গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর জেলাধীন শ্রীপুর পৌরসভাৱ লবনদহসহ নদীর দখল ও দূষণরোধে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যথাযথ সহযোগিতা না করায় শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করে প্রশাসক নিয়োগের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী গত ৩০ মার্চ পাঠানো এক চিঠিতে স্স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে এ অনুরোধ করেছেন।
ঐ চিঠিতে বিভিন্ন সময়ের একাধিক চিঠির উল্লেখ করে বলা হয়েছে, গত ২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর কমিশনের চেয়ারম্যান গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌরসভার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত লবণদহ নদী (যা লবলং খাল নামেও পরিচিত) সরেজমিন পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে কমিশন চেয়ারম্যান লবণসহ নদীর দূষণরোধে লবলদহ নদীর জমি দখল করে রাখা স্তূপকৃত বর্জ্য অতিদ্রুত অপসারণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ডাম্পিং স্টেশন নির্ধারণ ও কমিশনকে অবহিতকরণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য জনসচেতনতায় সাইনবোর্ড লাগানোর নির্দেশনা প্রদান করেন।
চিঠিতে আরো বলা হয়, ২০১১ সালের ৮ ডিসেম্বর কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যানও একই স্থান পরিদর্শন করে লবণদহ নদীতে এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুইপাশে স্তূপকৃত পৌর বর্জ্য অপসারণের নির্দেশ দেন।
চিঠিতে বলা হয়, ঢাকার চারপাশের নদ-নদীর দূষণরোধে এক বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা অনুসারে বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি সরেজমিন পরিদর্শনের লক্ষ্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান চলতি বছরের ১৬ মার্চ গাজীপুর জেলায় শ্রীপুর পৌরসভার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত লবণদহ নদীর অবৈধ দখল, দূষণ সরেজমিন অবলোকন করেন। সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুর পৌরসভার আওতাধীন গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় লবণদহ নদী ও এর আশেপাশে সংগৃহীত পৌর বর্জ্য পূর্বের তুলনায় আরো বেড়েছে। আশেপাশের জনগণের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, ২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পরিদর্শনের প্রেক্ষিতে নদীতে বর্জ্য নিষ্কাশনরোধে শ্রীপুর পৌরসভাকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল, সে বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মহামান্য হাইকোর্টের ১৩৯৮৯/২০১৬ এর আদেশের মাধ্যমে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে দেশের সকল নদ-নদী দূষণ ও দখলমুক্ত করে সুরক্ষা, সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের নিমিত্তে আইনগত অভিভাবক (person in loco parentis) ঘোষণা করা হয়েছে। নদ-নদী সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা, অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশের সকল নদ-নদীর দূষণ ও দখলমুক্ত করে স্বাভাবিক নৌচলাচলের উপযোগী করে সুরক্ষা, সংরক্ষণ, উন্নয়ন, শ্রীবৃদ্ধিসহ যাবতীয় উন্নয়নে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বাধ্য থাকবে। নদ-নদী সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা, অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নদী কমিশনকে সঠিক এবং যথাযথ সাহায্য ও সহযোগিতা দিতে বাধ্য থাকবে। শ্রীপুর পৌরসভার জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশনাকে এহেন অবজ্ঞা মহামান্য হাইকোর্টে উক্ত রায়ের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এজন্য শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র সরাসরি দায়ী বলে পর্যবেক্ষণে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান তার চিঠিতে স্স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশানুসারে গাজীপুর জেলাধীন শ্রীপুর পৌরসভার লবণদহ নদীর দখল ও দূষণরোধে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যথাযথ সহযোগিতা না করায় শ্রীপুর পৌরসভার মেয়রকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করে প্রশাসক নিয়োগের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন।
বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী নদী সুরক্ষায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জরুরী। বর্জ্যের কারণে লবলং আজ ধুকছে। বার বার আমরা এ কথা বলার চেষ্টা করেছি। রাষ্ট্রের সম্পদ বাঁচানো সকলের দায়িত্ব। সে জায়গায় জনসাধারণ ও রাষ্ট্রকে বাঁচাতে নদী রক্ষা কমিশন সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন নদীর অভিভাবক। নদী পূনরুদ্ধার, সংরক্ষণ ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে কমিশন দায়বদ্ধ। আর এ কাজ করার ক্ষেত্রে কমিশন স্থানীয় বাস্তবায়নকারী সংস্থার উপর নির্ভর করে। যেমনটি নির্ভর করেছিল শ্রীপুর পৌরসভার উপর। কিন্তু কমিশন বলছেন, পৌরসভা মেয়রের কাছ থেকে সেইরকম কোন সহযোগিতা পাননি। মেয়র সাহেবের এরকম শৈথিল্য তথা নদীর প্রতি অবহেলা সত্যিই দুঃখজনক। সংবিধান অনুযায়ী আমরা প্রত্যেকই নদী, প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বদ্ধপরিকর। মেয়রের দায় আরো বেশী।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমি সরকারিভাবে দুইবার এবং ব্যক্তিগতভাবে একাধিকবার সরেজমিনে দেখেছি। সকল প্রাকৃতিক নদীসহ অন্যান্য জলাধার রক্ষার দায়িত্ব স্থানীয়র সরকারের েএসব প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে ন। এ জন্য আমরা চিঠি দিয়েছি। আশা করি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।