গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আলোচিত-সমালোচিত সদ্য সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। নানা বিতর্কে জড়িয়ে তিনি হারিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের আশির্বাদ। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তিনি মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন কিন্তু খেলাপি প্রতিষ্ঠানের ঋণের জামিনদার হওয়ায় প্রথমে রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়ন বাতিল করেন। পরে আপিলেও বৃহস্পতিবার সেই আদেশ বহাল থাকে। সব দরজা বন্ধ হওয়ার পর ভবিষ্যৎ নিয়ে কি ভাবছেন আলোচিত এই সাবেক মেয়র? এসব জানতে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কথা হয়। মুঠোফোনে নেয়া তার বক্তব্য প্রশ্নোত্তর আকারে তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন : আপনি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন,সেটি রিটার্নিং কর্মকর্তা বাতিল করে দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে আপিলও করেছেন। আজ সেটিও বাতিল হয়ে গেছে, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
জাহাঙ্গীর আলমঃ আমি সবকিছুই আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছি। উপরে আল্লাহ আর নিচে জনগণ আছে। তারা এখন সবকিছু বিচার করবেন। আমি উচ্চ আদালতে আপিল করব।
প্রশ্ন : আপনি কি উচ্চ আদালতে ন্যায় বিচার পাবেন আশা করেন?
জাহাঙ্গীর আলমঃ বিচার থাকলে তো অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবো।
প্রশ্ন : উচ্চ আদালতে আপনার একটি রিট আদেশের অপেক্ষায় ঝুলে আছে এখন সেখানে কতটুকু ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা করেন?
উঃ: আগের রিটটি ছিল আমার মেয়র পথ বিষয়ক আর এটি হচ্ছে আমার নির্বাচন করার জন্য।আবেদন দুইটা দুই আলাদা আলাদা। একটা হচ্ছে আমার মেয়র পদ। আমি তিন বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করেছি। বাকি দুই বছর আটকে রয়েছে। আর দ্বিতীয় টা হচ্ছে আমি নির্বাচন করতে চাই। আমার সকল কাগজ বৈধ থাকার পরেও আমি ন্যায়বিচারটা পাচ্ছিনা। ন্যায় বিচারের জন্য আমি আমার প্রধানমন্ত্রী ও সর্বোচ্চ সুপ্রিম কোর্ট দুই জায়গাতেই আবেদন করে রাখছি।
প্রশ্ন : এখন পর্যন্ত আপনার সঙ্গে যা হয়েছে এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
জাহাঙ্গীর আলমঃ নির্বাচন কমিশন যা করছে,এটা নিরপেক্ষ হচ্ছে না। কাউকে দিয়েছে প্রচার করতে, টেকনিকে সে দুনিয়া লইয়া, সব পাওয়ার লইয়া সে এখানে মিটিং করতেছে। আইনে আছে, নয় তারিখে মার্কা বের হওয়ার পর নির্বাচনী প্রচারণা করবে। আপনার কী চোখে কী পড়ে ? এসব যে করছে এগুলো কী আপনাদের চোখে পড়ছে? যারা আইন প্রণেতা তারা যদি আইন না মানে তাইলে পাবলিক কই থাইকা আইন মানবো? তিনি আরও বলেন, কার বিরুদ্ধে আইনডা ভঙ্গ করতাছে, প্রার্থীডা কে তাদের সঙ্গে, কাউন্টারটা কে? আইন ভাংতাছে কার জন্য? কার ভয়ে? জনতার ভয়ে? জনতার ভয়ে কী আইন ভাংতেছে? অন্য কোন পার্টির জন্য আইন ভাংতেছে? অন্য প্রার্থীর জন্য আইন ভাংতেছে। তিনি আরও প্রশ্ন তুলে বলেন, আইনডা রক্ষা করবে কে? আইনডা যাদের রক্ষা করার কথা তারাই আইন ভাংতেছে। আপনারা যদি এটা যদি চোখে দেখেন তাহলে গুড। আর যদি না দেখেন তাইলে আর কিছু বলার নাই। আমি সবার প্রতি সন্মান রেখে বলছি, আমার শহরের মানুষের সন্মান রক্ষার্থে এখানে ভোটটা যেন সুন্দর হয়, মানুষের গ্রহণযোগ্য হয়, সবাই যেন ভোটটা দিতে আগ্রহ বোধ করে। এই পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব।
প্রশ্ন : দলের হাই কমান্ডের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কিংবা তাদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে?
জাহাঙ্গীর আলমঃ কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে তেমন কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করছে না। যাদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে তারা শুধুমাত্র হাই হ্যালো করছেন। এ পর্যন্তই।
প্রশ্ন : প্রধানমন্ত্রী বললে আপনি সড়ে দাড়াবেন এমন একটা আলোচনা ছিল…
জাহাঙ্গীর আলমঃ আমি কাউকে আলোচনা করতে বলি নাই। কেউ করছে কী না সেটা তাদের ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি আমার কোন যোগাযোগ হচ্ছে না। সিনিয়র নেত্রবৃন্দ হয়ত আলোচনা করে থাকতে পারেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে যা বলবেন আমি সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিব। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অন্যটা না।
প্রশ্ন : বর্তমান অবস্থায় আপনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কী-না?
জাহাঙ্গীর আলমঃ আমি এ বিষয়ে যেদিন মনোনয়ন জমা দিয়েছি সেদিনই সবকিছু বলে দিয়েছি। তারপর আপনারা সবকিছু দেখছেন এবং বুঝতে পারছেন। এখানে আমার আর নতুন করে বলার কি আছে? আপনারা সবকিছু দেখেছেন না? বুঝতেছেন না? তারপরও যদি বুঝতে না পারেন, তাহলে আপনাদের যা খুশি আপনারা তা লিখে দিতে পারেন। অসুবিধা নাই। মরার আর মরা কি? অসুবিধা নাই, আল্লাহ ভরসা। আল্লাহর উপরে ছেড়ে দিয়েছি। আল্লাহ আর জনগণই নিরাপত্তা দিয়া রাখে।
প্রশ্ন : আপনার মনোনয়ন ফিরে না পেলে কি করবেন?
জাহাঙ্গীর আলমঃ মা ছেলে আছি যা হয় হোক কপালে যা আছে ভাগ্যের লিখন। আমার মা বলেছেন সন্তানের যে ক্ষতি করছে এই ক্ষতি প্রতিবাদে আমার মা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। মা হিসেবে যা বলবেন তার জন্য আমি ত্যাগ স্বীকার করব। মার সাথে সন্তান জনতার আদালতে যাবে।
প্রশ্ন : সব শেষে কিছু বলার আছে কিনা?
জাহাঙ্গীর আলমঃ নিরাপত্তার বিষয়টি আমি আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছি। আমি এখন পর্যন্ত ন্যায়বিচার পাইনি। আমি সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত এটা নিয়ে চেষ্টা করব। আমি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে জনগণের জন্য গাজীপুরের মানুষের ভালোবাসার জায়গায় থাকতে চাই। আমি সর্বশেষ ভোটটা করতে চাই। আমি রাইট করেছি না রং করেছি জনগরের কাছে এটার পরীক্ষা দিতে চাই। এজন্য আমি সবার কাছে সহযোগিতা চাই।