ভারতের অযোধ্যায় যখন রাম জন্মভূমি আন্দোলন তুঙ্গে ছিল, সেই সময় একটা স্লোগান শোনা যেত- “অযোধ্যা তো ঝাঁকি হ্যায়, কাশী-মথুরা বাকি হ্যায়।” বাংলায় এর তর্জমা করলে দাঁড়ায়, “অযোধ্যা তো শুরু মাত্র, এখনও কাশী-মথুরা বাকি আছে।”
যে বিষয়ের দিকে এই স্লোগানের ইঙ্গিত ছিল, তা হলো অযোধ্যা ইস্যুর নিষ্পত্তি হওয়ার পর কাশীর জ্ঞানবাপী মসজিদ ও মথুরার শাহী ইদগাহ মসজিদের জায়গায় একসময় মন্দির ছিল এই দাবি তোলা।
অযোধ্যায় রাম মন্দির ও বাবরি মসজিদ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল ২০১৯ সালে। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে কমপক্ষে ১২টি ধর্মীয় স্থান এবং স্মৃতিসৌধ ঘিরে একই ধরনের মামলা দেখা যাচ্ছে। প্রতিটি মামলায় হিন্দুপক্ষের যুক্তি এবং দাবি একই।
সেখানে মূলত বলা হয়, প্রশ্নের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ওই মসজিদ, দরগাহ বা স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়েছিল মন্দির ধ্বংস করে। এখন তা হিন্দুদের হাতে তুলে দেওয়া হোক।
এই দাবির স্বপক্ষে তথ্য প্রমাণ জোগাড় করার জন্য জরিপের আবেদনও জানানো হয়।
অন্যদিকে, মুসলিম পক্ষের তরফে সমস্ত দাবি খারিজ করে পাল্টা যুক্তি দিয়ে সাধারণত বলা হয়, এই ধরনের মামলা ১৯৯১ সালের উপাসনালয় আইনের পরিপন্থী।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি গণবাণীর পাঠকের জন্য এখানে তুলে ধরা হলো:
কাশীর জ্ঞানবাপী মসজিদ ও মথুরার শাহী ইদগাহ মসজিদকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিবাদ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। মন্দির-মসজিদ বিতর্কের আওতায় থাকা সেই তালিকায় এখন নাম জুড়েছে সম্ভলের শাহী জামা মসজিদ এবং আজমিরের খাজা মইনুদ্দিন চিশতির দরগাহেরও।
সম্ভলের জামা মসজিদে দ্বিতীয়দিনের জরিপের সময় সহিংসতার ঘটনায় মৃত্যুও হয়েছে অন্তত চারজন মুসুলমানের। খবরের শিরোনামে রয়েছে এই ঘটনা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টে সম্ভলের শাহী জামা মসজিদ মামলার শুনানি চলাকালীন মুসলিম পক্ষের সিনিয়র অ্যাডভোকেট হুজেফা আহমাদিও আদালতকে জানিয়েছিলেন, ভারতে কমপক্ষে ১০টি এই একই জাতীয় বিবাদ রয়েছে।
মসজিদ-মন্দির মামলার সঙ্গে যুক্ত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফুজাইল আহমেদ আয়ুবি বিবিসি হিন্দিকে এই বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন।
জ্ঞানবাপী মসজিদ:
১৬৬৯ সালের সেপ্টেম্বরে আওরঙ্গজেব বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু পরে ১৯৯১ সালে মসজিদটি নিয়ে হিন্দুরা বিতর্ক সৃষ্টি করে আদালতে মামলা করে। বিশ্বেশ্বরের ভক্তরা এই মসজিদ নিয়ে মামলাটি দায়ের করেন। তারপর ২০২১ সালে, পাঁচজন নারী আরও একটি পিটিশন দায়ের করে যে জায়গায় মসজিদ রয়েছে সেখানে উপাসনা করার অনুমতি চেয়েছিলেন। তাদের আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, ওই মসজিদে মা শৃঙ্গার গৌরী, গণেশ এবং হনুমানের মতো আরও অনেক দেব-দেবীর মূর্তি রয়েছে যা রক্ষা করা উচিত। নতুন মামলা হওয়ার পর এর গতিতে দ্রুততা আসে। মন্দির-মসজিদ সংক্রান্ত যে কয়টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে তার মধ্যে সবার উপরে রয়েছে এই মামলাটি।
আবেদনকারীদের দাবি, মুঘল শাসক ঔরঙ্গজেব মন্দির ভেঙে এই মসজিদ তৈরি করেছিলেন।
এই মামলায় দুটি সমীক্ষা করা হয়েছে– একটি আদালতের পক্ষ থেকে এবং অন্যটি আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তরফে।
বারাণসীর জেলা আদালতের রায়ের পর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মসজিদের একটি বেসমেন্টে পুজোও শুরু হয়েছে। এর আগে, ২০২৩ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট জানিয়েছিল, এই পিটিশনগুলি উপাসনাস্থল আইনের বিরুদ্ধে নয়।
এই সংক্রান্ত একাধিক মামলা এখনও আদালতের বিচারাধীন।
শাহী ইদগাহ:
ভারতের উত্তর প্রদেশের মথুরাস্থিত শাহী ঈদগাহ নিয়েও বিতর্ক তৈরী করা হয়েছে। কেউ কেউ দাবি করেন মথুরার শাহী ইদগাহ মসজিদটি ভগবান কৃষ্ণের জন্মস্থানে নির্মিত। ২০২০ সালে, ছয়জন ভক্ত আইনজীবী রঞ্জনা অগ্নিহোত্রীর মাধ্যমে মসজিদটি অপসারণের জন্য আবেদন জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন।
এলাহাবাদ হাইকোর্ট জানিয়েছিল, এই পিটিশনগুলিও ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল আইনের বিরুদ্ধে যায় না। ২০২৩ সালে, হাইকোর্ট একজন কোর্ট কমিশনার নিয়োগ করেছিলেন সমীক্ষার উদ্দেশ্যে। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্ট এর উপর অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যা এখনও কার্যকর রয়েছে।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি ভারতের শীর্ষ আদালতে চলতি বছরের ডিসেম্বরে হওয়ার কথা রয়েছে।
আগ্রা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফতেপুর সিক্রি। ষোড়শ শতাব্দীতে তৈরি হয়েছিল জামা মসজিদ। সেখানে সুফি সাধক সেলিম চিস্তির দরগাহও রয়েছে।
চলতি বছরে আইনজীবী অজয় প্রতাপ সিং আগ্রার একটি আদালতে এই দরগাহ নিয়ে মামলা করেন। সেই মামলায় তিনি দাবি করেছিলেন, এই দরগাহ ষোড়শ শতাব্দীতে তৈরি হলেও তার আগে সেখানে একটি মন্দির ছিল। কামাক্ষ্যা দেবীর মন্দিরের উপরে সেলিম চিশতির দরগাহ নির্মাণ করা হয়েছে বলে দাবি করেন মি. সিং।
এর আগে আগ্রা আদালতে আরও একটি মামলা করেছিলেন তিনি। সেই সময় আদালতে দায়ের হওয়া মামলায় অজয় প্রতাপ সিং বলেছিলেন আগ্রার জামা মসজিদের নিচে কাটরা কেশব দেবের মূর্তি রয়েছে।
তার দাবি ছিল, মসজিদ ও দরগাহের জায়গাটি হিন্দুদের দিয়ে দেওয়া হোক। মামলাটি এখনও বিচারাধীন। এই দাবির তীব্র বিরোধিতা করেছে উত্তর প্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড, দরগাহ ও মসজিদ পরিচালন কমিটি। তাদের এই মামলার একটি পক্ষ করা হয়েছে।
আটালা মসজিদ:
১৩৭৭ সালে, ফিরুজ শাহ তুঘলক মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন এবং মসজিদটি ১৪০৮ সালে জৌনপুর সলতনতের সুলতান নাসেরুদ্দীন ইব্রাহীম শাহ শরকী নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু এই রাজ্যের জৌনপুরের আবেদনকারীদের দাবি, আটালা মাতার মন্দির ভেঙে আটালা মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল।
চলতি বছরে, স্বরাজ বাহিনী নামক একটি হিন্দু সংগঠন তাদের আবেদনে দাবি করে, ফিরোজ শাহ তুঘলক হিন্দু মন্দির ভেঙে এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। এই আবেদনের বিরোধিতা করেছে উত্তর প্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড।
গত অক্টোবর মাসে জৌনপুরের একটি দেওয়ানি আদালত তার নির্দেশে জানায় যে, কাশী ও মথুরায় মন্দির-মসজিদ মামলার মতোই আটালা মসজিদ সংক্রান্ত মামলার শুনানিও করা যেতে পারে।
শামসি মসজিদ:
উত্তর প্রদেশের বদায়ুতে অবস্থিত শামসি মসজিদ। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে দিল্লি সালতানাতের শামসুদ্দিন ইলতুতমিশ এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। এটি নিয়েও উগ্র হিন্দুরা বিতর্ক সৃষ্টি করছে।
বদায়ু জেলা আদালতে ২০২২ সালে দায়ের করা মামলায় অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার আহ্বায়ক মুকেশ প্যাটেল জানিয়েছিলেন শামসি মসজিদের জায়গায় নীলকণ্ঠ মহাদেবের মন্দির ছিল। সেই মন্দির ভেঙে এই মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিল। এই যুক্তি দিয়ে তিনি দাবি করেছিলেন, তাকে সেখানে পুজো করার অনুমতি দেওয়া হোক।
পিটিশনে মসজিদের ইন্তেজামিয়া কমিটি এবং উত্তর প্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডকেও একটি পক্ষ করা হয়েছিল। তারা এই দাবির বিরোধিতা করে পাল্টা যুক্তি দিয়ে জানায়, আদালতে এই মামলার শুনানি করা যাবে না কারণ বিষয়টি ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল আইনের পরিপন্থী।
ডিসেম্বর মাসেই এই মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
টিলেওয়ালি মসজিদ:
ভারতের উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষনৌতে বিখ্যাত টিলেওয়ালি মসজিদকে কেন্দ্র করে একই বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। মামলাও দায়ের করা হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে।
দায়ের হওয়া মামলাটি পুরানো, ২০১৩ সালের। শেষনাগেশ তিলেশ্বর মহাদেব বিরাজমানের নামে একটি পিটিশন দায়ের করে বলা হয়েছিল, মুঘল শাসক আওরঙ্গজেব একটি হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। লক্ষ্ণৌয়ের সিভিল কোর্টের বিচারক ২০১৭ সালে জানিয়েছিলেন এই মামলার শুনানি হতে পারে এবং এটি ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল আইনের পরিপন্থী নয়।
পুরো বিষয়টি আপাতত এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারাধীন।
কামাল মওলা মসজিদ:
কামাল মওলা মসজিদ মধ্যপ্রদেশের ধার জেলায় অবস্থিত। ১৫১৪ সালে দ্বিতীয় মেহমুদ খিলজির সময়ে কামাল মওলা মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এই মসজিদকে কেন্দ্র করে হিন্দু ফ্রন্ট ফর জাস্টিস নামে একটি সংগঠন মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে পিটিশন দায়ের করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ থেকে চতুর্দশ শতাব্দীতে আলাউদ্দিন খিলজির শাসনকালে মসজিদটির নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
আবেদনকারীদের যুক্তি, সেই সময় ওখানে ভোজশালা বাগদেবীর একটি মন্দির ছিল। সেই মন্দির ভেঙে ফেলে তৈরি করা হয় মসজিদটি।
২০২২ সালে আদালতে দায়ের করা আবেদনে আর্জি জানানো হয় যে মসজিদ প্রাঙ্গণে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (এএসআই) তরফে যেন সমীক্ষা চালানো হয়।
মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট এই সমীক্ষার অনুমতি দেয় ২০২৪ সালের মার্চ মাসে। এরপরই নির্দেশ দেওয়া হয়, সমীক্ষার পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছাড়া মসজিদে যেন কোনও রকম কিছু না করা হয়। এই মামলা আপাতত বিচারাধীন এবং প্রত্নত্তত্ত্ব বিভাগের সমীক্ষা হয়ে গিয়েছে।
বাবা বুদনগিরি দরগাহ:
কর্ণাটকের চিকমাগালুরে বাবা বুদানগিরিতে সুফি সাধক দাদা হায়াতের (বাবা বুদন) একটি দরগাহ রয়েছে। এখানে হিন্দুদের দত্তাত্রেয় মন্দিরও রয়েছে। সাধারণত দক্ষিণের অযোধ্যা নামে পরিচিত এই অঞ্চল।
১৯৭০-এর দশকে কর্ণাটক সরকার এই জায়গাটি ওয়াকফ বোর্ডকে দিয়েছিল। তারপর সে নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয় এবং বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালত ১৯৮০ সালে জানায়, এটি ওয়াকফ সম্পত্তি নয় এবং এখানে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই প্রার্থনা করেন।
বিষয়টি এখনও কর্ণাটক হাইকোর্টের বিচারাধীন। ২০২১ সালে বিজেপির বিধায়ক সিটি রবি বলেছিলেন, এই উপাসনালয়ে শুধুমাত্র হিন্দুদেরই অধিকার রয়েছে।
কুওয়াত-উল ইসলাম মসজিদ:
দিল্লির বিখ্যাত কুতুব মিনারে অবস্থিত কুওয়াত-উল ইসলাম মসজিদ নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। আইনজীবী বিষ্ণুশঙ্কর জৈনের দায়ের করা আবেদনে বলা হয়েছে, একাধিক হিন্দু মন্দির ভেঙে ভিতরে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। তিনি সেখানে হিন্দুদের উপাসনা করার অনুমতি চেয়েছিলেন।
২০২১ সালে সিভিল কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে জানিয়েছিল- অতীতের ভুলগুলি বর্তমান এবং ভবিষ্যতের শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে না। কিন্তু এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করা হয়, যা এখনও বিচারাধীন।
জুম্মা মসজিদ:
কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালুরুস্থিত জুম্মা মসজিদও নিয়ে বিতর্ক চলছে গত কয়েক বছর ধরে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এক সদস্যের দায়ের করা আবেদনের ভিত্তিতে কর্ণাটকের একটি আদালত ২০২২ সালে বলেছিল যে উপাসনা স্থল সংক্রান্ত আইনের বিরুদ্ধে যাওয়া সম্ভব নয়।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফে দাবি করা হয়েছে মসজিদের নিচে একটি মন্দির রয়েছে। তাদের দাবি জোরালো করতে তারা মসজিদের পরিসরে জরিপের আর্জি জানিয়েছে। মামলাটি বর্তমানে ম্যাঙ্গালুরু জেলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এসব ছাড়াও এই সংক্রান্ত একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
শাহী জামা মসজিদ:
ভারতের উত্তরপ্রদেশের সম্ভল শহরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মুঘল যুগের মসজিদ এটি। বাবর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই মসজিদটি উত্তরপ্রদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক নিদর্শন। মসজিদটি ১৬শ শতাব্দীর শুরুর দিকে নির্মিত হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই মসজিদটিকে ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। কিছু হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী দাবি করেছে যে, মসজিদটি একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হিন্দু মন্দিরের উপর নির্মিত।
২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে আইনজীবী বিষ্ণুশঙ্কর জৈন একটি আবেদনে জানিয়েছিলেন ভগবান কল্কির অবতার শ্রী হরিহর মন্দির ভেঙে তৈরি করা হয়েছিল সম্ভলের এই জামা মসজিদ।
এরপর আদালত একজন কমিশনারকে নিয়োগ করে। তার নেতৃত্বেই জরিপ চালানো হয়। দ্বিতীয় দিনের সমীক্ষার সময় এই জরিপের বিরোধিতা জানিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখানো হয়। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ বাঁধে এবং ঘটনাটি ক্রমে সহিংস আকার নেয়।
এদিকে জরিপ শেষে তার রিপোর্ট নিম্ন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে সম্ভল সংক্রান্ত একটি মামলা বিচারাধীন। ২৯ নভেম্বর শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, সমীক্ষা পরবর্তী রিপোর্ট সিল করে রাখতে হবে এবং হাইকোর্টের অনুমতি ছাড়া এই মামলায় আর কিছু করা যাবে না।
আজমির শরিফ দরগাহ:
ভারতের রাজস্থানের আজমিরে অবস্থিত শ্রদ্ধেয় সুফি সাধক মইনুদ্দিন চিশতির সুফি সমাধি (দরগাহ)। এখানে মইনুদ্দিন চিশতির কবর আছে। ১১৪১ সালে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১২৩৬ সালে মৃত্যু বরণ করেন।
খাজা মইনউদ্দিন চিশতি দরগাহ একটি আন্তর্জাতিক ওয়াকফ , ভারত সরকার এর দারগাহ খাজা সাহেব আইন, ১৯৫৫ এর অধীনে পরিচালিত।
রাজস্থানের আজমির শহরে সুফি সাধক খাজা মইনুদ্দিন চিস্তির দরগাহ নিয়েও ভারকে বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে।
আদালতে একটি পিটিশন দাখিল করেছেন হিন্দু সেনা নামে একটি সংগঠনের সভাপতি ভিষ্ণু গুপ্তা। তার দাবি, দরগাহের নিচে একটি শিব মন্দির রয়েছে। মি. গুপ্তা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার কাছে সমীক্ষা চালানোর দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি দরগাহের জায়গায় মন্দিরটির পুনর্নির্মাণ করা উচিত বলেও আবেদনে উল্লেখ করেছেন।
আজমির ওয়েস্টের সিভিল জজ মনমোহন চন্ডেলের বেঞ্চ গত ২৭ নভেম্বর সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক, দরগাহ কমিটি এবং এএসআইকে নোটিশ জারি করেছে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা ২০শে ডিসেম্বর।
আজমির শরিফ নিয়ে আদালতে মামলাকারী ভিষ্ণু গুপ্তা।
এরপর কী?
এছাড়াও একাধিক উপাসনাস্থলকে ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মালদহে আদিনা মসজিদ সম্পর্কেও একই দাবি তোলা হয়েছে। হিন্দু পক্ষের মতে মন্দির ভেঙে নির্মাণ করা হয়েছে ওই মসজিদ।
মধ্যপ্রদেশের বিজামণ্ডল মসজিদ নিয়েও বেশ কিছুদিন ধরেই একই ধরনের বিবাদ চলছে। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছিল যে সেটি (বিজামণ্ডল মসজিদ) একটি মসজিদ। এর বিরোধিতা করে তখন সেখানকার এক আইনজীবী চলতি বছরের অগাস্টে তাদের একটি আইনি নোটিশ পাঠান। তার দাবি, এটি একটি মন্দিরই।
বিষ্ণুশঙ্কর জৈন, যিনি বেশ কয়েকটি মসজিদ-মন্দির সংক্রান্ত মামলার সঙ্গে জড়িত, তার আগের বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে অতীতে ভেঙে ফেলা সমস্ত মন্দির পুনর্নির্মাণের জন্য মামলা দায়ের করাই তার লক্ষ্য। একই সুর শোনা গিয়েছিল আজমির শরিফ নিয়ে আদালতে মামলাকারী ভিষ্ণু গুপ্তার কথায়। তিনি বিবিসি হিন্দিকে বলেছিলেন, তার পরবর্তী পিটিশন হবে দিল্লির জামা মসজিদের বিরুদ্ধে।
মন্তব্য