গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আলোচিত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়দা খাতুন ঘোষণা করেছেন, তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে আগামী ৫ বছরর জন্য নগরবাসীর হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ, নারী উদোক্তাদের বিনা সুদে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করবেন।
এছাড়াও তিনি যাতায়াতের একাধিক বিকল্প রাস্তা তরী, আউটার রিং রোড নির্মাণ, পর্যাপ্ত সংযাগ ব্রিজ নির্মাণ, গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ফ্লাইওভার, ইউপাশ ও ইউলুপ নির্মাণ, নিরাপদ সড়ক ও নিরাপদ পারাপারের জন্য ফুট ওভার ব্রীজ, জেব্রা ক্রসিং নির্মাণ, নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্থায়ী সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৩ মে) দুপুরে গাজীপুরের ছয়দানার নিজ বাড়িতে নগরবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি লিখিত ৯দফার নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি এ ঘোষণা করেন।
স্বশিক্ষিত জায়দা খাতুন নিজে ইশতেহার পাঠ করতে না পারায় এসময় তার পাশে উপস্থিত তার ছেলে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম পড়ে শুনান।
তিনি তার ইশতেহারে উল্লেখ করেন, হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স ও স্মার্ট সিটি স্থাপন করা হবে। সাধারণ মানুষের বাড়ি ঘরের হোল্ডিং ট্যাক্স আগামী পাঁচ বছরের জন্য মওকুফ করা হবে। শিল্পকারখানার মালিকদের ট্যাক্সের হার এক শতাংশ করা হবে। যেইদিন আবেদন করা হবে সেই দিনই ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের জন্য ই-ট্রেড লাইসেন্স চালু করব।
সিটির বিভিন্ন উন্নয়ন নিয়ে ইশতেহারে উল্লেখ করেন, আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের পরিকল্পনা ও তার প্রণীত মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। নগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডে রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করা হবে।
সিটি কর্পোরেশন এলাকা রাজেন্দ্রপুর থেকে শুরু করে টঙ্গী হয়ে আশুলিয়া, কোনাবাড়ি, কাশিমপুর কাউলতিয়াকে সংযুক্ত করে আউটার রিং রোড নির্মাণ ও দ্রুত সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত সংযোগ ব্রিজ নির্মাণ করে যাতায়াতের একাধিক বিকল্প রাস্তা তৈরী, গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে পর্যাপ্ত ফ্লাইওভার, ইউপাশ, ইউলুপ নির্মাণ, নিরাপদ সড়ক ও নিরাপদ যাতায়াতের জন্য ফুট ওভার, জেব্রা ক্রসিং নির্মাণ ও সরকারের অন্যান্য দপ্তরের সাথে সমন্বয় করে যানজট সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হবে।
এছাড়াও অত্যাধুনিক যাত্রী ছাউনি নির্মাণ, বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা, অত্যাধুনিক চক্রাকার এসি বাস সার্ভিস চালুকরণ করা হবে। সিটি কর্পোরেশন এলাকার বিভিন্ন সড়কের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নামে রাস্তা নামকরণ করা হবে।
সিটি কর্পোরেশনের সেবা সহজ করার জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করা হবে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, চারিত্রিক সনদ, প্রত্যয়ন পত্র ডিজিটালাইজড করা হবে। এছাড়াও সার্বক্ষণিক সাধারণ জনগণের সাথে যোগাযোগ সহজতর করতে “কল টু মেয়র” অ্যাপস চালু করা হবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হবে। ওয়ার্ড ভিত্তিক জমি অধিগ্রহণ করে ডাম্পিং গ্রাউন্ড স্থাপন করা হবে। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে গার্বেজ ডিস্পোজাল পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে।
প্রতি ওয়ার্ডে সোলার এলইডি স্থাপন, প্রতি রাস্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন, রাতের নিরাপত্তার জন্য ওয়ার্ড ভিক্তিক নাইট গার্ড নিয়োগ দেয়া হবে।
মহানগরবাসীর স্বাস্থ্য সেবার জন্য নগরীতে অত্যাধুনিক ৪টি স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, এছাড়াও ৫৭ টি ওয়ার্ডে সিটি করপোরেশন কর্তৃক পরিচালিত মিনি কমিউনিটি ক্লিনিক-হসপিটাল স্থাপন করা হবে।
নগরীতে জোন-ওয়ার্ড ভিত্তিক মডেল মসজিদ তৈরি করে ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ও ইসলামিক পাঠাগার চালু করা হবে। নগরীর সকল মসজিদের ইমাম, খতিবগণকে মাসিক সম্মানি ভাতা প্রদান করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে অধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন কবরস্থান নির্মাণ করা হবে।
বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে এবং তবলিগ জামাতের সকল মুরব্বিদের সাথে পরামর্শক্রমে বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের অবকাঠামতগত উন্নয়নে মাষ্টারপ্ল্যান করা হবে। অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের ধর্মীয় উপাসানালয় সংস্কার ও প্রতিস্থাপনে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করে কাজ করার কথা বলেন।
সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ সৃষ্টি, বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিশেষ ভাতা দেয়া হবে। নারীদের স্বাবলম্ভী করতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি ও সিটি কর্পোরেশন থেকে বিনাসুদে ঋণ দেয়া হবে।
প্রতিটি ওয়ার্ডে আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার, খেলার মাঠ, ইনডোর প্লে গ্রাউন্ড স্থাপন, আধুনিক কনভেনশন সেন্টার, অডিটোরিয়াম, আধুনিক পার্কিংসহ সিটি কর্পোরেশন অত্যাধুনিক বহুতল মার্কেট নির্মাণ করা হবে।
সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কর্মরত শ্রমিকদের ডিজিটাল ডাটাবেইজ করা হবে। শ্রমিকদের সুচিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন, নামমাত্র মুল্যে চিকিৎসা প্রদান ও শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা হবে।
অসহায় ও কর্মহীন শ্রমিকদের বিশেষ প্রনোদনা সহায়তা, কর্মজীবি মায়েদের সন্তানদের দেখাশুনা, কর্মজীবি নারীদের স্বল্প খরচে থাকার সুবিধা ডে-কেয়ার ও হোস্টেলের ব্যবস্থা করা হবে।
মাদক ও সন্ত্রাসের নির্মূলে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ, সড়ক মহাসড়কে চাঁদাবাজী বন্ধ, মাদকাসক্ত পূনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন, ওয়ার্ড ভিক্তিক সন্ত্রাসবিরোধী নাগরিক কমিটি গঠন করা হবে।
নগরীর বস্তিবাসীদের জন্য বহুতল ভবন, পূনর্বাসন , বয়স্ক ও অসহায় পূনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত সবার জবাবদিহিতার মাধ্যমে দুর্নীতি বন্ধ, ক্লিন সিটি ও গ্রিন সিটি বাস্তবায়নে বৃক্ষরোপন, বেকারদের জন্য পার্টটাইম কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন।
ইশতেহার ঘোষণার সময় বিপুল সংখ্যক নাগরিক ও গণমাধ্যম কর্মী উপস্থিত ছিলেন।