গণবাণী ডট কম::
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ও পৌর ছাত্রলীগের দ্বন্ধের জেরে খুন হয়েছেন এক কলেজ ছাত্র। এসময় আরেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এরা দুজনই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজ শাখার ছাত্রলীগ নেতা।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) দুপুরে উপজেলার চন্দ্রা এলাকার ডাইনকিনি সড়কে শাহ মখদুম মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে কালিয়াকৈর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ও তার সহযোগীরা ঐ দুই শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে। পরে একজনের মুত্যু হয়।
নিহত শিক্ষার্থীর নাম মোঃ আল আমিন হোসাইন (১৯)। তিনি কালিয়াকৈর উপজেলার বরিয়াবহ গ্রামের মো: মোতালেব মিয়ার ছেলে। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন এবং স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তির অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণী শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। আল আমীন পিতা মাতার একমাত্র ছেলে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পিতা মোতালেব হোসেন ও নিহত আলামিনের মা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন।
আহত শিক্ষার্থীর নাম কামরুল ইসলাম (১৯) । তিনি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম নাসিম।
তিনি আরো জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।
কলেজের শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, সারাদেশে কলেজে র্যা গ ডে অনুষ্ঠান আয়োজনে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরেও কলেজে বুধবার বিদায় অনুষ্ঠানের নাম করে র্যা গ ডে আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে খাবার নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে বাত বিতন্ডার সৃষ্টি হয়। এসময় মাইকে ঘোষণা দিয়ে ছাত্রীদের চলে যেতে বলা হয়। পরে পরিস্থিতি শান্ত করতে না পেরে দায়িত্বরত শিক্ষকরা ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা জানায়, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের (ইন্টারমিডিয়েট) শিক্ষার্থীদের বিয়ায় উপলক্ষে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদ কামাল সোহানের নেতৃত্বে বুধবার কলেজ ক্যাম্পাসে র্যা গ ডে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং ডিগ্রির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বাক বিতন্ডার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পৌর ছাত্রলীগ এবং কলেজ শাখা ছাত্রলীগের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।
কয়েকটি সূত্র জানায়, বুধবারের ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ও কলেজের ডিগ্রী তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমন খান, তার সহযোগী সাকিব হৃদয়, আকাশ ও হাসান সহ ১০-১২ জন শিক্ষার্থী কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে কলেজের পশ্চিম পাশে ডাইনকিনি সড়কে শাহ মখদুম মার্কেটের সামনে নিহত শিক্ষার্থী আল আমিন ও আহত শিক্ষার্থী কামরুলকে দেখতে পেয়ে ধাওয়া করে। পরে তাদেরকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। স্থানীয়রা উদ্ধারকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আল আমিনকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপর একটি সূত্রের দাবী, বুধবারের ঘটনাটি মিমাংসার কথা বলে, বৃহস্পতিবার সকাল দশটার দিকে সময় নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী নিহত আলামিন ও কামরুলসহ আরো অনেকেই কলেজের পাশেই মোকদম প্লাজার সামনে যায়। পরে পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান ও পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমন খানের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি দল হকিস্টিক রামদা,ছুরি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় আলামিন ও কামরুলকে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী, নর সুন্দর রামকৃষ্ণ সাংবাদিকদের বলেন, চিৎকারের ডাক শুনে আমি আমার দোকান থেকে বের হতেই আল আমীন রক্তাক্ত অবস্থায় আমার উপরে এসে পড়ে যায় এবং সে প্রাণে বাঁচতে গলির ভিতরে দৌড় দিলে সেখানে গিয়ে হামলাকারীরা তাকে উপর্যপরি আঘাত করে। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী পান ব্যবসায়ী শুভ সাহা সাংবাদিকদের বলেন, ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল হকিস্টিক রাম দা ছুরি নিয়ে ধাওয়া করলে ভয়ে আমি দোকান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাই।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজের অধ্যক্ষ সুফিয়া বেগম বলেন, বুধবার শিক্ষার্থীদের আবেদনের ভিত্তিতে তাদের বিদায়ী অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল কোন ধরনের র্যা গ ডে পালনের অনুমতি দেয়া হয়নি। সেই অনুষ্ঠানে কলেজের বেশ প্রয়োজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনার জের ধরেই আজকে একটি পক্ষের হামলায় কলেজের একজন ছাত্রকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
কালিয়াকৈর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)এ এফ এম নাসিম বলেন, কালিয়াকৈর উপজেলার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর বিদায় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গত বুধবার ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে মারামারি হয়। ওই মারামারির ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে সমাধান করার কথা ছিল। এরই সূত্র ধরে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এলাকাবাসী আহত দুই জনকে উদ্ধার করে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আল আমিনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত কামরুল ইসলাম কে গুরুতর অবস্থায় মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।
মন্তব্য