গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার লিফট আটকে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকাল পৌনে ১১টার দিকে মেডিসিন বিভাগ থেকে সিসিইউতে স্থানান্তরের সময় লিফটে ৪৫ মিনিট আটকে থেকে রোগীর মৃত্যু হয়।
মারা যাওয়া রোগীর নাম মমতাজ (৫০)। তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিগাও গ্রামের শরীফ উদ্দীনের স্ত্রী।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা: কামরুল ইসলাম।
এঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি লিফট আটকে যাওয়ার ও রোগীর মৃত্যু কারণ অনুসন্ধান করে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিবে।
হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা: কামরুল ইসলাম আরো বলেন, সম্ভবত কয়েকদিন আগে তার (মমতাজের) হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এই অবস্থায় তিনি আজ রোববার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে আসলে তাকে ১১তলার মেডিসিন বিভাগের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শারিরীক পরীক্ষার পর হার্ট অ্যাটাকের বিষয়টি ধরা পড়ে। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সকাল সাড়ে দশটার দিকে এই রোগীকে হাসপাতালের চতুর্থ তলায় কার্ডিওলজি বিভাগের সিসিইউ তে রেফার্ড করা হয়। পরে তাকে ওয়ার্ড থেকে সিসিইউতে নেওয়ার জন্য লিফটে তোলা হয়। লিফটি অজ্ঞাত কারণে আটকে যায়। সেখানে প্রায় ৪০ মিনিট আটকে থাকার পর লিফট থেকে তাকে উদ্ধার করা হলে তাকে মৃত পাওয়া যায়।
এর আগে গত ৪ মে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী হাসপাতালের ১২তলা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। মারা যাওয়া রোগীর নাম জিল্লুর রহমান (৭০)। তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দরদরিয়া এলাকার কাসেম আলীর ছেলে।
৪ মে দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে হাসপাতালের ১২তলায় মেডিসিন বিভাগের পাশের বিদ্যুৎ রক্ষণাবেক্ষণ কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই লিফটে আটকে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো।
মারা যাওয়ার রোগীর স্বামী অভিযোগ করেন, লিফটে নামানোর সময় আমি লিফটের বাইরে ছিলাম। পরে যখন লিফট আটকে যায়, তখন আমি একবার তিন তলায় (প্রশাসনিক ভবন), একবার পাঁচ তলায়, একবার সাত তলায় বিভিন্ন কর্মকর্তার নিকট দৌড়াদৌড়ি করি। আমার রোগীকে উদ্ধার করার জন্য, তাকে বাঁচানোর জন্য তাদের কাছে আবেদন-নিবেদন করি। কিন্তু তারা আমার আবেদনে সাড়া দেন নাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসা দিলে আমার রোগী হয়তো বেঁচে যেতে পারত।
মারা যাওয়া রোগীর মেয়ে শারমিন বলেন, আমার মা সকালে অসুস্থ হয়ে যায়। পরে সকাল ৬ টায় তাজউদ্দীন হাসপাতালে নিয়ে আসি। প্রথমে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করে পরীক্ষা করা হয়। সেখানে পরীক্ষার পর জানা যায় হার্টে সমস্যা বলে জানান। পরে ১১ তালা থেকে থেকে লিফটে ৪ তলার হৃদরোগ বিভাগে নেয়ার কথা বলে। তাদের কথামতো লিফটে উঠলে ৯ তলার মাঝামাঝি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়৷ এসময় আমি, আমার মামা, ভাইসহ কয়েকজন মাকে নিয়ে ভেতরে ছিলাম। আমাদের দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। আমরা লিফটে থাকা ৩ জন লিফটম্যানের ফোন দেই, কিন্তু তারা গাফিলতি করে। ফোনে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে।
তিনি আরও বলেন, ৪৫ মিনিট আমরা ভেতরে অবস্থান করেছি, উপায় না পেয়ে ৯৯৯ ফোন দেই। ফোন পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এসে উদ্ধার করে৷ লিফটম্যানদের গাফিলতির কারণে আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে কোন দায়িত্ববোধ নেই।
রোগীর ভাগিনা সেলিম প্রধান বলেন, আমরা আজ রোববার ভোরে বাড়ী থেকে রওয়ানা হয়ে সোয়া ৬টার দিকে রোগীর স্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসি। রোগীকে প্রথমে হাসপাতালের ১১ তলায় মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা করে রোগীর হার্ট এ্যাটাক ধরা পড়ে। রোগীর প্রেসার কম ছিল। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ১১তলার মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে রোগীকে চতুর্থ তলার হৃদরোগ বিভাগের সিসিইউতে রেফার্ড করা হয়। আমরা দ্রুত রোগীকে নিয়ে লিফটে নিচে চতুর্থ তলায় নিয়ে যাওয়ার জন্য লিফটে উঠি। তারপর হঠাৎ ১০তলা এবং ৯তলার মাঝামাঝি এসে লিফটি আটকে যায়। এ সময় ভয়ে আমাদের মধ্যে এক বিভীষিকাময় অবস্থায় সৃষ্টি হয়। লিফটে আমাদের সাথে ১০-১২ জন আটকা পড়েছিল। এ সময় ভয়ে নারী ও শিশুরা কান্না শুরু করে এবং অনেকে দোয়া ইউনুস পড়তে থাকে। আমরা আমাদের উদ্ধারের জন্য ডাকাডাকি করি কিন্তু কেউ কোন সাড়া দেয়নি। পরে লিফটের ভিতর থেকে ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দিলে, তারা গিয়ে লিফট বলপূর্বক ফাঁকা করলে আমরা সেখান থেকে বের হয়ে আসি। ততক্ষণে আমাদের রোগী মৃত্যুবরণ করে।
তিনি আরো বলেন, আমরা লিফটের প্রায় ৪৫ মিনিট আটকা পড়েছিলাম। হাসপাতালের লোকজন যদি আমাদেরকে দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা নিতো এবং সিসিইউতে নিয়ে আমার রোগীকে চিকিৎসা দিতে পারতাম, তাহলে হয়তো আল্লাহ আমাদের রোগীকে বাঁচিয়েও দিতে পারতেন।
তিনি এ ঘটনার জন্য হাসপাতালের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে বলেন, আমরা তদন্ত পুর্বক এর বিচার চাই।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (উপ পরিচালক) ডা: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘটনাটি দু:খজনক। চিকিৎসার অভাবে রোগী মারা যায়নি। লিফটের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে রোগী আটকে গিয়ে মারা গেছে। এ ঘটনা তদন্ত করার জন্য ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি আগামী ৩দিনের মধ্যে লিফট আটকে যাওয়া ও রোগী মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করে প্রতিবেতদন দিবে। প্রতিবেতন পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য