গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজের দ্বাদশ শ্রেণী শাখা ছাত্রলীগ সভাপতিকে হত্যার অভিযোগে ছাত্রলীগের ১৮ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। শুক্রবার সকালে নিহতের পিতা বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় কালিয়াকৈর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমন খানকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করা হয়েছে। মামলার আসামিরা সকলেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ও কালিয়াকৈর পৌর ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এদিকে ঘটনার প্রায় ২৪ ঘন্টা হয়ে গেলেও শুক্রবার বিকাল তিনটা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
নিহত শিক্ষার্থীর নাম মোঃ আল আমিন হোসাইন (১৯)। তিনি কালিয়াকৈর উপজেলার বরিয়াবহ গ্রামের মো: মোতালেব মিয়ার ছেলে। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। তিনি ঐ কলেজের দ্বাদশ শেণী শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।
এদিকে, এ হত্যাকান্ডের পর গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌর ছাত্রলীগ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দুই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগ।
গত বৃহস্পতিবার (৬ জুন) দুপুরে কালিয়াকৈর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ও পৌর ছাত্রলীগের দ্বন্ধের জেরে উপজেলার চন্দ্রা এলাকার ডাইনকিনি সড়কে শাহ মখদুম মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে কালিয়াকৈর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ও তার সহযোগীরা আল আমিন ও কামরুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে। পরে আল আমিনের মুত্যু হয়।
পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা জানায়, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের (ইন্টারমিডিয়েট) শিক্ষার্থীদের বিয়ায় উপলক্ষে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদ কামাল সোহানের নেতৃত্বে বুধবার কলেজ ক্যাম্পাসে র্যা গ ডে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং ডিগ্রির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বাক বিতন্ডার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পৌর ছাত্রলীগ এবং কলেজ শাখা ছাত্রলীগের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।
কয়েকটি সূত্র জানায়, বুধবারের ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ও কলেজের ডিগ্রী তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমন খান, তার সহযোগী সাকিব হৃদয়, আকাশ ও হাসান সহ ১০-১২ জন শিক্ষার্থী কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে কলেজের পশ্চিম পাশে ডাইনকিনি সড়কে শাহ মখদুম মার্কেটের সামনে নিহত শিক্ষার্থী আল আমিন ও আহত শিক্ষার্থী কামরুলকে দেখতে পেয়ে ধাওয়া করে। পরে তাদেরকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। স্থানীয়রা উদ্ধারকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আল আমিনকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপর একটি সূত্রের দাবী, বুধবারের ঘটনাটি মিমাংসার কথা বলে, বৃহস্পতিবার সকাল দশটার দিকে সময় নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী নিহত আলামিন ও কামরুলসহ আরো অনেকেই কলেজের পাশেই মোকদম প্লাজার সামনে যায়। পরে পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান ও পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমন খানের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি দল হকিস্টিক রামদা,ছুরি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় আলামিন ও কামরুলকে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম নাসিম বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা ঘটনার পরপরই আত্মগোপনে করেছে। হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার করতে এরই মধ্যে পুলিশের একাধিক টিম অভিযান শুরু করেছে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম জানান, ঘটনার সময় কেউ একটি ভিডিও ধারণ করেছিল, আমরা সে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। ভিডিওতে হত্যাকান্ডের ঘটনার দৃশ্য পাওয়া গেছে। ভিডিও দেখে হত্যাকারীদের প্রায় সকলকেই চিহ্নিত করা গেছে। তাদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
বাড়িতে শোকের মাতম :
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহত শিক্ষার্থী আল আমিনের লাশের ময়না তদন্ত শেষে শুক্রবার বিকাল ৩ টার দিকে তার লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। লাশ বাড়িতে পৌছালে এক হৃদয় বিদারক দৃশের অবতারণা হয়। একমাত্র পুত্র হারিয়ে তার বাবা মা শোকে কাতর। লাশ দেখে স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। নিহতের মা আছিয়া বেগম বিলপ করতে করতে সঙ্গাহীন হয়ে পড়েন। ঘরের বারান্দায় একটি চেয়ারে বসে বাবা মোতালেব হোসেন বিলাপ করে বলছেন, তোরা আমার ছেলেডারে কেন মাইরা ফাইলাইলি। আমার ছেলেডা কি ক্ষতি তোদের করছে। এসময়ে তিনি তার ছেলের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার এবং বিচার দাবি করেন।
ছাত্রলীগের দুই কমিটি বিলুপ্ত :
গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌর ছাত্রলীগ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দুই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করেছে জেলা ছাত্রলীগ।
বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুলতান সিরাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির মোড়লের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কালিয়াকৈর পৌর ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হলো।
মন্তব্য