গণবাণী ডট কম:
আজ ১৪৪৪ হিজরির ২৬তম রমজান। আজ মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। আজ সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হবে শবে কদরের রজনী। মুসলমানদের কাছে শবে কদর অত্যন্ত মহিমান্বিত একটি রাত। মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে সওয়াব হাসিল ও গুনাহ মাফের রাত হিসেবে শবে কদরের ফজিলত অতুলনীয়। এ রাত ‘হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’। কারণ, শবে কদরের এ রাতে পবিত্র কোরআন মজীদ অবতীর্ণ হয় এবং এই রাতকে কেন্দ্র করে কোরআন শরিফে ‘আল-কদর’ নামে একটি সূরাও নাজিল করা হয়। তাই মুসলিম উম্মাহর কাছে শবে কদর খুবই তাৎপযপূর্ণ ও পুণ্যময় রাত।
মহান আল্লাহ এই রাতের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে কুরআনুল কারিমে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরা নাজিল করেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি পবিত্র কুরআন লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ করেছি। (হে নবি) আপনি জানেন লাইলাতুল কদর কোনটি? কদরের রাতটি হাজার মাস থেকে উত্তম। এই রাতে ফেরেশতাগণ ও জিবরাইল (আ.) তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে প্রতিটি হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হন। এটা নিরাপত্তা যা (সন্ধ্যা হতে) সুবহে সাদিক পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ (সুরাতুল কদর)। মহানবি (স.) বলেন, এই রাতের মর্যাদা ১ হাজার মাস থেকে উত্তম। (মিশকাত, পৃষ্ঠা নং-১৭৩) মহানবি (স.) আরো বলেন, ‘যখন কদরের রাত উপস্থিত হয়, তখন জিবরাইল (আ.) বিশাল একদল ফেরেশতাসহ পৃথিবীতে আসেন।’ (মিশকাত, পৃষ্ঠা নং-১৮২)।
হাদিস শরিফে আছে, ২০ রমজানের পর যে কোনো বিজোড় রাত কদর হতে পারে। তবে, ২৬ রমজানের দিবাগত রাতেই লাইলাতুল কদর আসে বলে আলেমদের অভিমত।
হজরত আয়শা (রা.) নবিয়ে করিম (সা.) কে জিজ্ঞেস করেন যে, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা.) আমি যদি ভাগ্যক্রমে শবে কদরের রাত পেয়ে যাই, তাহলে কী দোয়া পাঠ করবো। আল্লাহর রাসুল (সা.) আয়শা (রা.) কে বলেন, এই দোয়া পাঠ করিও। আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্না। অর্থাৎ, হে আল্লাহ তুমি বড় ক্ষমাশীল, আমাকে ক্ষমা করো। শবে কদরের রাতে মহান আল্লাহর কাছে বেশি করে খালিছ তাওবা করা উচিত। শবে কদরের রাত থেকে অনেক মানুষ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইতিকাফে বসতে চান। মহান আল্লাহ পাক সবার ইতিকাফ এবং মহান আল্লাহর নিকট খালিছ তাওবাকে কবুল করুন।
অতএব আমরা মানবজাতি কার কখন মৃত্যু আসে সেটা আমরা জানি না। তবে সব সময়ই আল্লাহর কাছে তাওবার হালতে থাকা খুবই জরুরি। মৃত্যুর আগে ঈমান নছিবের অপর নেক আমলের নাম হলো তাওবা।
পবিত্র ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, অন্যান্য সময় এক হাজার মাস ইবাদত করলে যে সওয়াব পাওয়া যায়, কদরের এই রাতে ইবাদত করলে তার চেয়ে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। পবিত্র শবে কদর সমগ্র মানবজাতির জন্য অত্যন্ত বরকত ও পুণ্যময় রজনী। এ রজনীতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য ও রহমত লাভের আশায় ইবাদত-বন্দেগি করে রাত কাটান।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের মতো বাংলাদেশের মুসলমানেরাও নিজেদের গুনাহ মাফ এবং অধিক সওয়াব হাসিলের আশায় নফল ইবাদত, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকারের মধ্য দিয়ে রাতটি অতিবাহিত করবেন। পবিত্র এই রাতে অনেকে কবরস্থানে গিয়ে স্বজনদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন।
মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা শেষে অধিক সম্ভাবনার ভিত্তিতে আজ রাতে সারা দুনিয়ার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করে থাকেন। মাহে রমজানের বিশেষ ফজিলত ও গুরুত্ব অনেকাংশে মহিমান্বিত এই রাতের কারণেই বৃদ্ধি পেয়েছে। পবিত্র রমজানের এই রাতে লাওহে মাহফুজ থেকে নিম্ন আকাশে মহাগ্রন্থ আল কুরআন অবতীর্ণ হয়।
লাইলাতুল কদর উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ওয়াজ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার জোহরের নামাজের পর লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা এবং দোয়া মাহফিল হবে। ফজরের নামাজের পর দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ইবাদত ও আমলের সমাপ্তি ঘটবে।
পবিত্র শবে কদর উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মহামারি, সংঘাত, যুদ্ধবিগ্রহ, অভাব-অনটনসহ বিভিন্ন কারণে হাজার হাজার মানুষ অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। সব সংকট থেকে উত্তরণের জন্য তিনি সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম জাহানের উত্তরোত্তর উন্নতি, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেছেন।