গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে পরাজয়ের ১০ দিনের মাথায় পরিকল্পিত নগরায়ণ ও আধুনিক গাজীপুর গড়ে তুলতে গাজীপুর উন্নয়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হলো আজমত উল্লা খানকে। রোববার বিকালে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব মোহা: রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২০-এর ধারা ৭(১) ও ৭(২) অনুযায়ী এড: মো: আজমত উল্লা খান- কে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সাথে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী ০৩ (তিন) বছর মেয়াদে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ প্রদান করা হলো।
এতে আরো বলা হয়েছে, এই নিয়োগের অন্যান্য শর্ত অনুমোদিত চুক্তিপত্র দ্বারা নির্ধারিত হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীন ও অভিজ্ঞ রাজনীতিক আজমত উল্লা খানকে। কিন্তু নির্বাচনে দলীয় বিভাজন ও বিশ্বাসঘাতকদের কারণে নির্বাচনে হেরে যান আজমত। একারণে ১০ বছর ধরে পরিকল্পিত উন্নয়ন বঞ্চিত গাজীপুরবাসী আর যাতে বঞ্চিত না হয়, নগরবাসীকে কাংখিতমানের সেবা নিশ্চিত করতে আজমত উল্লা খানতে সরকারিভাবে দায়িত্ব দেয়া হলো।
এর আগে গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, দুই-চারদিনের মধ্যে আজমত উল্লা খান সরকারি দায়িত্ব পাচ্ছেন। সিটি করপোরেশন গঠনের পর থেকে বঞ্চিত নগরবাসীর উন্নয়নের জন্য সরকারি দায়িত্ব দেওয়া হবে আজমত উল্লা খানকে।
মন্ত্রী আরো বলেন, গাজীপুরবাসীর কল্যাণে অনেক কিছু করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এজন্য একজন যোগ্য ও সৎ লোকের প্রয়োজন। গাজীপুরবাসীর স্বপ্ন ছিল আজমত উল্লা খানের মতো যোগ্য ব্যক্তি যদি এ সিটি গড়ার সুযোগ পান। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতার কাছে নৌকা হেরেছে। আওয়ামী লীগ যেহেতু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে। সে সুবাদে সরকারের হাতেও কিছু ক্ষমতা থাকে, সরকারের নিজস্ব ক্ষমতা থাকে। গাজীপুরে বসবাসকারী ৪৫ লাখের বেশী মানুষ যাতে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত না হন, সে জন্য সরকার আন্তরিক।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হিাসিনা রাজধানীর অতি নিটকবর্তী, ক্রম বিকাশমান শিল্প কারখানা সমৃদ্ধ গাজীপুরকে একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত নগরী হিসাবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। এ কারণে তিনি গাজীপুর ও টঙ্গী পৌরসভা এবং আশপাশের পূবাইল, বাসন, গাছা, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, কাউলতিয়া ইউনিয়নকে একসাথে নিয়ে ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারী গঠন করেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন। তিনি বলেন, সে লক্ষে তিনি তার বিশ্বস্ত যোগ্য প্রার্থী হিসাবে প্রথম সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে গাজীপুরের গণমানুষের নেতা আজমত উল্লা খানকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিলেন। কিন্তু সে নির্বাচনে দলের মুখচেনা নেতার বিশ্বাসঘাতকতা ও দলীয় বিভাজনের কারণে তিনি জিততে পারেননি। তারপর থেকে গাজীপুর নগরবাসী পরিকল্পিত উন্নয়ন ও কাংখিত সেবা বঞ্চিত হয়ে আসছিল। একারণে সর্বশেষ নির্বাচনে পুনরায় আজমত উল্লা খানকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু এবারেও একই ব্যক্তির বিশ্বাসঘাতকতা ও অবৈধ টাকার প্রভাবে তিনি সফল হতে পারেননি। একারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরকে একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত নগর হিসাবে গড়ে তুলতে আজমত উল্লা খানকে গাজীপুর উন্নয়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ক্রমবিকাশমান গাজীপুর নগরীকে একটি আধুনিক, সুপরিকল্পিত, শিল্প ও আকর্ষণীয় পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন পাশ হয়। ২০২২ সালের নভেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন নতুন এ সংস্থাটি গঠিত হয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আদলে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধিভূক্ত এলাকা হচ্ছে রাজধানীর ঘেষে তুগার নদের উত্তর পাশে ৩২৯.৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকা। নাগরিকদের উত্তম সেবাদানের লক্ষে অধিক্ষেত্রকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৮টি জোনের মধ্যে প্রতি ২টি জোন নিয়ে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একটি জোন করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, জোন এক (টঙ্গী-পূবাইল), জোন দুই (গাছা-জয়দেবপুর), জোন তিন (কাউলতিয়া -বাসন) এবং জোন চার ( কোনাবাড়ী-কাশিমপুর)।
এ বিষয়ে আজমত উল্লা খান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে ২৮ মার্চ সাক্ষাত করার সময় তিনি আমাকে সান্তনা দিয়েছেন। আমার কারণে নির্বাচনে পরাজয় হয়েছে, এমনটি তিনি মনে করেন না। তিনি আমাকে বিশ্বাসঘাতকদের চিহ্নিত করে সৎ ও ত্যাগী নেতাদের নিয়ে দল পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আমাকে যখন যে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি তা সৎভাবে পালন করেছি। তিনি আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি তা পবিত্র আমানত মনে করে সঠিকভাবে পালন করব।
এডভোকেট আজমত উল্লা খান :
১৯৫৫ সালের ১ জানুয়ারী গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গী ভরানে একটি সম্ভ্রান্ত খান পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ইউসুফ খান ও মাতা ফাতেমা খানম। তিনি ৬৯ সালে টঙ্গী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। তিনি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৯ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯৬-২০০৩ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৫ সাল থেকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৯৫ সালে টঙ্গী পৌর সভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তিন মেয়াদে ১৮ বছর টানা চেয়ারম্যান ও মেয়র ছিলেন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন গঠনের পর ২০১৩ সালে ৭ জুলাই অনুষ্ঠিত সিটির প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। ঐ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অনৈক্যের কারণে আজমত উল্লাহ খান বিএনপি প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নানের নিকট ১ লাখ ৬ হাজার ৫৭৭ ভোটে পরাজিত হন। নির্বাচনে মান্নান পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৪৪৪ ভোট, অপরদিকে আজমত উল্লা খান পেয়েছিলেন ২ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬৭ ভোট।
সর্বশেষ গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান ১৬ হাজার ১৮৭ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের কাছে। জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। আজমত উল্লা পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৪৭ ভোট।