গণবাণী ডট কম:
পরিকল্পিত নগরায়ণ ও আধুনিক গাজীপুর গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে গাজীপুর উন্নয়ণ কর্তৃপক্ষ (গাউক) এর চেয়ারম্যান হিসাবে যোগ দিয়েছেন আজমত উল্লা খান। তিনি সোমবার মন্ত্রাণালয়ে যোগদান করেছেন। আজ মঙ্গলবার বিকালে তিনি গাজীপুর উন্নয়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব বুঝে নিবেন।
আজমত উল্লা খান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। দলীয় পদে থেকেই তিনি গাউক এর চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে পরাজয়ের ১০ দিনের মাথায় গত রোববার বিকালে আজমত উল্লা খানকে গাজীপুর উন্নয়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব মোহা: রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২০-এর ধারা ৭(১) ও ৭(২) অনুযায়ী এড: মো: আজমত উল্লা খান- কে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সাথে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী ০৩ (তিন) বছর মেয়াদে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ প্রদান করা হলো।
এতে আরো বলা হয়েছে, এই নিয়োগের অন্যান্য শর্ত অনুমোদিত চুক্তিপত্র দ্বারা নির্ধারিত হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীন ও অভিজ্ঞ রাজনীতিক আজমত উল্লা খানকে। কিন্তু নির্বাচনে দলীয় বিভাজন ও বিশ্বাসঘাতকদের কারণে নির্বাচনে হেরে যান আজমত। একারণে ১০ বছর ধরে পরিকল্পিত উন্নয়ন বঞ্চিত গাজীপুরবাসী আর যাতে বঞ্চিত না হয়, নগরবাসীকে কাংখিতমানের সেবা নিশ্চিত করতে আজমত উল্লা খানতে সরকারিভাবে দায়িত্ব দেয়া হলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ক্রমবিকাশমান গাজীপুর নগরীকে একটি আধুনিক, সুপরিকল্পিত, শিল্প ও আকর্ষণীয় পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন পাশ হয়। ২০২২ সালের নভেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন নতুন এ সংস্থাটি গঠিত হয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আদলে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধিভূক্ত এলাকা হচ্ছে রাজধানীর ঘেষে তুগার নদের উত্তর পাশে ৩২৯.৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকা। নাগরিকদের উত্তম সেবাদানের লক্ষে অধিক্ষেত্রকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৮টি জোনের মধ্যে প্রতি ২টি জোন নিয়ে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একটি জোন করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, জোন এক (টঙ্গী-পূবাইল), জোন দুই (গাছা-জয়দেবপুর), জোন তিন (কাউলতিয়া -বাসন) এবং জোন চার ( কোনাবাড়ী-কাশিমপুর)।
এ বিষয়ে আজমত উল্লা খান বলেন, আমি সোমবার মন্ত্রণালয়ে গাজীপুর উন্নয়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসাবে যোগদান করেছি। আমার সাথে সরকারের চুক্তি সম্পাদন হয়ে গেছে।
আজমত উল্লা খানকে গাউকের চেয়ারম্যান নিয়োগ করার পর বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন দেখা দেয়, তিনি দলীয় পদে থাকতে পারবেন কি না। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলীয় পদে থেকেই আমি গাজীপুর উন্নয়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করব।
তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে ২৮ মার্চ সাক্ষাত করার সময় তিনি আমাকে সান্তনা দিয়েছেন। আমার কারণে নির্বাচনে পরাজয় হয়েছে, এমনটি তিনি মনে করেন না। তিনি আমাকে বিশ্বাসঘাতকদের চিহ্নিত করে সৎ ও ত্যাগী নেতাদের নিয়ে দল পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আমাকে যখন যে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি তা সৎভাবে পালন করেছি। তিনি আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি তা পবিত্র আমানত মনে করে সঠিকভাবে পালন করব।
এডভোকেট আজমত উল্লা খান :
১৯৫৫ সালের ১ জানুয়ারী গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গী ভরানে একটি সম্ভ্রান্ত খান পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ইউসুফ খান ও মাতা ফাতেমা খানম। তিনি ৬৯ সালে টঙ্গী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। তিনি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৯ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯৬-২০০৩ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৫ সাল থেকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৯৫ সালে টঙ্গী পৌর সভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তিন মেয়াদে ১৮ বছর টানা চেয়ারম্যান ও মেয়র ছিলেন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন গঠনের পর ২০১৩ সালের সিটির প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা দলীয় কোন্দলের কারণে হেরে গিয়েছিলেন আজমত উল্লা খান।
সর্বশেষ গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান ১৬ হাজার ১৮৭ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের কাছে। জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। আজমত উল্লা পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৪৭ ভোট।