গণবাণী ডট কম:
বড়বোনকে বিয়ে করে ঘর জামাই ছিলেন নবী হোসেন। শ্বশুড় বাড়ীতে থাকার সময় ছোট শ্যালিকার সাথে ঘরে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। পরিবারের সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে শ্যালিকাকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করে গোপনে সংসার করতে থাকেন। বিষয়টি জানাজানি হলে ছোট স্ত্রীকে ২০২১ সালের ১৭ জুলাই স্বাসরোধে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেন। এ ঘটনার দুই বছরের অধীক সময় পর নবী হোসেনের সহযোগীকে গ্রেফতার করে পিবিআই। গ্রেফতারের পর সহযোগীকে গত ২৭ জুলাই বিকালে আদালতে হাজির করা হলে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধি দিয়ে হত্যার রহস্য প্রকাশ করে।
নিহতের নাম আছমা আক্তার ওরফে তাহমিনা (২০)। তিনি সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা থানার খালপাড়া এলাকার মোঃ রজব আলীর মেয়ে।
গ্রেফতার আসামীর নাম খোকন (৪৫)। তিনি নেত্রকোনা জেলার বারহাট্রা থানার হারুলিয়া নোয়াপাড়া এলাকার মৃত আলতু মিয়ার ছেলে। তিনি গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ী সাকিনস্থ শাফির বাড়ীতে ভাড়া থাকতেন। তাকে গত ২৬ জুলাই ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে আনার পর ২৭ তারিখ আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে সে নিজেকে জড়িয়ে হত্যার কারণ ও মুলহোতার পরিচয় প্রকাশসহ স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেয়।
শুক্রবার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বিপিএম।
তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত আসামি খোকনে শ্বশুর সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা থানার সুনই কুষ্টিবাড়ী এলাকার মৃত আব্দুল্লাহ। তার শ্যালকের নাম নবী হোসেন (৩০)। খোকন ঘটকালি করে নবী হোসেনের সাথে নিহত আছমা আক্তারের বড় বোন শরীফা আক্তার (২৭) এর বিয়ে দেন। বিয়ের পর নবী হোসেন শ্বশুর বাড়ীতে ঘরজামাই হিসেবে বসবাস করতে থাকেন। এসময়ের মধ্যে শালিকা আছমা আক্তারের সাথে নবী হোসেনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তারা গ্রেফতার আসামী খোকনের সহায়তায় গোপনে পালিয়ে বিয়ে করে গাজীপুর মহানগরীল বাসন থানাধীন মোগরখাল সাকিনস্থ এলাকায় বসবাস করতে থাকেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে নবী হোসেনের প্রথম স্ত্রী শরীফা বিষয়টি গ্রেফতারকৃত আসামি খোকনকে জানায়। খোকন নবী হোসেনের প্রথম স্ত্রী শরিফা আক্তারকেও বাসন থানাধীন মালেকের বাড়ী এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। কাছাকাছি প্রথম স্ত্রী থাকার বিষয়টি খোকনের মাধ্যমে জানার পর নবী হোসেন শরীফা আক্তারের বাসায়ও আসা যাওয়া করতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিষয়টি নবী হোসেনের উভয় স্ত্রী জেনে যায়। দুই সহোদর বোন সতীন হওয়ার পর তারা উভয়েই নবী হোসেনকে যে কোনো একজনের সাথে সংসার করার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে তাঁদের সংসারে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়।
তিনি আরো জানান, ঘটনার দিন (২০২১ সালের ১৭ জুলাই) নবী হোসেন দ্বিতীয় স্ত্রী (ভিকটিম) আছমা আক্তারের বাসায় গেলে গ্রেফতার আসামি খোকনের উপস্থিতিতে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি ও শারীরিক নির্যাতন শুরু হলে আছমা নবী হোসেনের গোপন অঙ্গে আঘাত করে। পরে আসামি খোকন ভিকটিম তাহমিনার হাত চেপে ধরে এবং নবী হোসেন আছমার গলা টিপে ধরে। এতে আছমার শরীর নিস্তেজ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। আছমা মারা গেছে বুঝতে পেরে খোকন দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তারপর নবী হোসেন নিজে আছমার মরদেহ ঘরের টিনের চালের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, পরের দিন সকালে প্রতিবেশী অন্যান্য ভাড়াটেগণ আছমার ঘরে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে টিনের চালের আড়ার সাথে গলায় ওড়না দিয়ে আছমার মৃতদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। পরে তারা থানার খবর দিলে বাসন থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ ঝুলন্ত অবস্থা থেকে মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ও ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় আছমা আক্তার বড় বোন/সতীন শরিফা আক্তার বাসন থানায় আছমা আত্মহত্যা করেছেন মর্মে অপমৃত্যু মামলা করেন। কিন্তু পরে ময়না তদন্ত রিপোর্টে আছমা আক্তারকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করা হয়। পরে বাসন থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) নাহিদ আল রেজা বাদী হয়ে ২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রুজু করেন। বাসন থানা পুলিশ মামলাটি তদন্তকালে নবী হোসেনকে গ্রেফতার করেও কোন রহস্য উদঘাটন করতে না পেরে তদন্ত শেষে চুড়ান্ত আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। এ মামলায় নবী হোসেন জামিন লাভ করেন। পরে বিজ্ঞ আদালত স্ব-প্রনোদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই গাজীপুর জেলাকে নির্দেশ প্রদান করেন।
পুলিশের ঐ কর্মকর্তা আরো বলেন, তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর আমরা তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় আসামী খোকনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে এনে জিগ্যাসাবাদ করি। পরে তাকে আদালতে হাজির করা হলে খোকন স্বেচ্ছায় গাজীপুর মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট ইকবাল হোসেনের আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধি দেয়।