গণবাণী ডট কম:
ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার প্রস্তাবে আজ শুক্রবার সংস্থাটির সাধারণ পরিষদে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ভোটে শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটি বিপুল ভোটে পাস হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদের জন্য ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিল সাধারণ পরিষদ।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলী নির্বিচার হামলায় যখন হাজার হাজার সাধারণ ও নিরস্ত্র মানুষ নিহত হচ্ছেন, যখন সেখানে সাত মাস ব্যাপী যুদ্ধে অস্ত্র বিরতির কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, তখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে তাদের সমর্থন প্রকাশ করা হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য করার প্রস্তাব পাস হওয়ার পর এবার এটি বাস্তবায়নের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাধারণ পরিষদ। কারণ কোনো দেশকে জাতিসংঘের সদস্যপদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র সংস্থাটির নিরাপত্তা পরিষদ নিতে পারে।
সাধারণ পরিষদের ভোটের ফলাফলে দেখা গেছে, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ সহ ১৪৩টি দেশ। আর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে মাত্র ৯টি দেশ। ভোটদানে বিরত ছিল ২৫টি দেশ।
ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ভোট দেওয়া রাষ্ট্রগুলো হলো, আর্জেন্টিনা, চেচনিয়া, হাঙ্গেরি, ইসরায়েল, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, পলাউ, পাপুয়া নিউগিনি এবং যুক্তরাষ্ট্র।
ভোটদানে বিরত থাকা দেশগুলোর বেশির ভাগই ইউরোপের। এর মধ্যে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া, ফিজি, ফিনল্যান্ড, জর্জিয়া, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, রোমানিয়া এবং ইউক্রেন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ভোটদানে বিরত ছিল উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডাও।
১৫ সদস্য বিশিষ্টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ চূড়ান্ত অনুমোদন করে। এই প্রক্রিয়া বন্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ১৮ এপ্রিল নিরাপত্তা পরিষদে তার ভেটো প্রয়োগ করেছিল। শুক্রবার সাধারণ পরিষদে গৃহীত ভোটেও যুক্তরাষ্ট্র ‘না’ ভোট দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত করার জন্য নিরাপত্তা পরিষদে কোনো প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে, যুক্তরাষ্ট্র এতে ভেটো দেবে।
ভোট গ্রহণের আগে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর আবেগ-আপ্লুত ভাষণে বলেন,“একটি ‘হ্যাঁ’ ভোট হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্বের পক্ষে, এটি কোন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়। তবে, এটি আমাদের রাষ্ট্র থেকে আমাদের বঞ্চিত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে”।
এই প্রস্তাবে জাতিসংঘের চার্টারের আওতায় জাতিসংঘের সদস্যপদের জন্য “ফিলিস্তিন রাষ্ট্র যে যোগ্য তা নির্ধারণ করা হয়েছে”এবং সুপারিশ করা হচ্ছে যে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, জাতিসংঘে তার পূর্ণ সদস্যপদ লাভের বিষয়টি যেন “ইতিবাচক ভাবে পূনর্বিবেচনা”করে।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের উপরাষ্ট্রদূত বলেন, “আমাদের এই ভোট ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র হওয়ার বিরোধীতার কোন প্রতিফলন নয়, আমরা এটা পরিস্কার করে বলেছি যে, আমরা এ বিষয়টিকে সমর্থন করি এবং অর্থবহভাবে এটিকে এগিয়ে নিতে চাই। আমরা এ কথাটি মানি যে, রাষ্ট্রত্ব তখনই কেবল আসবে যখন সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে সরাসরি আলোচনা হবে।
ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত সোচ্চার কন্ঠে প্রস্তাবটির বিরোধীতা করে বলেন, এটি হলে হামাস সন্ত্রাসবাদীরা অধিকার পেয়ে যাবে।
রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান, হামাস নেতার ছবি সম্বলিত একটি প্লাকার্ড তুলে ধরেন যেখানে লেখা ছিল “প্রেসিডেন্ট সিনওয়ার”এবং বলেন, “সুতরাং এই যে দেখতে পাচ্ছেন , আমি আপনাদের দেখাচ্ছি আজকের ভোটের ভবিষ্যত্ ফলাফল, হামাস রাষ্ট্রের যিনি প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন, অত্যাচারি নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার। আর তিনি আপনাদের প্রতি-জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রতি গভীর ভাবে কৃতজ্ঞ।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্ব করে হামাস নয়, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং এই দু’টি গোষ্ঠী দীর্ঘ দিন ধরে পরস্পরের বিরোধীতা করে আসছে। ইসরাইল বলছে হামাসকে নিশ্চিহ্ন না করা অবধি তারা তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
প্রায়োগিক প্রতিক্রিয়া:
সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবগুলি আইনত বাধ্যতামূলক নয় তবে এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নৈতিক বিষয়টি প্রতিফলিত হয়। ১৪৩ টি রাষ্ট্রের সমর্থন স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রত্বের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ঠিক কি অনুভব করে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপবিষয়ক জাতিসংঘের পরিচালক রিচার্ড গোওয়ান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ আমার মনে হয় এই ভোটে দেখা যাচ্ছে যে জাতিসংঘের অধিকাংশ রাষ্ট্র কেবল এটাই চায় না যে গাজায় অস্ত্রবিরতি হোক বরঞ্চ প্রকৃতপক্ষে এটাও চায় যে দুই রাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনি প্রশ্নের একটি মৌলিক ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হোক”।
যুক্তরাষ্ট্রের দূত উড আভাস দেন যে বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদে ফিরে আসলেও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে – যে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় পরিচিতি আসতে হবে ইসরাইলি ফিলিস্তিনি সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে।
খবর: বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা।
মন্তব্য