গণবাণী ডট কম:
নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন বিশ্বাস করে যে, আসন্ন পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজন করা সম্ভব হয় তাহলে আসন্ন যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই নির্বাচনের প্রতি দেশবাসীর রাজনৈতিক দলসহ বিশ্ববাসীর একটি অন্য ধরণের অনুভূতি কাজ করবে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, আসন্ন পাঁচটি সিটি নির্বাচন হচ্ছে টেস্ট ট্রায়াল। এক্ষেত্রে আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য, যাতে আমরা সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠানে সক্ষম হই।
শনিবার (২০ মে) দুপুরে গাজীপুর শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন-২০২৩ উপলক্ষে ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসারদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম।
এসময় তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, কেউ যদি ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোন অন্যায় অনিয়মের সঙ্গে জড়িত না থাকেন, তাহলে আপনাদের নির্বাচনে কাজ করতে কোন ধরণের ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। যদি কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করে আপনাদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেয়া হবে। সুতরাং আপনা আইন কানুন মেনে নির্বিগ্ন কাজ করবেন আপনাদের কোন ভয় থাকার বিষয় নেই। কেন্দ্রেরে বাইরে পর্যাপ্ত পরিমান আইন শৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে। তাদের সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট পর্যাপ্ত পরিমানে থাকবে। ৫৭টি ওয়ার্ডের একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সংরক্ষিত ১৯টি আসনে ১৯জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। কেন্দ্রে অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধকারীকে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করবেন। তাই আপনাদের ভায়ের কারণ নেই।
তিনি আরো বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের সব কিছুর কেন্দ্রীয় ব্যক্তি হচ্ছেন কেন্দ্র পরিচালনার প্রিজাইডিং অফিসারবৃন্দ। কোন পদ্ধতিতে আপনার কেন্দ্রের ফলাফল সুষ্ঠভাবে ঘোষণা করতে পারবেন তার জন্য সুনির্দিষ্ট কোন ফর্মূলা দেয়া যাবে না। কারণ কেন্দ্রের অবস্থান, কোন এলাকায় তা অবস্থিত এরকম অনেক কিছুর উপর নির্ভর করবে ওই কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে আপনার কারণেই। নির্বাচন কমিশনের আইন মেনে কেন্দ্রে সুষ্ঠু ভোট গ্রহনের জন্য সকল কর্মপরিকল্পনা আপনাদেরই করতে হবে। যেহেতু ইভিএমএ ভোট গ্রহণ করা হবে। তাই ভোট গণনার জন্য অতিরিক্ত ঝামেলা নেই।
তিনি বলেন, আপনার দায়টা কখন? আপনি যদি কারো প্রতি অনুরক্ত হয়ে কারো অপকর্ম করতে সহায়তা করেন, তা হলে আপনার ভয়ের বিষয়টি আছে। এছাড়া কারো কোন ভয় নাই। কারো কারণ দর্শানোর নোটিশ হতেই পারে। কারণ দর্শানো মানেই কারো শাস্তি হয়েছে তা কিন্তু নয়। কোন কারণে কারো কারণ দর্শানোর নোটিশ হতেই পারে। তারজন্য ভয়ের কিছু নেই। কেন্দ্রে কোন ঘটনার তদন্তে আপনার বক্তব্য নেয়া হবে, সিসিটিভির ফুটেজ দেখা হবে এবং সাক্ষীদের বক্তব্য নেয়া হবে। এতে যদি আপনার সম্পৃক্তা না থাকে তা হলে আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই।
তিনি বলেন, প্রিজাইডিং অফিসারদের যে অর্থ নির্বাচন কমিশন দিয়ে থাকে সেই অর্থে কিছুই হয় না। যারা প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের পকেট থেকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়না এরকম নজির খুব কম। আপনারা অর্থের বিষয়টি মাথায় না রেখে জাতীয় দায়িত্ব হিসেবে এটাকে বিবেচনা করবেন। আপনাদের সম্মানী ও যাতায়াত ভাড়া বাড়ানোর যায় কিনা তা আমরা চেষ্টা করবো।
নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, বিভিন্ন কারণে ভোট গ্রহণ স্থগিত হতে পারে, বাতিলও হতে পারে। যেমন বৈদ্যুতিক বিভ্রাটের কারণে কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনগুলো একটাও চলছে না, হঠাৎ করে ঝড় শুরু হয়ে গেছে, তখন নির্বাচনটা বন্ধ হয়ে যাবে। সেখানে প্রকৃতির উপর কারো হাত নেই। আবার এমনও হতে পারে আপনার কেন্দ্রে একজন দূর্বৃত্ত প্রবেশ করে আপনাদের মারধর করে ওখান থেকে বের করে দিয়ে তারা সিল মারে। যদিও এখানে যেহেতু ইভিএম-এ ভোট হচ্ছে তাই এখানে জোর করে ব্যালটে সিল মারার সুযোগ নেই। আবার এমন হতে পারে কেউ কেন্দ্রটি দখল করে বলে আপনারা এখানে থাকুন কিন্তু আমার লোকজন গোপন বুথে অবস্থান করবে এবং যেই ভোট দিতে যাক তাকে জোর করে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে বাধ্য করবে। কোন সমস্যা কোথায় উদ্ভব হবে, তা অপনার আমার কারো জানা নাই। সমস্যা হতে পারে। তার সমাধানও আছে। যখন যে ঘটনাই ঘটুক আপনারা সঙ্গে সঙ্গে সে সমস্যার কথা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানাবেন। এছাড়াও নির্বাচন কমিশন ভোট কেন্দ্র’র সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ/ছবি দেখেও কেন্দ্রের সবকিছু দেখভাল করবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির ছিলেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর, আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সায়েম, রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, উপসচিব রাশেদুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা নির্বাচন অফিসার কামরুল ইসলাম এবং দুই শতাধিক প্রিসাইডিং অফিসার উপস্থিত ছিলেন।