গণবাণী ডট কম:
প্রথম বারের মতো ইভিএম এর মাধ্যমে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হয়েছে আয়তনের সবচেয়ে বড় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভো্ট গ্রহণ। এখন চলছে ভোটের হিসাব।
এরই মধ্যে ৫০টি কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এড. আজমত উল্লা খান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২০,৭৭৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়দা খাতুন টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ২০,৯২৬ ভোট।
এটি ছিল শিল্প অধ্যুষিত সিটির তৃতীয় ভোট।
দিনভর বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র ঘরে ভোটারদের স্বতস্ফুর্ত উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচনে পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটারের উপস্থিতি বেশী লক্ষ করা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতি হয়ে থাকতে পারে।
ভোট গ্রহণ শেষে নির্বাচনের রিটার্ণিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম, সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, সিটি নির্বাচনে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এজন্য তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান।
এর আগে দুপুরে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত যেসব কেন্দ্রগুলো ঘোরা হয়েছে বেশ শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হচ্ছে। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিচ্ছেন এবং কর্মকর্তারাও সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ করছেন। আমরা আশান্বিত ভোট শেষ হলে মানুষ তা ভালোভাবে গ্রহণ করবেন।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করে মহানগরীর কাজী আজিম উদ্দিন ডিগ্রী কিলেজ কেন্দ্রে এসে বলেন, এখনো পর্যন্ত ৫০ টি সেন্টার পরিদর্শন করা হয়েছে। কোন কেন্দ্রে কোন ভোটার ভোট না দিয়ে ফেরত গেছে এরকম কোন ঘটনা নাই। সকালে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও এখন অনেক বেড়েছে। ভোটাররা উৎসবের মতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে এসে সুশৃঙ্খলভাবে ভোট দিচ্ছে। কোথাও আইনশৃংখলা অবনতির কোন অভিযোগ কোন প্রার্থী দেয়নি।
এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান বলেন, নির্বাচনে কোথাও কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনার কোন অভিযোগ কেউ করেননি। সবখানে অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে ভোট গ্রহণ হচ্চে। মানুষজন স্বতস্ফুর্তভাবে ভোট দিচ্ছেন। আমার ভোট গ্রহণের শেষ সময় শুধু নয় ফল ঘোষণা অবধী শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বঝায় রাখব।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা এইচ এম কামরুল ইসলাম জানান, ১১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৩ জন ভোটারের জন্য ৪৮০টি কেন্দ্রে তিন হাজার ৪৯৭টি কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ব্যবহার করার জন্য পাঁচ হাজার ২৪৬টি ইভিএম মেশিন দেওয়া হয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে একজন করে ৪৮০জন ট্রাবল শূটার, প্রতি দুই কেন্দ্রে একজন করে মোট ২৪০ জন (ভ্রাম্যমান) টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, ১৪ জন সহকারি প্রোগামার এবং ৪ জন প্রোগ্রামা দায়িত্ব পালন করছেন। কোন ইভিএম মেশিনে সমস্যা দেখা দিলে তা দ্রæত সমাধান করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে একটি এবং কক্ষে একটি করে সিসি ক্যামেরাও স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স পুলিশের ১৯টি ও মোবাইল টিম হিসেবে ৫৭টি টিম কাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য ১৭ ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন সদস্য রয়েছেন।
নারী কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিদর্শক (এস আই) সতেজ বড়ুয়া জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশৃঙ্খলা এড়াতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন চলাকালে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি, র্যা ব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা আরো জানান, নগরীর ৪৮০টি ভোট কেন্দ্রের প্রত্যেকটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ৩৫১ টি কেন্দ্রে আমরা আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। তবে প্রতিদ্বন্দিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান এবং সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের মধ্যে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ভালো। নির্বাচনি মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। তাদের পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও দায়িত্ব পালন করছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫৭ টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২৪৬ জন এবং সংরক্ষিত আসনের ১৯টি ওয়ার্ডে ৭৮ জন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। নির্বাচনে ৪৮০টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে এবং ৩৪৯৭ টি ভোট কক্ষ রয়েছে। মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২, নারী ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১৮ জন। নির্বাচনে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ১০ হাজার ৯৭০ জন। প্রিজাইডিং অফিসার ৪৮০, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ৩৪৯৭ এবং পোলিং অফিসার ৬৯৯৪ জন দায়িত্ব পালন করছেন।
উল্লেখ্য, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন ২০১৩ সালের ৬ জুলাই এবং ২০১৮ সালের ২৬ জুন দ্বিতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ।