গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম রনি প্রচারণার শেষ দিনে তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। ইশতেহার ঘোষণাকালে তিনি বলেন, গাজীপুরের উন্নয়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখে এলাকায় উন্নয়নের গোড়াপত্তন করেন টঙ্গীর সরকার পরিবার। পারিবারিক ঐহিত্য ও অভিজ্ঞতাকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নে কাজে লাগাতেই তিনি মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন।
রনি জানান, সাবেক টঙ্গী পৌরসভার প্রতিষ্ঠকালীন দুইবারের চেয়ারম্যান ছিলেন তার বড় চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার। পরবর্তীতে তিনি গাজীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য হিসেবে গাজীপুরের উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। অপর চাচা মরহুম সাহাজ উদ্দিন সরকার টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখেন। তাই পারিবারকি ঐতিহ্য ধরে রেখেই নগরীর উন্নয়ন কাজ করতে চান।
মঙ্গলবার (২৩ মে) সকাল পৌনে ১০টায় মহানগরীর টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় নিজ বাড়িতে তিনি তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে এসব তথ্য তুলে ধরেন। তিনি নির্বাচিত হলে গাজীপুর সিটিকে পরিচ্ছন্ন, সবুজ নাগরিক নাগরিক সেবা সহজ, জনবান্ধব, শিল্প বান্ধব, বিকল্প রাস্তা সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের যানজট মুক্ত যাতায়াতের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের মাধ্যমে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত সিটি গড়তে চান।
নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের প্রায় সব জেলার লোকই গাজীপুর সিটিতে বসবাস করেন। এই সিটিতে জনসংখ্যা বাড়লেও নাগরিক সুবিধা বাড়েনি। অপরিকল্পিত নগরায়নে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে এই নগর। এই সিটির প্রথম নির্বাচনে নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করে ষড়যন্ত্রমূলক সাজানো মিথ্যা মামলা দিয়ে বছরের পর বছর কারা অন্তরালে রেখে মৃত্যু মুখে ঠেলে দেয়া হয়। এর ফলে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে গাজীপুরবাসী। সরকারী দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের ক্ষমতা ও স্বার্থের দ্বন্ধে দ্বিতীয় পরিষদের মের্য়ও তার দায়িত্বকাল অতিবাহিত করতে পারেননি। গত ৫বছর সিটি কর্পোরেশনে কী পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে তা এখন তাদের মুখ থেকেই উচ্চারিত হচ্চে। শত শত কোটি টাকার এই দুর্নীতির ভাগীদার ছিলেন তারা সকলেই। তাদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু না হলে হয়তো আমরা কেউ আজ এ দুর্নীতির চিত্র জানতেই পারতাম না।
তিনি বলেন, টঙ্গী পৌরসভার প্রতিষ্ঠকালীন আমার বড় চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার অত্যন্ত সুনামের সাথে দুইবার চেয়ারম্যান, অপর চাচা মরহুম সাহাজ উদ্দিন সরকার টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখেন। বড় চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার গাজীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে এলাকার উন্নয়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখে এলাকায় উন্নয়নের গোড়াপত্তন করেন। পারিবারিক ঐহিত্য ও অভিজ্ঞতাকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নে কাজে লাগাতেই চাই।
সকল হিংসা বিদ্বেষমুক্ত একটি সুন্দর ভবিষ্যত প্রজন্ম উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে অতীতের ১৮ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে তিনি। ১৮ দফা ইশতেহারে নির্বাচিত হয়ে গাজীপুর সিটিকে একটি পরিচ্ছন্ন সবুজ নগরী হিসেবে গড়ে তোলা ও সিটি কর্পোরেশনের সকল নাগরিকদের নাগরিক সেবা সহজ ও জনবান্ধব করা।
তিনি বলেন, অতিরিক্ত কর আরোপের ফলে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান সিটির বাইরে চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিসিক এলাকায় শিল্পোদ্যোক্তারা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকেই কাঙ্খিত সেবা না পেলেও তাদেরকে দুই থেকে তিন জায়গায় মোটা অংকের মাশুল গুনতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে গার্মেন্ট কারখানাসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মালিকরা স্বাধীনভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন না, ওয়েস্টেজ ব্যবসার নামে সারা বছরই তাদেরকে জিম্মি করে রাখা হয়। স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ হাসিল না হলে বা তারা কোনো কারণে অখুশি হলে শিল্পে কৃত্রিম শ্রমিক অসন্তোসহ অনাকাঙ্খিত নানা পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়। মাত্রাতিরিক্ত ট্যাক্সসহ এসব নানাবিধ বিড়ম্বনার কারণে শিল্পোদ্যোক্তারা ব্যবসা গুটিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। ফলে যে সকল নাগরিক বাড়ী-কলোনী ভাড়ার আয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করতেন তারা এখন দৈন্যদশায় পড়েছেন। আমি নির্বাচিত হলে শিল্প ট্যাক্স সহনীয় মাত্রায় নির্ধারণ করবো এবং শিল্পের সকল সমস্যা চিহ্নিত করে একটি শিল্প ও শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলবো।
রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ সহজ করতে বিকল্প রাস্তা সম্প্রসারণ-উন্নয়ন ঘটিয়ে ঢাকা-গাজীপুর যানজটমুক্ত যাতায়াতের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা হবে জানিয়ে ইশতেহারে তিনি বলেন, গাজীপুর শহরের সাথে ঢাকার সহজযোগাযোগের জন্য বনমালা রোড থেকে রেল লাইনের পূর্বপাশ দিয়ে তুরাগ নদ পর্যন্ত রাস্তাটি সম্প্রসারণ করবো এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করে তা কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত সম্প্রসারণ করবো। এর ফলেই ঢাকা থেকে গাজীপুর যাতায়াতের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এছাড়াও নির্বাচিত হলে জয়দেবপুর জংশনের দক্ষিণপাশ এবং উত্তরপাশ দিয়ে আরও দুুিট রাস্তা পূর্ব-পশ্চিমমুখী করে নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হবে। রাস্তা নির্মাণ/প্রশস্ত করণে ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্থদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। নাওজোর-কাশিমপুর-জিরানী ও গাজীপুর-পুবাইল সড়কের কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে। এছাড়াও মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ততম রাস্তাগুলোর রেলক্রসিং গুলোর উপর প্রয়োজন অনুসারে ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। মান সম্পন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত না হলে জাতি পিছিয়ে পবে, তাই ৫৭টি ওয়ার্ডে সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ৫৭টি স্কুল এন্ড কলেজ নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও সুস্থ বিনোদন ও খেলাধুলার জন্য ৫৭টি সুপরিসর খেলার মাঠ নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রতি ওয়ার্ডে দুই তিন বিঘা জমির সমন্বয়ে গড়ে তোলা হবে পাখির অভয়ারণ্য। টঙ্গী শিল্প এরাকার সুপ্রশস্ত রাস্তাগুলো দখলমুক্ত করে দুপাশে সবুজের সমারোহ ঘটানো হবে, নগরের ভেতরে দিয়ে বয়ে যাওয়ার খালগুলোকে পরিকল্পিতভাবে খনন ও দখলমুক্ত করে স্বচ্ছ জলের আধা তৈরী করা হবে। নগরবাসীর জীবনযাত্রার মানের সাথে সঙ্গতি রেখে সহনশীল মাত্রায় সুষম ট্যাক্স নির্ধারণ করা হবে।
নগরের টেকসই উন্নয়নের জন্য দেশের বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী, পরিকল্পনাবিদ, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, স্থপতিদের সমন্বয়ে মাস্টারপ্ল্যান তৈরী করে সিটির উন্নয়নে সচেষ্ট হবো। প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও মুরুব্বীদের সাথে পরিকল্পনামাফিক ওয়ার্ডের উন্নয়নে কাজ করবো। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে বায়ু ও পানি দূষণ সর্বনি¤œ মাত্রায় নামিয়ে আনার চেষ্টা করবো। পরিবেশ রক্ষায় সকল শিল্প কারখানার জন্য কেন্দ্রীয় শোধনাগার স্থাপন ও সিটিকে পলিথিনমুক্ত ঘোষনা করবো সকল জলাধার সংরক্ষণ করে মাছ চাষের মাধ্যমে যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
এছাড়াও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জলাবদ্ধতা দুরীকরণের ব্যবস্থা, সুপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প গ্রহণ, মাদক, সন্ত্রাসম ইভ টিজিংমুক্ত নগরী গড়ে তুলে মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তলে সমাজের নতুন সমস্যা কিশোর গ্যাং দমন ও বিপদগামী কিশোরদের সংশোধনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হবে বলে নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করেছেন।