গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ সালনা এলাকায় বাসায় ঢুকে কুপিয়ে কলেজছাত্রী রাবেয়া আক্তারকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাইদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। আজ বুধবার তাকে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব সদর দপ্তরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ রানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দিনভর অভিযানের পর তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর সাইদুলকে ঢাকায় র্যা ব সদর দপ্তরে আনা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আগামীকাল এ বিষয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
নিহত কলেজ শিক্ষার্থীর নাম রাবেয়া আক্তার ( ২১)। তিনি গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিন সালনা এলাকার আবদুর রউফের মেয়ে। নিহত রাবেয়া ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। রাবেয়া আক্তার ২০২০ সালে জয়দেবপুর সরকারী মহিলা কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। ছুড়িকাঘাতে আহতরা হলেন, মাতা ইনসুরেত নেছা (৫০), মেয়ে হাবিবা (১৮), খাদিজা (১৫), জান্নাত (১৩)।
উল্ল্যখ্য, গত সোমবার দিবাগত রাতে গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ সালনা এলাকায় বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ঐ কলেজ শিক্ষার্থীকে বাসায় ঢুকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে গৃহ শিক্ষক ও একটি মসজিদের ইমাম সাইদুল। এ সময় বাঁধা দিতে গিয়ে ঐ শিক্ষার্থীর মা গুরুতর আহত হয়ে মুমুর্ষু অবস্থায় আইসিইউসে আছেন। অপর তিন বোন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত গৃহ শিক্ষক সাইদুল ইসলাম পলাতক ছিল। সা্ইদুল মহানগরীর টেকিবাড়ী সাকিনস্থ টেকিবাড়ী জামে মসজিদে ইমাম ও স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানার মহেশতারা গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে।
গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জিয়াউল ইসলাম, কুমিল্লার হোমনার শ্রীমতি এলাকার বাসিন্দা আবদুর রউফ গাজীপুর মহানগরীর সালনা বাজারে আরএফএল প্লাস্টিক শো রুমে চাকুরী করেন। চাকরীর কারণে তিনি পরিবার নিয়ে মহানগরীর সালনা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তার বড় মেয়ে রাবেয়া, এবং ছোট দুই মেয়ে খাদিজা (১৫), জান্নাতকে (১৩) কোরআন শিক্ষায় পাঠদান করানোর জন্য স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষক সাইদুল ইসলামকে গৃহ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করেন। ঐ শিক্ষক বাসায় তাদের বাসায় গিয়ে ছোট দুই মেয়েকে কোরআন শিক্ষা দিতেন। এছাড়া সাইদুল পার্শ্ববর্তী টেকিবাড়ী সাকিনস্থ টেকিবাড়ী জামে মসজিদে ইমামতি করতো এবং সেখানে ছোট ছেলে মেয়েদের কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করত।
তিনি আরো জানান, সাইদুল ইসলাম রাবেয়ার ছোট দুই বোনকে পড়ানোর জন্য বাসায় যাওয়া-আসার সুবাদে রাবেয়া আক্তারে দিকে তার কু-নজর পড়ে। কিছুদিন পরে সাইদুল ইসলাম রাবেয়া আক্তারকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। এতে সাইদুল ইসলাম ক্ষীপ্ত হয়ে বড় মেয়ে রাবেয়া আক্তারকে বিভিন্ন ভাবে বিয়ে করার জন্য প্ররোচিত করতে থাকে। তার খারাপ উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে বাড়ির লোকজন তাকে বাসায় এসে পড়াতে নিষেধ করে। রাবেয়া আক্তার কলেজে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে বাসার বাইরে যাওয়া-আসার পথে সাইদুল তাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু তাতেও রাজী না হওয়ায় সাইদুল ইসলাম ক্ষীপ্ত হয়।
পরে গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টারদিকে দিকে রাবেয়াদের বাসার ঢুকে ধারালো ছুরি দিয়ে রাবেয়া আক্তারকে মাথায়, গলায়, হাতে, পায়ে এলোপাথারীভাবে কোপাতে থাকে। এসময় তার ডাক-চিৎকারে রাবেয়ার মা ও বোন হাবিবা, খাদিজা দৌড়ে রাবেয়া আক্তারের ঘরে গিয়ে দেখে যে, সাইদুল ইসলাম ছুরি দিয়ে রাবেয়া আক্তারের মাথায়, গলায়, হাতে, পায়ে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথারীভাবে কোপাইতেছে। তারা বাধা দিলে সাইদুল ছুরি দিয়ে অন্যদেরও আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে গুরুতর অবস্থায় রাবেয়াকে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে রাতেই চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে, আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন রাবেয়ার মা। আহত রাবেয়ার ছোট দুই বোন।