গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পেয়েছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আজমত উল্লা খান।
শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শনিবার সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার ও জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সভা শুরু হয়। সভায় সভাপতিত্বে করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, কাজী জাফর উল্যাহ, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, মো. রাশিদুল আলম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।
এডভোকেট আজমত উল্লা খানের সংক্ষিপ্ত জীবনী :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে প্রথম ব্যাচের ছাত্র আজমত উল্লাহ খান। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন সক্রিয় ভাবে। তিনি ১৯৫৫ সালের ১ জানুয়ারী গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গী ভরানে একটি সম্ভ্রান্ত খান পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ইউসুফ খান ও মাতা ফাতেমা খানম।
১৯৬৯ সালে টঙ্গী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে তার রাজনৈতিক হাতেখড়ি। তিনি আজিমপুর সরকারি প্রাইমারী স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণী পাস করে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি হন নবাব হাবিবুল্লাহ মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে উর্ত্তীণ হন। এইচএসসি ও ডিগ্রী পাস করেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি মহাবিদ্যালয় থেকে। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম ডিগ্রী অর্জন করেন।
তিনি ১৯৭৯ থেকে ৯০ সাল পর্যন্ত তিনি টঙ্গী থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ‘৯৬ ও ২০০৩ সাল পর্যন্ত দুইবার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৫ সালে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ ২০১৮ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য। তিনি ১৯৯৫ সালে টঙ্গী পৌর সভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তিন মেয়াদে ১৮ বছর টানা চেয়ারম্যান ও মেয়র ছিলেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠন হওয়ার পর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে ৭ জুলাই। ওই সময় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. আজমত উল্লা খান। অপরদিকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে জাহাঙ্গীর আল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ‘আনারশ’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে নামেন। ওইসময় নানা নাটকীয়তায় তিনি (জাহাঙ্গীর আলম) ব্যাপক আলোচনায় আসেন এবং পরবর্তীতে তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে আসেন। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানের। তিনি বিএনপি প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নানের নিকট ১ লাখ ৬ হাজার ৫৭৭ ভোটে পরাজিত হন।
গত ৯ এপ্রিল থেকে বুধবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত গাজীপুরসহ পাঁচ সিটি করপোরেশন ও পাঁচ পৌরসভার মেয়র এবং তিন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে আওয়ামী লীগ। গাজীপুর সিটির আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের ১৭ নেতাকর্মী মেয়র পদে নৌকা পেতে আওয়ামী লীগের সদর দপ্তরে আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন।
মনোনয়ন ফর সংগ্রহ করার পর আজমতউল্লাহ খান বলেছিলেন, তিনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত। তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্ন দিয়ে গাজীপুর সিটি গঠন করেছিলেন সে স্বপ্ন পুরণ হয়নি। গত ১০ বছরে পরিকল্পিত নগর গঠনে কোন মাস্টার প্ল্যান করা হয়নি। নাগরিকগণ সেবা বঞ্চিত হয়েছে। নগর ভবন দুর্ণীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। এখানে একজন যোগ্য লোক প্রয়োজন। আমার বিগত দিনের অবদানের মল্যায়ণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকেই দায়িত্ব দিবেন বলে আমার বিশ্বাস। তিনি দায়িত্ব দিলে আমি সততার সাথে দায়িত্ব পালন করব।
গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ ইচন এম কামরুল হাসান জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। এখানে ১ জন মেয়র, ৫৭ জন পুরুষ ও ১৯জন নারী কাউন্সিলরের পদ রয়েছে।
তিনি আরো জানান, সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৩ জন। পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩৩, নারী ভোটার ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮১২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) ভোটার রয়েছে ১৮ জন। নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৭শে এপ্রিল, মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০শে এপ্রিল, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৮ই মে, প্রতীক বরাদ্দ ৯ই মে এবং ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২৫শে মে। মোট ভোট কেন্দ্র ৪২৫টি। ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে।