গণবাণী ডট কম:
‘বিদ্যুৎ ও পানির অপচয় রোধ’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে গাজীপুরে ৪৪তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের উদ্বোধনী করা হয়েছে। রোববার সকালে গাজীপুর কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ চত্বরে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি হাসিনা আক্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে কি নোট উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির প্রভাষক সুমন সাহা।
এবারের ৪৪তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের এ অনুষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ১৫টি স্টলে অংশ নিয়েছে। এখানে বিজ্ঞান বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা এবং জাতীয় বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড চুড়ান্ত বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো মানুষের জ্ঞান। ২০০০ সালে পৃথিবীর বড় বড় চিকিৎসক, সমস্ত গবেষক, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীসহ বড় বড় মানুষ একত্রে বসে ঠিক করলেন যে পৃথিবীর সম্পদ বলতে আমরা কি বুঝাই। আগে মানুষের ধারণা ছিল কোন দেশে হিরা-সোনা থাকলে তাকে সম্পদশালী দেশ বলা হতো, যদি তেল থাকে, গ্যাস থাকে সেটা হলো সম্পদশালী দেশ, কোন দেশ যদি কারখানা করে অস্ত্র তৈরি করে তবে তা হলো সম্পদশালী দেশ। কিন্তু ২০০০ সালে পৃথিবীর সব জ্ঞানী-গুণীরা বসে একটা বিষয় ঠিক করলেন, যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো মানুষের জ্ঞান।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, যে কোন বিষয়ে তোমাদের জ্ঞান বাড়লেই দেশে সম্পদ বাড়বে। উদআরণ টেনে তিনি বলেন, তুমি রাতে বসে যদি ফিজিক্স’র একটা প্রবলেম সল্ভ করো তাহলে কি হলো, তোমার জ্ঞান একটু বাড়লো, তারমানে দেশের সম্পদ একটু বাড়লো। তুমি বসে বসে যদি একটা বাংলাকে ইংরেজিতে ট্রান্সলেট করলে তোমার জ্ঞান বাড়লো, তুমি দেশকে সম্পদশালী করলে, তুমি একটা অংক করলে দেশকে সম্পদশালী করলে। দেশকে সম্পদশালী করা খুবই সোজা। তুমি যদি দেশকে ভালবাসো এবং দেশকে শক্তিশালী করতে চাও তা খবুই সোজা। সবাই তা করতে পারবে, যদি তুমি তোমার জ্ঞানটাকে একটু বাড়াও, একটু মন দিয়ে লেখা পড়া করো। জিপিএ ফাইভ পেলেই জ্ঞান বাড়ে। তা নয়। জিপিএ ফাইভ পেলে এক সময় আমি খুশি হতাম, এখন হই না। কারণ জিপিএ ফাইভ অর্জন করতে শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট করতে হয় বটে কিন্তু জীবনের লেখা পড়া শেখার পাশাপাশি অনেক কিছু জানার, শেখার কথা ছিল তা হয়নি। এটা নিয়ে আমার চিন্তা হয়। আমি এখন খুবই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি লেখাপড়ার মধ্য দিয়ে আমাদের সন্তানদের জীবন আনন্দময় করতে পারি কি-না। পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া ভালো লেখাপড়া নয়। তারচেয়ে বেশি জরুরী হলো শেখার ক্ষমতা অর্জন করা। তুমি যা শিখেছো, পরীক্ষার পরে যদি তা ভুলে যাও তাহলে শিক্ষার লাভ কি হলো ? কিন্তু বাস্তবেতো তাই করা হয়, পরীক্ষায় যাতে ভালো করে লিখতে পারে তারজন্য বাচ্চাটার মাথার মধ্যে জোর করে ঢুকানো হয়। পরীক্ষা যেদিন শেষ সেই বিদ্যাটাও বিদায় নেয়। এটাতো শিক্ষা হলো না। কাজেই শিক্ষাটার চেয়ে বড় ক্ষমতা হচ্ছে শেখার ক্ষমতা।