গণবাণী ডট কম:
পোশাক কর্মী দ্বিতীয় স্ত্রী মোবাইলে কারো সাথে কথা বলেন এ নিয়ে ঝগড়া হয় দুজনের। এক পর্যায়ে স্ত্রী রিকশাওয়ালা স্বামীকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেন। এর প্রতিশোধ নিতে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় স্ত্রীকে। ঘটনার প্রায় ছয় মাসের মাথায় ২৫ মে বিকালে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুর।
নিহতের নাম বুলবুলি বেগম (৩৪)। তিনি নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর থানার বামন সাতা গ্রামের আয় বাবুর মেয়ে। গ্রেফতার আসামীর নাম মোঃ মাসুদ রানা (৩৮)। তিনি নওগাঁ জেলার রানীনগর থানার উত্তর রাজাপুর গ্রামের মোঃ ফিরোজ সাকিদারের ছেলে।
শনিবার বিকেলে এসে তথ্য জানিয়েছেন গাজীপুর পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকসুদের রহমান।
তিনি আরো জানান, পিবিআই গাজীপুরের একটি টিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযান পরিচালনা করে মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামি মাসুদ রানাকে ২৫ মে বিকালে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন আরিচপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর ধৃত আসামি ২৬ মে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে। পরে তাকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়।
ঘটনার বিষয়ে তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত আসামী স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে, আসামি মাসুদ রানা একজন রিক্সা চালক। সে প্রথমে মোছাঃ সাবানা নামে একজনকে বিবাহ করে শ্বশুর বাড়ীতে বসবাস করতো। ভিকটিম বুলবুলি বেগম আসামির সমন্ধীর (স্ত্রীর বড় ভাই) স্ত্রী ছিলো। শ্বশুর বাড়ীতে বসবাসের সুবাদে ভিকটিম বুলবুলির সাথে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। প্রায় ৭ বছর আগে ভিকটিম বুলবুলি বেগমকে ভাগিয়ে নিয়ে মহাদেবপুর থানার উত্তর গ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফয়সাল এর মাধ্যমে বিবাহ করে। সমন্ধীর স্ত্রী বুলবুলিকে বিবাহ করায় তার প্রথম স্ত্রী মোছাঃ সাবানা তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়।
তিনি আরো জানান, আসামি মাসুদ রানা বিবাহের পর স্ত্রী বুলবুলিকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানাধীন দেওয়ালিয়াবাড়ী কলেজ গেইট এলাকায় মিজানের বাড়ীতে ভাড়া থাকতো। তার স্ত্রী বুলবুলি বেগম স্থানীয় চায়না গার্মেন্টর্সে হেলপার হিসাবে কাজ করতো। তার স্ত্রী প্রায় সময় বাইরের ছেলের সাথে মোবাইলে কথা বলতো। এই নিয়ে পরকীয়া সন্দেহে তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হতো। ঘটনার আগের দিন ১ সেপ্টেম্বর/২২ রাতে আসামি কাজ কর্ম শেষে বাসায় আসলে মোবাইলে কথা বলাকে কেন্দ্র করে স্ত্রীর সাথে সাথে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার সময় ভিকটিম বুলবুলি তাকে মারপিট করে বাসা থেকে বের করে দেয়। আসামি মনের কষ্টে তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে স্ত্রী বুলবুলি বেগমকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে ঘরের দরজায় তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। পালিয়ে গিয়ে রাতেই বুলবুলিকে হত্যার বিষয়টি ভিকটিমের বোন আছিয়া আক্তার টপিকে মোবাইলে ফোন করে জানায়।
পরে ২ সেপ্টেম্বর/২২ সকাল অনুমান ৮টার দিকে নিহতের ছোট ভাই হাসান ভিকটিমের বাড়ীতে গিয়ে বাহির হতে রুমের দরজা তালাবদ্ধ দেখে। স্থানীয় লোকজন কোনাবাড়ী থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে থানা পুলিশ রুমের দরজা ভেঙ্গে ভিকটিমের মৃতদেহ রুমের মেঝেতে ওড়না দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় উদ্ধার করে। পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন।
তিনি আরো জানান, এ সংক্রান্তে বুলবুলি বেগমের ছোট ভাই বাদী হয়ে কোনাবাড়ি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করতে না পারলে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান, বিপিএম বলেন, এটি একটি হত্যা মামলা। থানা পুলিশ কর্তৃক তদন্তধীন অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকা মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করলে ঘটনার সহিত সকল তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। মূলত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পরকীয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া বিবাদকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকান্ডটি সংগঠিত হয়।