ যত্রতত্র ফেলে রাখায় অনেক স্থানে সড়কের লেন কমে যাচ্ছে।
এসব কারণে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদ যাত্রায় সড়কে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বাড়বে, সড়ক প্রশস্ত করা না হলে, ভাঙ্গাচুড়া অংশ মেরামত ও সড়কের লেন বৃদ্ধি করা না হলে সড়কে যানজট হবে। এছাড়া একটু বৃষ্টি হলে ভোগান্তি আরো বাড়বে।
মনিমুক্তা পরিবহনের চালক তাজুল ইসলাম, সড়কের অবস্থা খুব খারাপ। এসব মেরামত করা না হলে, গাড়ী চলাচলের রাস্তা আরো ব করা না হলে ঈদের সময় যানজটে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে।
হানিফ পরিবহনের চালক সাহেব আলী বলেন, সড়কের ভাঙ্গাচুড়া ঠিক করতে হবে, ক গতির যানবাহন নিয়ণ্ত্রণ করতে হবে। লেন বাড়াতে হবে। না হলে যানজট হবে।
এ ব্যাপারে গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার আলমগীর হোসেন বলেন, আসন্ন ঈদ যাত্রাকে স্বস্তিদায়ক করতে উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় বিআরটির উড়াল সেতুর ওঠানামার স্থানে বসানো দুটি স্পিডব্রেকার ভেঙে ফেলা, সড়কের ওপর ময়লা-আবর্জনার একটি ডাম্পিং স্টেশন অপসারণ, মহাসড়কের দুই পাশের ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা, যাতে বৃষ্টিতে পানি না জমে। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ফ্লাইওভারের সাটারিংয়ের জিনিসপত্রও খুলে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিআরটি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সড়কের যেসব স্থানে রাস্তা সংকীর্ণ, সেখানে প্রশস্ত করা, চৌরাস্তা এলাকার বিআরটির যেসব লোহার খাচা-সাটারিংয়ের জিনিসপত্র রয়েছে সেগুলো অপসারণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োজিত করবো। সাথে রেকার থাকবে, যাতে কোনো গাড়ি নষ্ট হলে দ্রুত সরিয়ে নেয়া যায়। আমরা পরিবহন মালিক ও চালকদের সাথে আলোচনা করছি, যাতে সকলে ট্রাফিক আইন মেনে চলে। আশা করছি, ঈদ যাত্রা স্বস্তি দায়ক হবে।
এ ব্যাপারে বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক মহিরুল ইসলাম বলেন ঈদকে সামনে রেখে বিরাটি প্রকল্পের যেসব অংশে সংস্কার কাজ করা প্রয়োজন সেখানে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে যেখানে রাস্তা সম্প্রসারণ করা দরকার সেখানে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে। আরো বলেন উন্নয়ন কাজ চলমান থাকার কারণে কোথাও যদি রাস্তা সংকুচিত হয়ে থাকে সেখানে দ্রুত রাস্তা সম্প্রসারণ করে দেওয়া হবে।
ঈদযাত্রার সার্বিক বিষয়ে বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও যোগাযোগমন্ত্রী এ বিষয়ে কনসার্ন রয়েছেন। ইতিমধ্যে ঈদকে সামনে রেখে গাজীপুর মহানগর পুলিশের কিছু সুপারিশ পেয়েছি, সেগুলো এবং আমাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ মিলিয়ে সড়ক চলাচল উপযোগী রাখার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা যে কোন উপায়ই হোক আসন্ন ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের যাত্রা স্বস্তিদায়ক করব এবং কোন অবস্থাতে সড়কে কোন যানজট হতে দেবো না। এর জন্য আমাদের সব রকম প্রস্তুতি রয়েছে।