গণবাণী ডট কম:
ঘূর্ণঝড় রিমালের প্রভাবে সারাদেশের ন্যায় গাজীপুরে তখন হচ্ছিল ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি। পথের চারপাশ জনমানবহীন। এমনি পরিবেশে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক রাজবাড়ীর নিজের কার্যালয় থেকে গাড়ীতে করে বাংলোতে ফিরছিলেন। পথে গাজীপুর মহানগরীর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সড়কের পাশে রানী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের পুকুর পাড়ে ময়লা স্তুপ, বিভিন্ন বস্তা ও পুরানো পলিথিনের ভিতর থেকে কাউকে উকি দিয়ে বাইরে তাকাতে দেখেন তিনি। এসময় জেলা প্রশাসকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। এমন ঝড়ের মধ্যে এমন জায়গায় একজন মানুষ কি করে? তিনি নাম না জানা মানুষটির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
পরে জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে খোঁজ নেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন সেখানে ৫৫ বছর বয়সী এক অসহায় ও আশ্রয়হীন নারী সড়কের পাশে বিভিন্ন ধরণের পুটলি, পলিথিন ইত্যাদি দিয়ে ঘর বানিয়ে সেখানে বসবাস করেন। তিনি মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ এবং রোগে ভুগছেন। তিনি নিজের নাম ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেন না। কোন স্বজন ও পরিচিত কারো নাম—ঠিকানার কথা স্মরণ করতে পারছেন না। তার কোনো আত্মীয়-স্বজনও পাওয়া যায়নি। প্রতিদিন কে/ বা কারা এসে তাকে খাবারও দিয়ে যান, কিন্তু তার নাম ঠিকানাও জানেন না তিনি।
পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একজন ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে আইন অনুযায়ী তাকে একজন ভবঘুরে হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। মঙ্গলবার তাকে গাজীপুরের পূবাইলে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
গাজীপুর সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো: আনোয়ারুল করিম সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলামের সাথে আলোচনা হয়। জেলা প্রশাসক মঙ্গলবার সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদা শাবাবকে সেখানে পাঠান। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে ঐ অসহায় নারীকে ভবঘুরে হিসেবে সনাক্ত করেন। পরে একই দিন সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসন ও সমাজ সেবা অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে খুপড়ি ঘর থেকে চিকিৎসার কথা বলে গাজীপুর শহর সমাজ সেবা অফিসার আবু বকর মজুমদারের তত্বাবধানে গাড়িতে তুলে গাজীপুর মহানগরীর পূবাইলে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যান।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম জানান, রাস্তর পাশে ময়লার স্তুপের মধ্যে পলিথিন ও বিভিন্ন বস্তা দিয়ে তৈরী ঘরে একজন নারী বাস করছিলেন। তিনি মানসিকভাবে অপ্রকৃতস্থ এবং রোগে ভুগছেন। তিনি নিজের নাম ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেন না। তার কোন আত্মীয়-স্বজন ও পাওয়া যায়নি। পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একজন ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে ভবঘুরে আইন অনুযায়ী তাকে একজন ভবঘুরে হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং মঙ্গলবার তাকে গাজীপুরের পূবাইলে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এখানে থাকা অবস্থায় তার সকল ভরন পোষণ, চিকিৎসা সেবাসহ প্রয়োজনীয় কাপড়/পোশাক সবকিছু সরকারীভাবে তাকে সরবরাহ করা হবে। সেখানে সারা দেশ থেকে আসা তার মতো প্রায় সাড়ে ৩শ’র মতো আশ্রয়হীন ও ভবঘুরে মানুষ বসবাস করছেন। পরবর্তীতে তার কোন স্বজনের খবর পেলে তাকে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
মন্তব্য