গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচারণার তৃতীয় দিনে জমে উঠেছে ভোটের মাঠ। নগরের প্রতিটি অলি গলিতে ছেয়ে গেছে পোস্টার আর ব্যানারে। চায়ের দোকান গুলোতে জমেছে নির্বাচনী আলাপ। শুক্রবার ছুটির দিন থাকলেও ছুটি নেই নির্বাচনের ৩২৯ জন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকদের। শুক্রবার দিনভর মহানগরীর অলি গলি রাজপথ চষে বেড়িয়েছেন তারা। সর্বত্রই চলছে নিজ নিজ নেতা কর্মী সমর্থকদের সাথে নিয়ে লিফলেট বিতরণ, মাইকিং, পোস্টার লাগানোর কাজ। প্রার্থীরা দল বেধে, কখনো ছোট ছোট মিছিল নিয়ে যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। বাড়ীতে বা রাস্তায় বা বাজারে যেখানেই ভোটার দেখতে পাচ্ছেন, সেখানেই নিজ নিজ প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করছেন। দিচ্ছেন নানা রকম প্রতিশ্রুতি।
অন্যদিকে, কাউন্সিল প্রার্থীরা ওয়ার্ডের পাড়ায় পাড়ায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটে বেড়াচ্ছেন। যাচ্ছেন নিজ নিজ ওয়ার্ডের ঘরে ঘরে। নিজ নিজ প্রতীক জানিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি ও দাবী পূরণের আশ্বাস দিয়ে ভোট চাইছেন তাঁরা।
শুক্রবার কিছু কিছু এলাকায় ব্যতিক্রমি চিত্রও দেখা গেছে। অনেক প্রার্থী না জেনে নিজের ছবির পাশাপাশি অন্য মানুষের ছবি ব্যবহার করে পোস্টার ছাপিয়ে সেগুলো টানিয়েছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন তার প্রচার পত্রে ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের নাম ও ছবি ব্যবহার করায় বৃহস্পতিবার রাতে শোকজ করা হয়। একারণে আরো যারা আচরণ বিথি বহির্ভূতভাবে পোস্টার টানিয়েছেন তারা সেগুলো নিজ উদ্যোগে আবার নামিয়ে নিচ্ছেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী এড. আজমত উল্লা খান শুক্রবার সকালে মহানগরীর টঙ্গীতে নিজ বাসভবনে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নির্বচনী আলাপ করেন। পরে টঙ্গী বাজার এলাকায় ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা ও ভোট প্রার্থনা করেন। তিনি টঙ্গীর ভাদাম উত্তর পাড়া এলাকায় ভাদাম উত্তরপাড়া বায়তুর রহমান জামে মসজিদে জুমার নামাজ করেন। পরে সেখানে একটি পথ সভায় বক্তব্য রাখেন। বিকেলে তিনি মহানগরীর দেওড়া এলাকায় আরো একটি পথ সভায় যোগ দেন। সন্ধ্যায় টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় গণসংযোগ শেষে রাতে টঙ্গী বাজার এলাকায় ফিরে যান। এসম তার সাথে বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থক অংশ গ্রহণ করেন। তারা বিভিন্ন সময় নৌকার পক্ষে শ্লোগান তুলে উৎসবের আমেজ তৈরী করেন। প্রচারণাকালে তিনি বলেন, নগরীর উন্নয়নের জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। টাকা গুলোর সঠিক ব্যবহার করা হলে হয়তো নগররের চিত্র পাল্টে যেতো। নগরের মানুষ জবাবদিহি মূলক, পরিচ্ছন্ন ও সন্ত্রাস মুক্ত নগরী চায়। আমি বিজয়ী হলে সেই লক্ষেই কাজ করবো। তিনি আরো বলেন, আমি নগরীর যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই শতশত মানুষ আমাকে দেখেই এগিয়ে আসছেন। নগরের মানুষ এই নির্বাচনটিকে একটি চেলেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। জনগন মেয়র পদে একজন স্বচ্ছ ও দূর্ণীতি মুক্ত মানুষকে চায়।
নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়দা খাতুন মহানগরীর সালনা এলাকায় জুমার নামাজের পর প্রচার-প্রচারণা অংশ নেন। জাহাঙ্গীল আলম সালনা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। এসময় তিনি তার মায়ের পক্ষে মুসুল্লীদের নিকট ভোট ও দোয়া কামনা করেন। নামাজের পর মসজিদের সামনে থেকে জাহাঙ্গীর আলম তা মা জায়দা খাতুনকে একটি ছাদ খোলা গাড়ীতে করে প্রচারণা শুরু করেন। এসময় বিপুল সংখ্যক কর্মী সমর্থক তাদের সাথে ছিলেন। পরে তারা সালনা থেকে ঢাকার ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে তেলিপাড়া, চান্দনা চৌরাস্তা ও গাছা এলাকায় গণসংযোগ করেন। পথে বিভিন্ন স্থানে থেমে থেকে তারা উপস্থিত নারী ও পুরুষের নিকট লিফলেট বিতরণ করেন ও ভোট প্রার্থনা করেন। এ সময় জায়গা খাতুন বলেন, আমি একটি সুষ্ঠু ভোট চাই মানুষ আমাকে নিজেদের মায়ের মত আপন করে নিয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি সাড়ে তিন বছরে গাজীপুর মহানগরীর অনেক উন্নয়ন করেছি। আপনারা আমার মাকে ভোট দিলে আমি ভোটটি পাব। এই শহরকে রক্ষার জন্য আপনারা আমাকে সহযোগিতা করুন। পরে তারা বিকাল পৌনে ৫টার দিনে রিটার্ণিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে শোকজ নোটিশের জবাব দেন।
নির্বাচনে হাতি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনি শুক্রবার সকালে মহানগরীর টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। তিনি জুমার নামাজের আজান পর্যন্ত মহানগরীর টঙ্গী নতুন বাজার, ব্যাংকের মাঠ, টঙ্গী রেলওয়ে জংশন গোল চত্বর, নোয়াগাঁও, তিস্তার গেট হয়ে ফাইসন্স রোড, চেরাগ আলী মার্কেট এলাকায় গণ সংযোগ ও প্রচারণা করেন। তিনি মহানগরীর বোর্ড বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ( মহর খান ওয়াকফ) জুমার নামাজ আদায় করেন। বাদ জুমা তিনি টঙ্গী মিরাশ পাড়ায় একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করেন৷ এসময় হাতি প্রতীকের পক্ষে একটি মিছিল অনুস্ঠিত হয়। এতে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে। সেখান তিনি থেকে আরিচপুর, মধুমিতা রোড এলাকায় গণসংযোগ করেন। পরে তিনি বিকেল ৫টা থেকে রাত পর্যন্ত মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন ২, ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। রাতে টঙ্গীর চেরাগআরী এলাকার সুরতরঙ্গ রোড এলাকায় নিবার্চন উপলক্ষে একটি অস্থায়ী কার্যালয় উদ্বোধন করেন। প্রচারণাকালে তিনি ভোটের দিন সকল বাধা উপেক্ষা করে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাওয়ার আহবান জানান। তিনি সকলের নিকট হাতি মার্কায় ভোট দিয়ে সকল অন্যায় ও জুলুমের বিপক্ষে রায় দেয়ার অনুরোধ করেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান টঙ্গী থানা এলাকায় জুমার নামাজ আদায় করেন এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডে গণসংযোগ ও প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন। টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন ২৭ চৌরাস্তায় পথসভা হয়েছে। অনেক সময় হেটে হেটে প্রচারণার সময় থেমে থেকে হাত পাখার পক্ষে মিছিল হয়েছে। প্রচারণায় তার সাথে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ গ্রহণ করেন। তারা সাথে রাখা হাত পাখা দিয়ে বাতাস করে এর প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে ও ভোটরদের নজর কাড়তে চেষ্টা করেন। এসময় তিনি বলেন, আমি মেয়র নির্বাচিত হলে নগরীতে এলাকা ভিত্তিক ট্যাক্স নির্ধারণ করা হবে। মানুষের উপর ট্যাক্সের বোঝা চাপানো হবে না। সমাজে ন্যায় বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে।
নির্বাচনে মেয়র পদে জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী ও সাবেক সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিন গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচারণা ও গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বেশ কয়েকটি পথসভায় বক্তব্য রাখেন। এ সময় তার সাথে দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় মুরুব্বিগণ অংশগ্রহণ করেন। তিনি বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের কাছে যান, লিফলেট বিতরণ করেন ও ভোট প্রার্থনা করেন। এ সময় তিনি বলেন, আমি সচিব থাকাকালে মহানগরীর উন্নয়নে ৫০০ সজ্জার তাজউদ্দীন হাসপাতালসহ এলাকার অনেক উন্নয়ন কাজ করেছি। আপনারা আমাকে মেয়র নির্বাচিত করলে, নগরীর উন্নয়নে, নগরবাসীর কল্যাণে কাজ করব। সবাইকে নিয়ে, সবার মতের ভিত্তিতে একটি সুন্দর পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলবো।
রাজধানীর নিকটতম ৩৩০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দেশের সবচেয়ে বড় সিটি কর্পোরেশন গাজীপুর। এ নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬জন। তাদের মধ্যে বিপরীত লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১৮জন। নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন, ১৯টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৮ জন ও ৫৬টি সাধারণ কাউন্সিলর পদের বিপরীতে ২৪৩ জনসহ সর্বমোট ৩২৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি।