গাজীপুরের সবচেয়ে বেশী দখল ও দূষণের কারণে মৃত প্রায় লবলং (লবলঙ্গ সাগর) নদীর বর্তমান অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: কায়সার খসরু। শুক্রবার সকালে পরিদর্শনকালে গাজীপুরের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাঁর সাথে ছিলেন।
জানা যায়, গত ৪ সেপ্টম্বর পনি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ, নদীকে অবৈধ দখল ও দূষণমুক্তকরণ এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের দায়েরকৃত রিট পিটিশন নম্বর- ৮৫৩৯/২০২১ এর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন সংক্রান্ত একটি ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপত্বি করেন, পরিবেশ ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। উক্ত সভায় পরিবেশ রক্ষায় ও দূষণ রোধে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভার গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে ৩ নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী দুই মাসের মধ্যে প্রত্যেক জেলায় একটি করে নদীকে দূষণ ও অবৈধ দখলমুক্ত হতে করার জন্য নির্ধারণ করতে হবে এবং এর লক্ষ্যে কর্মকরিকল্পনা সম্ভাব্য বাজেট লজিস্টিকসহ তালিকা প্রেরণ করতে হবে।
মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গাজীপুরের পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মনে করেন, গাজীপুরের সবচেয়ে বেশী দখল ও দূষণের শিকার হয়েছে জেলার শ্রীপুরের লবলং নদী। নদীটির অস্তিত্ব আজ হুমকির মূখে। জেলার এ নদীটিকে সবার আগে বাঁচাতে হবে। তাদের দাবী, মন্ত্রণালয়ের দখল ও দূষণ মুক্ত করার অগ্রাধীকার তালিকায় এ নদীকে অন্তর্ভূক্ত করতে পারলে হয়ত নদীটিকে বিলীন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এ লক্ষ নিয়েই শুক্রবার লবরং নদী সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়।
সরেজমিনে পরিদর্শন কালে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: কায়সার খসরু এর সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন, শ্রীপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতাহার শাকিল, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোঃ মনির হোসেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)র কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান ইউসুফ খান, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল, গাজীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এম. আসাদুজ্জামান সাদ, আজকের পত্রিকার শ্রীপুর প্রতিনিধি রাতুল মন্ডল, নদী পরিব্রাজক দল শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরীসহ আরো অনেকে।
তারা লবলং নদীর উৎপত্তিস্থল থেকে শুরু করে নদীর শেষ সীমা পর্যন্ত সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এসময় নদীর দুই পাশ, প্রবাহ ধারা, নদীর তীর ও নদীর সীমানায় অবৈধ দখল চিহ্নিতকরণ, আবর্জনার ভাগাড়, দূষিত তরল বর্জ্য নদীতে ফেলার দৃশ্য অবলোকন করা হয়। এসময় স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য শুনা হয়। দখল ও দূষণে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষীয় বক্তব্য শুনা হয়। এসময় নদীর দখল ও দূষণ মুক্ত করার, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ করা হয়।
বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোঃ মনির হোসেন বলেন, নদী একটি জীবন্ত সত্বা। আমাদের গাজীপুরে সবচেয়ে দখল ও দূষণ হয়েছে লবলং নদী। এ নদীকে নিয়ে ইতিপূর্বে অনেক কথা বলা হয়েছে। আমরাসহ বিভিন্ন সংগঠন এ নিয়ে অনেক কর্মসুচী পালন করেছি। কিন্তু নদীর কোন উপকার হয়নি। এখন আমরা চাই মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গাজীপুরের এ নদীটিকে সবার আগে বাঁচানোর উদ্যোগ নেয়া হোক।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)র কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান ইউসুফ খান বলেন, গাজীপুরের লবলং নদীকে যদি আমরা দখল ও দূষণমুক্ত করতে পারি, তাহলে সেটি হবে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব কায়সার খসরু জানান, আমাদের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন মহোদয় গাজীপুরের বিভিন্ন নদী, খাল, পুকুর ও জলাশয়ের সকল অবৈধ দখল উচ্ছেদ এবং পরিবেশ রক্ষায় আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তের আলোকে গাজীপুরে জেলা প্রশাসন একটি নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করার জন্য বাছাই করা হবে। গাজীপুর জেলার একটি নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করার লক্ষ্যে নির্ধারণ করার অভিপ্রায় নিয়ে শুক্রবার লবলং নদী পরিদর্শন করা হয়। পরবর্তীতে জেলা নদী রক্ষা কমিটিতে আলোচনা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসনের পরিবেশ রক্ষার সকল কাজে তিনি জেলায় কর্মরত সকল পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ও সুধীবৃন্দের সহযোগিতা কামনা করেন।
মন্তব্য