গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীতে প্রেমিকার সাথে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে চ্যাট করার কারণে ডেকে নিয়ে এক কিশোরকে হত্যার ঘটনায় দুই শিশুসহ কিশোর গ্যাং এর ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধি দিয়েছে।
নিহত কিশোরের নাম সিয়াম (২০)। সে গাজীপুর মহানগরীর সদর মেট্রো থানাধীন ছোট দেওড়া এলাকার মোঃ সফিকুল ইসলামের ছোট ছেলে।
গ্রেফতার কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা হলো গাজীপুর মহানগরীর সদর থানাধীন বাঙ্গাল গাছ এলাকার মোঃ ইউনুস আলীর ছেলে মোঃ রাকিব (২২), নগরীর দক্ষিণ ছায়াবিথী ফনির টেক এলাকার মোস্তফা কামালের ছেলে রিয়াদ হোসেন মুন্না (১৮), জামালপুর জেলার সদর থানার কেন্দুয়া কালীবাড়ির মো: মোশারফ হোসেনের ছেলে মো: হাসিবুর রহমান টুটুল (২১), জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার ব্রাক্ষ্মনপাড়া এলাকার মোঃ সাইফুল ইসলামের ছেলে মোঃ শাকিল (১৯)। শেষোক্ত দুজন মহানগরীর দক্ষিণ ছায়াবিথী এলাকায় পিতা মাতার সাথে ভাড়া বাসায় থাকতো। এছাড়া অপর দুজনের মধ্যে একজনের বয়স ১৫, অপরজনের বয়স ১৬ বছর।
জিএমপি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল ইসলাম জানান, গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে মহানগরীর সদর থানাধীন দক্ষিণ ছায়াবিথী সাকিনস্থ ফণিরটেক এলাকার নিরিবিলি মাঠের পূর্ব পাশে ধানক্ষেতের কাছে এক কিশোরের লাশ পাওয়া যায়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে। লাশের হাত, পা, গলা, মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা এবং মুখমণ্ডল সহ লাশের সারা শরীরে কাটা রক্তাক্ত জখম ছিল। মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলে মর্গে পাঠানো হয়। পরে এঘটনায় থানায় হত্যা মামলা রুজু হয়।
মামলা দায়েরের পর পুলিশ তথ্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সদর থানাধীন দক্ষিণ ছায়াবিথী এলাকা গত ২৯ এপ্রিল এক শিশুকে গ্রেফতার করে। পরে সে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, একটি মেয়ের সাথে হত্যার মূল পরিপকল্পানাকারী এবং হত্যায় সরাসরি অংশগ্রহণকারী পলাতক আসামী মোঃ আরাফাত (২০) এর দীর্ঘদিন যাবৎ প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঘটনার ৫ দিন আগে ঐ মেয়ের সাথে নিহত সিয়ামের পরিচয় হয়। সে সূত্রে তারা নিজেদের মধ্যে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে চ্যাট করতে থাকে। কিন্তু ঐ মেয়ের ফেসবুক আইডি আরাফাতের মোবাইলে লগইন থাকায় আরাফাত তার প্রেমিকার ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের কথোপকথন বা চ্যাট নিজের মোবাইলে দেখতে পেত। এতে আরাফাতের চরম ক্ষোভ/আক্রোশ জমতে থাকে এবং সিয়ামকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় আরাফাত তার প্রেমিকার ম্যাসেঞ্জার আইডি থেকে আরাফাত নিজেই তার পরিচয় গোপন করে নিহত সিয়ামের সাথে চ্যাট করে এবং ঘটনাস্থলে এসে তার সাথে দেখা করতে বলে। সদ্য পরিচয় এবং নিজের ভাললাগা থেকে নিহত সিয়াম দেখা করতে গেলে মুল পরিকল্পনাকারী পলাতক আরাফাতসহ ১০/১৫ জনের একটি গ্রুপ সিয়ামের হাত পা বেধে এলোপাতাড়ি ভাবে চাপাতি, সুইচ গিয়ার চাকু ও ছেন দিয়ে কোপিয়ে হত্যা করে।
তিনি আরো জানান, ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে সেখানে হত্যাকারীরাও উপস্থিত উৎসুক জনতার সাথে মিশে ঘটনাস্থলের সকল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে।
তিনি বলেন, তার দেয়া তথ্য মতে পরে ৬ মে অপর ৫ আসামীদের গ্রেফতার করা হয়। তারা সকলেই ৭ মে আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্ধি দিয়েছে। আরাফাতের প্রেমিকা (যাকে কেন্দ্র করে ঘটনাটি ঘটেছে) সেই প্রেমিকাও ফৌ: কা: ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বাক্ষী হিসাবে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেছে। অন্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।