অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকে নির্বাচনের সময় নিয়ে সফল আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচনের আগে সংষ্কার ও বিচার প্রক্রিয়ায় পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে।
শুক্রবার (১৩ জুন) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার ভ্যারিফাইড ফেসবুক পেইজে এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক শেষে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (১৩ জুন) বেলা পৌনে ৪টার দিকে পার্ক লেনের হোটেল থেকে হাসিমুখে বের হয়ে যান। তারপরেই উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটার দিকে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এসময় তারা বৈঠকের বিষয়বস্তু ও সিদ্ধান্ত সমূহ সাংবিাদিকদের অবহিত করেন।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান জানান, বৈঠকে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছর রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও মনে করেন ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠান হলে ভালো হয়।
জবাবে, প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আগামী বছর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহ নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। এসময় প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, সে ক্ষেত্রে সে সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচার বিচার প্রক্রিয়ায় পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
এ পর্যায়ে জনাব তারেক রহমান, প্রধান উপদেষ্টার এই অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
প্রধান উপদেষ্টাও জনাব তারেক রহমানকে ফলপ্রসু আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানান।
পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সাতটি প্রশ্ন নেওয়া হবে। তিনি এ সময় বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিবেন।
সাংবাদিকদের প্রথম প্রশ্ন ছিল জুলাই সনদ সংক্রান্ত। এই প্রশ্নের উত্তরে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে আমাদের মধ্যে ইতিমধ্যেই দেশে আলোচনা হচ্ছে। আমাদের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ গ্রহণ করব।
তিনি আরো বলেন, সংস্কার নিয়েও আমাকে একই উত্তর দিতে হচ্ছে। কারণ সংস্কার নিয়েও আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছে এবং সকলের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার চূড়ান্ত করা হবে।
তিনি আরো বলেন, সকলের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ ও সংস্কার চূড়ান্ত করা হবে। এটা আমি নিশ্চিত, যে খুব কম সময়ের মধ্যে আমরা সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারব।
এ সংক্রান্ত অপরের প্রশ্নের জবাবে, আমির খসরু মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, যা হবে তা ঐক্যমতের ভিত্তিতেই হবে। অতএব এগুলো না স্বাক্ষরিত হওয়ার কোন কারণ নেই।
এক সাংবাদিক নির্বাচনের তারিখ সুনির্দিষ্ট করতে সমস্যা কোথায় জানতে চাইলে, এর জবাবে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, কোন সমস্যা নাই। আমরা এর কোন সমস্যা দেখছি না। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে যৌথ বিবৃতিতে আমরা বলে দিয়েছি দুপক্ষই। আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন খুব শিগগিরই একটি তারিখ ঘোষণা করে দিবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সব বিষয়েই আলোচনা হবে এটাই তো স্বাভাবিক। আমরা তো বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছি। সবাই আমরা চাই, দেশ গড়ার যে প্রত্যয় আমরা নিয়েছি, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই কাজটা করব।
তিনি আরো বলেন, শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরেও বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয় আমরা সবাই ঐক্যমত হয়েছি, তা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
সংস্কার নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, এ বিষয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আমির খসরু মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, এটাতো পরিষ্কার, এইখানে না বুঝার কোন কারণ নাই, বিষয়টা হচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টা সাহেব, তারেক রহমান সাহেব আমরা সবাই একই কথা বলছি, যে বিষয়গুলো ঐক্যমত হবে, সেগুলোই তো সংস্কার হবে তাই না? তো সংস্কারের বিষয় তো চলমান প্রক্রিয়া। এমন না যে আজ সব সংস্কার এখনই শেষ করতে হবে। এটা নির্বাচনের আগেও যেখানে ঐক্যমত হবে ,সেখানে সংস্কার হবে, নির্বাচনের পরেও সংস্কার অব্যাহত থাকবে। আমরা যে দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েছি, সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সবাই অনুভব করছি। সুতরাং আগে-পরে সংস্কার চলতে থাকবে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাথে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে আমির খুসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফিরার বিষয়ে আলোচনার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। তিনি যখন ইচ্ছা করবেন বা প্রয়োজন মনে করবেন, তখনই তিনি দেশে ফিরে যেতে পারবেন। সুতরাং এটা সিদ্ধান্ত উনি নেবেন এবং সময় মত নিবেন।
শেখ হাসিনার বিচার সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, যৌথ বিবৃতিতে সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে বলা হয়েছে। নির্বাচনের আগে এ ব্যাপারে আমরা পর্যাপ্ত অগ্রগতি কথা বলা হয়েছে। আমরা মোটামুটি কনফিডেন্ট যে, এই অগ্রগতি আমরা নির্বাচনের আগে আমরা অর্জন করতে পারব। এসময়ে পাশে বসা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সম্পূর্ণ করতে পারবো।
এনসিপি নির্বাচন কমিশন সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের যাবে না বলে যে ঘোষণা দিয়েছে, এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাথে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে এখানে আলোচনার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।
একই প্রসঙ্গে পরে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, এটি যারা বলেছে, তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। প্রত্যেক দলেরই একটি নিজস্ব মতামত রয়েছে। আমরা চাচ্ছি, সবাইকে নিয়ে যাতে নির্বাচনটা করতে পারি।
একজন সাংবাদিক জানতে চান, তাহলে আমরা কি বলতে পারি? এপ্রিলে নির্বাচনের যে ঘোষণা সরকারের পক্ষ দিয়েছে, সেখান থেকে সরকার সরে এসেছে? উত্তরে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, যৌথ ঘোষণায় এ ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে। আপনারা শুনেছেন, যদি সকল কাজ আমরা সময় মত করতে পারি এবং বিচার ও সংস্কারের পর্যাপ্ত অগ্রগতি হয়, তাহলে নিশ্চয়ই সেটি করা যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে আমির খসরী মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে আমি একটু এড করি, মিটিংটা প্রথমে আমাদের যে ডেলিগেশন, আমাদের সাথে হয়েছে এবং পরবর্তীতে ওয়ান টু ওয়ান ওনারা দুইজনে দীর্ঘ সময় আলোচনা করেছেন।
আলোচনায় বিএনপি সন্তুষ্ট কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আমির হোসেন মাহমদু চৌধুরী বলেন, নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট। আমরা তো বলেছি, নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনের পরে দেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমরা সবাই সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
মন্তব্য