গণবাণী ডট কম:
রাত পোহালে আগামীকাল বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভোট গ্রহণ করা হবে। সকাল ৮টা থেকে বিরতীহীনভাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে নেয়া হয়েছে, নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা। বুধবার সকালে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ব্রিফিং শেষে দুপুরে পুলিশ প্রহড়ায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তাগণ প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে রওয়ানা হয়েছেন।
নির্বাচনে নিরাপত্তা রক্ষায় দেশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে প্রায় ১৩ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন, আনসার- ভিডিপি সদস্যরাও রয়েছেন। তাঁদের উদ্দেশ্যে ব্রিফিং (দিকনির্দেশনা মুলক বক্তব্য) করা হয়। বুধবার সকাল ১১টায় মহানগরীর শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল সদস্যদের উদ্দেশ্যে ব্রিফিং করেন মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম।
এ সময় সেখানে আরো উপস্থিত ছিলেন, নির্বচানের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, বিজিবির কাম্প কমান্ডার মেজর ইকবাল, আনসার জেলা কমান্ডার আশরাফ হোসেন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা।
ব্রিফিংকালে পুলিশ কমিশনার বলেন, এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথাযথ ভূমিকার উপর সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান বহুলাংশে নির্ভর করে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহ সততা, নিরপেক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করলে অবশ্যই সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন সকলেই তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন। তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, দায়িত্ব পালনে কেউ ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নির্বাচনের রিটার্ণিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ, র্যা ব, বিজিবি ও আনসার সদস্যের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি, তারা যেন সর্বোচ্চ সততা, নিষ্ঠা এবং পেশাগত মনোভাব নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভোটারদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসুন। তিনি আশা করেন, আগামীকাল সকল ভোটারগণ নিশ্চিন্তে নির্ভয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসবেন এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছেন।
নির্বাচনে শান্তি- শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি নিয়োগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ লক্ষ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশ এবং আনসার ও ভিডিপি সদস্য নিম্নরূপে মোতায়েন হবে।
রিটার্ণিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জানান, নির্বাচনে ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রে ৩ হাজার ৪৯৭টি ভোট কক্ষ থাকবে। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৭ এবং নারী ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৮, আর তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১৮ জন।
এছাড়াও নির্বাচনে ৪৮০ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৩ হাজার ৪৯৭ সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ৬ হাজার ৯৯৪ পোলিং অফিসারসহ ১০ হাজার ৯৭১ জন ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, এবারের নির্বাচনে ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে কাশিমপুর থানায় ৪৭ টি, কোনাবাড়ি থানায় ৪৩টি, বাসন থানায় ৪২টি, সদর থানায় ৯৬টি, গাছা থানায় ৫৭টি, পূবাইল থানায় ৩২টি, , টঙ্গী পূর্ব থানায় ১১১টি ও টঙ্গী পশ্চিম থানায় ৫২টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এসব ভোটকেন্দ্রে ৩৫১টি গুরুত্বপূর্ণ এবং ১২৯টি কেন্দ্রকে সাধারণ কেন্দ্র হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৮০টি। এর মধ্যে ৩৫১টিই ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ)। গাজীপুর মহানগর পুলিশের সূত্র মতে, নানা বিবেচনায় তাঁরা কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ‘ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। মুলত গুরুত্বপূর্ণ বলতে এখানে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে মনে করা হচ্ছে।
ঝুঁকিপূর্ণ এসব কেন্দ্রের তালিকা তৈরি করে সেখানে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সিটি নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিটি সাধারণ ও ঝূকিপূর্ণ কেন্দ্রের ভিতরে ও বাইরে থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এজন্য তাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, প্রতিটি সাধারণ ভোট কেন্দ্রে একজন এসআই বা এসআইয়ের নেতৃত্বে ৩ কনস্টেবল থাকবে। এছাড়া অস্ত্রসহ অঙ্গীভূত ২ জন আনসার সদস্য, লাঠি হাতে (মহিলা ৪ জন ও পুরুষ ৬ জন) ১০ জন আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে।
প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে একজন এসআই বা এসআইয়ের নেতৃত্বে ৪ কনস্টেবল থাকবে। এছাড়া অস্ত্রসহ অঙ্গীভূত ২ জন আনসার সদস্য, লাঠি হাতে (মহিলা ৪ জন ও পুরুষ ৬ জন) ১০ জন আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য ১৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত আছেন।
গাজীপুর মহানগরীর ৫৭ টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে একটি করে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সমন্বয়ে পুলিশের ৫৭ টি মোবাইল ফোর্স থাকবে। এছাড়া গাজীপুর মহানগরীর ৮টি থানা এলাকায় ৮টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে। প্রতি ৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে পুলিশের মোট ১৯টি স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে।
এছাড়াও প্রতি ২টি সাধারণ ওয়ার্ডে র্যা বের একটি করে মোট ৩০টি টীম নিরাপত্তার রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে। নগরীর প্রতি ৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে বিজিবি সদস্য মোতায়েন থাকবে।
প্রত্যেকটি কেন্দ্রের প্রতিটি ভোট কক্ষে পৃথক সিসি ক্যামেরা থাকবে। যা নির্বাচনে রিটানিক কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের কমিশনারগণ সরাসরি প্রত্যক্ষ করবেন।
এছাড়া ৪৮০টি ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম সহজে পৌছানোর জন্য পুরো নগরীকে ৫টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্য কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ থেকে মালামাল যাবে ৬৮ কেন্দ্রে, চান্দনা স্কুল অ্যা ন্ড কলেজ থেকে মালামাল যাবে ১১৫, ধীরাশ্রম জি কে স্কুল থেকে ১২০ কেন্দ্রে মালামাল যাবে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১১৯টি কেন্দ্রে মালামাল যাবে এবং দারুস সালাম মাদ্রাসা থেকে মালামাল যাবে ৫৮ কেন্দ্রে।