গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের দু’শতাধিক কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা বুধবার পর্যন্ত পরিশোধ করেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ। জেলার দুই হাজার ৭২টি কারখানার অবশিষ্ট ১৮৩৪ কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার জানান, গাজীপুর জেলায় দুই হাজার ৭২টি কারখানা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বুধবার সকাল পর্যন্ত বিজিএমইএ’র ৮৩০টির মধ্যে ৩৫১টি, বিকেএমইএ’র ১৩৮টির মধ্যে ৪১টি, বিটিএমইএ’র ১২২টির মধ্যে ৩৬টি এবং অন্যান্য ৯৮২টি কারখানার মধ্যে ২১০টি কারখানাসহ মোট ৬৩৮টি কারখানা খোলা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত জেলার এক হাজার ৮৩৪টি কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ২৩৮টি কারখানার শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনাদি নানা অজুহাতে এ পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়নি। তিনি আরো জানান, তবে জেলায় এ পর্যন্ত কোন শ্রমিকের দেহে করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়নি।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের এসপি মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, বিভিন্ন অজুহাতে কারখানা মালিকরা শ্রমিক-স্টাফদের বকেয়া বেতন-ভাতা না দেয়ার কারণে করোনা সংক্রমণরোধে ঘোষিত লক ডাউন উপেক্ষা করে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ ও আন্দোলন করছে। আবার কিছু কারখানা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সামনে ঈদ এসব কারখানা খোলার দাবিতেও শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে। তারা তাদের এসব দাবি আদায়ে নানা কর্মসূচী দিচ্ছে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার জানান, গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া এলাকার স্টাইলিশ গার্মেন্টস কারখানাটি গত ৩১ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্টাইলিশ গার্মেন্টস কারখানাটি ১এপ্রিল হতে লে-অফ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। লে-অফ শেষে কারখানাটি কবে নাগাদ খোলা হবে তা ঘোষণা দেয়নি মালিক পক্ষ। কারখানা বন্ধ ঘোষণার সময় কারখানার কিছু শ্রমিককে তাদের পাওনা বেতন ভাতাদি পরিশোধ করা হয়নি। তারপরও আমরা শ্রমিক, শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক অসন্তোষ থামিয়ে রেখেছি। কিন্তু বকেয়া বেতন-ভাতার দাবি দূরণ না হলে তাদের কতদিন এভাবে বেতনের আশ্বাস দিয়ে থামিয়ে রাখতে পারব বুঝতে পারছিনা।
স্টাইলিশ কারখানার শ্রমিকদের দাবী, কারখানার মালিক পক্ষ সরকার ঘোষিত প্রণোদনার সুবিধা নেওয়ার জন্য ওই হঠাৎ কারখানাটি লে-অফ ঘোষণা করে।
গাজীপুর মহানগরীর ছয়দানা হারিকেন এলাকার বিএইচএমএল সোয়েটার কারখানার শ্রমিকদের মার্চের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়নি। বুধবার ওই বেতন প্রদানের পূর্ব নির্ধারিত তারিখ থাকলেও দুপুর পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়নি। কারখানার মালিক রাজিউল হাসান বলেন, প্রণোদণার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে শ্রমিকদের কাছে পৌছে যাবে। কিন্তু কিছু প্রক্রিয়াগত কারণে তা বিলম্ব হচ্ছে। ইতোপূর্বে তিনি নিয়মিতই বেতন পরিশোধ করেছেন বলে জানান। তিনি বলেন এই করোনা সংকটে পড়ে বেতন বকেয়া পড়েগেছে।
বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী সাংবাদিকদের জানান, বকেয়া বেতন-ভাতার জন্যই মূলত কারখানার শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষোভ করছে। শ্রমিক ভাই-বোনেরা কষ্টে আছে। তাদের বেতন দিয়ে সংসার খরচ, বাড়ি ভাড়া দোকান বাকি পরিশোধ করতে হয়। এখন তাদের হাতে টাকা নাই। তাই তারা রাস্তায় নেমেছে। করোনার কারণে অনেকেরই রপ্তানীর অর্ডার আটকে গেছে। বিশেষ করে ছোট কারখানাগুলো খুবই দূর্দিনের মধ্যে আছে, অর্থসংকটে পড়েছে। তাই তাদের শ্রমিকদের বেতন আটকে গেছে। আমাদের বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ নেতৃবৃন্দ বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ সপ্তাহে না পারলেও আগামী সপ্তাহে বকেয়া বেতনের ব্যাপারটা সেট হবে। আগামী রবিবার থেকে তারা কারখানাগুলোর বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ শুরু করবে। এরপর আর পোশাক কারখানাগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষ থাকবে না বলে মনে করেন তিনি। আমরা সরকারকে পরামর্শ দিয়েছি যারা আমাদের সদস্য নয় তাদের আমাদের সদস্য নয় এমন কারখানার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
সালাম মুর্শেদী আরো বলেন, অধিকাংশ কারখানাগুলো আমাদের সংগঠণের সদস্য নয়। ননমেম্বার সদস্যদের দায়িত্ব আমরা নেব না। সম্প্রতি আমরা সরকারকে (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বানিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে) পরামর্শ দিয়েছি বিজিএমইএ, বিকেএমইএ বা বিটিএমইএ’র বাইরে যে সকল পোশাক কারখানা আছে সে কারখানাগুলো বন্ধ করে দিতে। এদের কারণেই টোটাল গার্মেন্টস সেক্টরে বদনাম হয় এবং আমাদের উপর দায়িত্ব চলে আসে।