গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজের দ্বাদশ শ্রেণী শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আল আমিনকে হত্যার অভিযোগে মিলন রহমান নামের এক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অপরদিকে, আল আমিন হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও তাদের বিচার দাবীতে শনিবার মানবন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন আল আমিনের স্বজন, সহপাঠী শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা।
নিহত মোঃ আল আমিন হোসাইন (১৯) কালিয়াকৈর উপজেলার বরিয়াবহ গ্রামের মো: মোতালেব মিয়ার ছেলে। তিনি ঐ কলেজের দ্বাদশ শেণী শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।
গ্রেফতার মিলন রহমান কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুরের খয়েজ মার্কেট এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে। তিনি কালিয়াকৈর পৌর ছাত্রলীগের ৬ নম্বর ওয়ার্ড শাখার সাধারণ সম্পাদক। তাকে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার কালামপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার (৬ জুন) দুপুরে কালিয়াকৈর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ও পৌর ছাত্রলীগের দ্বন্ধের জেরে উপজেলার চন্দ্রা এলাকার ডাইনকিনি সড়কে শাহ মখদুম মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে কালিয়াকৈর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ও তার সহযোগীরা আল আমিন ও কামরুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে। পরে আল আমিনের মুত্যু হয়।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় আল আমিনের পিতা বাদী হয়ে শুক্রবার সকালে ছাত্রলীগের ১৮ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় কালিয়াকৈর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমন খানকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলার আসামিরা সকলেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ও কালিয়াকৈর পৌর ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
মামলার অন্য আসামিরা হলো, মো: সাকিব, মো. হাসান, রউফ আহমেদ তারেক, সুজন সিকদার, মো: রিপন, জাহিদ হাসান খান, মো: আকাশ, মো: কাউছার, মো: মিনহাজ, মিলন রহমান, প্রেম কুমার, মো: সাকিব হোসেন, মো: হৃদয়, কামরুল ইসলাম, মো: বাদশা মিয়া, মো: শিপন হোসেন ও মো: সিফাত। এদের ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আসামিও রয়েছে।
এদিকে, আল আমিন হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও তাদের বিচার দাবিতে শনিবার (৮ জুন) সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় মানববন্ধন করেছেন আল আমিনের স্বজন, সহপাঠী শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। এতে আল আমিনের বাবা, দাদি, নানা ও ফুফুসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। মানবন্ধনে আল আমিনের পরিবারের সদস্যদের আহাজারীতে পুরো এলাকায় এক শোকাতুর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
মানববন্ধন শেষে অংশ গ্রহণকারীরা নানা শ্লোগান দিয়ে ও ফেস্টুনও ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও চন্দ্রা-বলিয়াদি আঞ্চলিক সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এসময় তারা আল আমিন মরলো কেন? জবাব চাই, প্রশাসন চুপ কেন? জবাব চাই ইত্যাদি ম্লোগান দেয়।
মানব বন্ধনে অংশ নিয়ে নিহতের বাবা মোতালেব হোসেন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, এ কেমন নোংরা রাজনীতি? মায়ের বুক খালি হলো। ছেলে কে হারিয়ে আমার যে কি যন্ত্রণা? আমি জানি। আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভা হত্যা করা হয়েছে। এখানে স্বাক্ষীর দরকার নাই, সিসি ক্যামেরার ভিডিও স্বাক্ষী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
এসময় কাঁদতে কাঁদতে পড়ে যান নিহতের বৃদ্ধ নানা আমছের আলী। তিনিও কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার একটামাত্র নাতিগো। আমার নাতি ওদের লগেই চলতো। ওরা আমার নাতিরে ডাইক্যা নিয়া কুপাইয়া মাইরা ফালাইছে। ও (আল আমিন) কী এমন অপরাধ করছিল? ওরে এইভাবে কুপাইয়া মারলি ক্যান। তোমরা আমার নাতিরে ফিরাইয়া আইন্যা দেও। যারা নানা ভাইরে মারছে, তাগো ফাঁসি চাই। নানার প্রলাপে বুকফাটা আহাজারী করেন নিহত আল আমিনের বৃদ্ধা দাদী মহরজান, বড় ফুফু আসমা বেগম, মামা হারুণ মিয়াসহ অন্যান্য স্বজনরা।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম বলেন, গোপন সংবাদে ভিত্তিতে খবর পেয়ে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার কালামপুর এলাকা থেকে এজাহার নামীয় আসামী মিলন রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, মিলন রহমানকে হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা হয়। অন্য আসামীদের গ্রেফতারের অভিযান আব্যাহত আছে।
মন্তব্য