গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সাবেক সভাপতি ও লেখক শাহরিয়ার কবিরকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেডিকেল চেকআপ করা হয়েছে। এ জন্য শনিবার (২ নভেম্বর) বেলা ১২টার দিকে তাকে ঐ হাসপাতালে নেয়া হয়। প্রায় এক ঘন্টা চিকিৎসা শেষে তাকে পুনরায় কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম।
একাধিক সূত্র জানায়, শনিবার তাকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে একটি কারা এ্যাম্বুলেন্স যোগে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় তার নিরাপত্তার জন্য কারাগারের একটি পিকআপ পাহাড়াসহ কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। হাসপাতালে পৌছার পর কড়া পাহাড়ায় তাকে হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা: মো: জাহাঙ্গীর আলমের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শাহরিয়ার কবিরকে নিয়ে কারা এ্যাম্বুলেন্স ১২টার কিছু আগে হাসপাতালে প্যেছে। পরে তাকে এ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে একটি হুইল চেয়ারে বসিয়ে লিফটে করে তিন তলায় উপ পরিচালকের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার পরনে প্যান্ট, পাঞ্চাবী, শরীরে একটি জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট পরানো ছিল। চারপাশে কারাগারের রক্ষী, পুলিশ ও বিপুল সংখ্যক আনসার সদস্য ছিল।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর একটি দায়িত্বশীল সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শাহরিয়ার কবিরের উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে। এসব বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তবে, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সিনিয়র জেল সুপার মো: আমিরুল ইসলাম হাসপাতালে পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার কলেও কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একাধিক সূত্রে জানা যায়, নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে হাসপাতালে পাঠানোর বিষয়টি আগে জানায় কারা কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী শাহরিয়ার কবিরকে নিয়ে কারা এ্যাম্বলেন্স হাসপাতালে পৌছালে তাকে সরাসরি হাসপাতালের উপ পরিচালকের অফিস কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। হাসপাতালের হৃদরোগ, মেডিসিন, অর্থোপেডিক্স বিভাগের প্রফেসরগণ তার পরীক্ষা করেন। পরে তার কিছু মেডিকেল টেস্ট করানো হয়।
এ বিষয়ে হাসপাতালের উপ পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শাহরিয়ার কবিরকে রুটিন চেক আপ করানোর জন্য হাসপাতালে আনা হয়। আমরা কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সমন্বয়ে তার শারিরীক পরীক্ষা করি। কিছু টেস্ট করা হয়। তিনি বয়সজনিত বিভিন্ন রোগে ভূগছেন, তবে জটিল কোন সমস্যা নেই। আমরা আজকে একটি ব্যবস্থাপত্র দিয়েছি। রোববার রিপোর্ট পাওয়ার পর সেগুলো যাচাই করে প্রয়োজন হলে আবারো ব্যবস্থাপত্র দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৭ সেপ্টেম্বর সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় রাজধানীর বনানীর বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে কয়েক দফা রিমান্ড শেষে তাকে আদালতের নির্দেশে প্রথমে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তাকে প্রথমে গাজীপুর কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। পরে তাকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এ স্থানান্তর করা হয়। এখানেই তিনি বর্তমানে বন্দী আছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৮ জুলাই মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মো: আরিফ ও ও ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ী এলাকার রায়ান কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর কয়েকটি থানায় দায়ের হত্যা মামলার এজাহারে আসামির তালিকায় শাহরিয়ার কবিরের নাম রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এর আগে, গত ২০ (অক্টোবর) রবিবার ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলার রিমান্ড শুনানিকালে শাহরিয়ার কবির অভিযোগ করেন কারাগারে তিনি সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
আসামি পক্ষের আইনজীবী শ্রী প্রাণনাথ ওইদিন শুনানিতে বলেন, আসামির বিরুদ্ধে মামলায় সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। তিনি একজন শিক্ষক, কলামিস্ট। সারাজীবন শিক্ষকতা করেছেন। আসামির হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, পায়ে রড লাগানো। তিনি অসুস্থ ব্যক্তি।
এরপর আইনজীবী বলেন, শাহরিয়ার কবির কিছু বলতে চান। আপনি অনুমতি দিলে। পরে আদালত অনুমতি দিলে শাহরিয়ার কবির বলেন, আমি এর আগে রিমান্ডে গিয়েছি। হুইল চেয়ার ছাড়া হাঁটতে পারি না। আমার পায়ে সমস্যা। মামলার বিষয়ে আমি কিছুই বলতে চাই না। তবে সঠিক ভাবে আমার চিকিৎসার প্রয়োজন।
তিনি বলেন, গত চার মাস ধরে আমি অসুস্থ। আমি এখনো চিকিৎসার জন্য কারা হাসপাতালে রয়েছে। কাশিমপুর কারাগারে আমার ট্রিটমেন্ট হচ্ছে না। আমি সর্দি, কাশি, জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত। আমার ভালো ট্রিটমেন্টের জন্য একটু পুলিশ সুপারকে বলে দিতেন, তাহলে ভালো হতো।
এসময় এক বিএনপিপন্থী আইনজীবী চিৎকার করে বলেন, অনেক বলেছেন, আর না। থামেন এবার থামেন। এরপর পিপি বলেন, যখন বাইরে কোনো মিছিলে তাকে দেখি, তখন তিনি সুস্থ থাকেন। আদালতে আসলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এগুলো সব টালবাহানা।
জবাবে শাহরিয়ার কবির বলেন, গত চার মাস আমাকে বাইরে কোথায় দেখেছেন। কোন ছবি/ভিডিও দেখাতে পারবেন। তবে এই প্রশ্নে জবাব দেননি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। পরে আদালত তার দুদিনের রিমান্ডের এবং কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসার আদেশ দেন।
মন্তব্য