গণবাণী ডট কম:
বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় মোখা ক্রমশ উপকুলের দিকে এগিয়ে আসতে থাকায় এবং এর তীব্রতা বাড়তে থাকায় দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ কক্সবাজার সমুন্দ্র বন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম সমুন্দ্র বন্দর থেকে ৮১৫ কিলোমিটার এবং মোংলা সমুন্দ্র বন্দর থেকে ৭৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
আবহাওয়া বিভাগ বলছে, ঘুর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬০ কিলোমিটার থেকে ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের আশপাশে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ বলছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ রবিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি এখন যে গতিতে অগ্রসর হচ্ছে, সেটি পর্যালোচনা করে আবহাওয়া বিভাগ এই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শনিবার রাত থেকে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব পড়তে শুরু করবে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে আট থেকে বারো ফুট বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
এছাড়া ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর ও ভোলার উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ থেকে সাত ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে সকাল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এলাকায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে বলে বিভিন্ন স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে। খুব একটা ঝড়ো বাতাস নেই। শহরাঞ্চলে জীবনযাত্রা এখনো পর্যন্ত স্বাভাবিক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে বিভিন্ন দ্বীপ ও উপকূলীয় এলাকায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সেন্ট মার্টিন থেকে গতকাল পর্যন্ত অসংখ্য মানুষ নিজেদের উদ্যোগেই টেকনাফে আত্মীয়দের বাড়িতে চলে এসেছে বলে জানান সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু আজ আর কেউ আসতে পারছেন না। কারণ ছোট বোট ও ট্রলার চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অনেকে এখন সরকারি উদ্যোগের আশায় আছেন। যদি তাদের নৌবাহিনীর সহায়তায় সরিয়ে আনা হয় সেন্ট মার্টিন থেকে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক শাহীন ইমরান গণমাধ্যমকে জানান, ওখানে সকলেই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করবে। সেন্ট মার্টিনে যে সমস্ত সরকারি স্থাপনা যেগুলো শক্ত, মজবুত, দু-তলা, তিনতলা এরকম ৩৭টা স্থাপনা আমরা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছি। ওখানে ৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।
তবে, বেশি আতঙ্ক মহেশখালীর দিকে। ওখানকার স্থানীয় সাংবাদিক বশির উল্লাহ গণমাধ্যমকে জানান, মহেশখালিতে ৮টি জায়গায় বেড়িবাধ ভাঙা, সেদিক দিয়ে জলোচ্ছাসে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কায় আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক শাহীন ইমরান আরো জানান, গতকাল থেকেই মাইকিং করে জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার যে আহবান জানানো হয়েছে। সেটি আজ সকাল থেকে আরো জোরদার করা হয়েছে। মূল উদ্দেশ্য সন্ধ্যার আগেই যারা ঝুঁকিপূর্ণ তাদের সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার।
তিনি বলেন, আশঙ্কা তো আছেই, ভূমিধ্বস হওয়ার, জলোচ্ছ্বাসের। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে যারা ভালনারাবল তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা। সে কাজটি আমরা করে যাচ্ছি। আমরা দুপুরের মধ্যেই সবাইকে বলছি আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসার জন্য, কিন্তু সন্ধ্যার পর যাতে কোনভাবেই কেউ কোন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় না থাকে সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই।
খবর : বিবিসি।