গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের সদর উপজেলার বানিয়ারচালা এলাকায় মাদকাসক্ত ছেলেকে গলাকেটে হত্যার অভিযোগে বাবাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ গাজীপুর ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতারের পর সোমবার সকালে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।
নিহতের নাম মো: আশরাফুল আলম (৩৩)। তিনি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থানার কানুহারী এলাকার ওমর ফারুক মিয়ার ছেলে।
গ্রেফতার পিতা মো: ওমর ফারুক (৬০)। তিনি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ থানার কানুহারী গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
সোমবার (৮ মে) বিকেলে গাজীপুর ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার জানান, আশরাফুল আলমের পিতা মাতা গাজীপুর সদর উপজেলার শিরিরচালা এলাকায় এলাকার মো: হযরত আলীর ভাড়া বাড়িতে ভাড়া থাকেন। গত শনিবার (৬ মে) সন্ধ্যায় ভাড়া করা তালাবদ্ধ ঘর থেকে মো: আশরাফুল আলমের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে জয়দেবপুর থানা পুলিশ। ছেলে হত্যার ঘটনায় রোববার (৮ মে) মা মোছা. দিলুয়ারা আক্তার বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশের পাশাপাশি গাজীপুর পিবিআই হত্যার রহস্য উদঘাটনে ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তের এক পর্যায়ে রোববার রাত ১১টায় নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার কান্দুরা এলাকা থেকে ছেলে হত্যার অভিযোগে বাবা ওমর ফারুককে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরো জানান, নিহত আশরাফুল ইসলাম ওমর ফারুকের বড় ছেলে। ওমর ফারুক গাজীপুরের বানিয়ারচালা এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকুরির সুবাদে এখানে ভাড়া থাকেন। আশরাফুল নিজে নিজে সাত-আটটি বিয়ে করে বিভিন্ন জায়গায় চুরিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াতো। সে ছির মাদকাসক্ত। সে নেত্রকোনায় গ্রামের বাড়ীতে থাকতো। সে নেশার জন্য বাবার কাছে আসত। তার বাবা-মা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শারীরিক ও মানসিক ভাবে অত্যাচার করতো। গত শুক্রবার (৫ মে) রাতে আশরাফুল বাজার থেকে একটি ধারালো চাপাতি কিনে ভাড়া বাসায় আসেন। শ্বশুড়বাড়ি যেতে বাবা ওমর ফারুকের মাসিক বেতন ৯ হাজার টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা চায়। বাবা-মা টাকা দিতে না চাইলে বাজার থেকে কেনা চাপাতি দিয়ে তাদের টুকরো টুকরো করে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। ওইদিন রাতে ছেলে আশরাফুল বাসায় আসায় রুমের স্বল্পতার কারণে আশরাফুল ও তার বাবা তাদের ভাড়া ঘরে এবং মা পাশের রুমের ভাড়াটিয়া শ্রাবণীর ঘরে রাত যাপন করে। রাত সাড়ে তিনটায় বাবা ওমর ফারুক তার স্ত্রীকে ফোন করে দ্রুত ঘরের বাইরে আসতে বলে। স্ত্রী বাইরে আসলে ওমর ফারুক তাকে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে বাসা থেকে বের হয়ে বাঘের বাজার বাস স্ট্যান্ডে আসে। এসময় স্ত্রী তাকে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে ওমর ফারুক জানায়, ভাড়াকৃত রুমে ছেলে আশরাফুলকে ঘুমন্ত অবস্থায় ছেলের কেনা চাপাতি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।
মাকছুদের রহমান আরো জানান, মাদকাসক্ত ছেলের অত্যাচার নির্যাতন সইতে না পেরে ক্ষোভে দুঃখে বাবা সন্তানকে গলাকেটে হত্যা করেছে। একমাত্র আসামি ওমর ফারুককে নেত্রকোনা গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামী ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে সোমবার গাজীপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।