গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর রূপবানেরমার টেক এলাকায় দুই শিশুকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ মাকে গ্রেফতার দেখিয়েছে। গেল শুক্রবকার রাতে মায়ের দেয়া স্বীকারোতক্তর ভিত্তিতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখায়।
গ্রেফতার মায়ের নাম সালেহা বেগম। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর থানার তাতুয়াকান্দি গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা আব্দুল বাতেন মিয়া।
নিহত দুই শিশু হলো মালিহা (৬) ও আব্দুল্লাহ (৪)। তারা আব্দুল বাতেন মিয়া ও সালেহা বেগমের সন্তান। আব্দুল বাতেন মিয়া গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর রুপবানের টেকের এলাকার জনৈক আনোয়ার মিয়ার আট তলা ভবনের তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করতেন। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ঐ বাসা থেকে দুটি নিস্পাপ শিশু রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সে সময় শিশু দুটির মাকে জিগ্যাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়।
দুই শিশু হত্যায় মা জড়িত থাকার বিষয়টি শনিবার (১৯ এপ্রিল) নিশ্চিত করেছেন, গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জাহিদ হাসান।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, আব্দুল বাতেন মিয়া ও সালেহা বেগমের ৩ সন্তান। বড় মেয়ে নানার বাড়িতে থাকে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বাড়িতে থাকা শিশুদের বাবা, মা ও দাদি একসঙ্গে খাবার খান। পরে দাদি ওপরতলার ফ্ল্যাটে বেড়াতে যান। গত শুক্রবার বিকেলে শিশুদের বাবা বাসার বাইরে যান। এ সময় দুই শিশুকে নিয়ে মা সালেহা বেগম বাসায় ছিলেন। কিছুক্ষণ পরে শিশুদের বাবা আব্দুল বাতেন বাসায় ফিরে কক্ষের মেঝেতে দুই শিশুর রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান। পরে তার ডাক চিৎকারে আসপাশের লোকজন এগিয়ে এলে পুলিশের খবর পাঠানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নিয়ে যায়। মরদেহ উদ্ধারের সময়ে ঘর থেকে রক্তমাথা একটি বঁটি উদ্ধার হয়। পরে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।
পুলিশের করা মরদেহে সুরতহাল প্রতিবেদনে শিশুদের শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর গভীর ক্ষত রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলের আশপাশে কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। এসব ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ঘটনাটি যে সময় (শুক্রবার সন্ধ্যা) ঘটেছে, সে সময়ের মধ্যে তাদের ঘরে বা ফ্ল্যাটে মা সালেহা বেগম ছাড়া আর কাউকে যাতায়াত করতে দেখা যায়নি। ঘটনার পর সালেহা বেগম নিজেই পাশের বাড়ি থেকে তার দুই দেবরকে ডেকে আনেন। সেই সময় সালেহার হাতেও তাজা একটি কাটা দাগ দেখে পুলিশের আরো সন্দেহ হয়। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন হওয়ায় সন্ধ্যায় তাকে আটক করে পুলিশের হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মধ্যরাতে সালেহা তার দুই সন্তানকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন।
পুলিশ আরো জানায়, সালেহা বেগমের স্বজনরা জানিয়েছে, তিনি মাইগ্রেনের সমস্যায় আছেন। তার মানসিক সমস্যা রয়েছে কিনা সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিয়ে আরো পরিষ্কার হওয়া যাবে। পুলিশ এখন তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার জাহিদ হাসান বলেন, থানায় নিয়ে জিগ্যাসাবাদের পর শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে তিনি পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তবে, কেন বা কী কারণে হত্যা করেছেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি।
তিনি আরো জানান, ঘটনাটি নিয়ে এখন তদন্ত চলছে। আমরা জানার চেষ্টা করছি, কেন বা কী কারণে দুই সন্তানকে তিনি হত্যা করেছেন। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্য