গণবাণী ডট কম:
জাতিসংঘের একটি কমিটি বাংলাদেশের পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাবের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠনের যে সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশ সরকার তা নাকচ করে দিয়েছে। খবর : বিবিসি।
“প্রতিষ্ঠান হিসেবে র্যাব বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি কোন বাহিনীর বিরুদ্ধে তদন্তের সুপারিশ গ্রহণযোগ্য নয়”-বিবিসিকে শনিবার বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ।
তবে তিনি বলেন, এসব বাহিনীর কোন সদস্যের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এলে তা তদন্ত করা হচ্ছে।
জুলাই মাসের শেষ দিকে জেনেভাতে জাতিসংঘের নির্যাতন-বিরোধী কমিটিতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যে আলোচনা হয় - সেখানে বিশেষ করে র্যাব সহ নিরাপত্তা বাহিনীসমূহের হাতে নির্যাতন ও গুমের অভিযোগ নিয়ে বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সেই আলোচনার ভিত্তিতে জাতিসংঘের ঐ কমিটি গত শুক্রবার বাংলাদেশ সরকারের জন্য ৭৭টি সুপারিশ প্রকাশ করে।
জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির সুপারিশ মূলত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সদস্যদের হাতে নির্যাতন, নির্বিচারে গ্রেফতার, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে জাতিসংঘের কমিটি সুপারিশ করে যে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করা হোক। কিন্তু আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রতিষ্ঠান হিসেবে র্যাবের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে না।
“আমি একটা স্পষ্ট জবাব দিতে চাচ্ছি। কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ব্যক্তির ব্যাপারে যদি কোনো অপরাধের অভিযোগ আসে, তবে প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া বিভাগীয় তদন্তও করা হবে বা হচ্ছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট একটা বাহিনীর বিরুদ্ধে তদন্ত করবো কিনা, সে ব্যাপারে আমার স্পষ্ট জবাব হচ্ছে, না”-বলেন তিনি।
“তার কারণ হলো, বাহিনী তার কাজ সঠিকভাবে করে যাচ্ছে। কোন বাহিনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোনো অপরাধ করে না। কিন্তু বাহিনীর কোনো ব্যক্তি যদি এর ব্যত্যয় ঘটায়, তখন সেটা দেখা যাবে।”
কিন্তু একটা বাহিনীর বিরুদ্ধে যখন নির্যাতন বা গুমের অভিযোগ বার বার ওঠে, তখন সে বাহিনীর বিরুদ্ধে তদন্তের প্রশ্ন আসে কিনা?
এই প্রশ্নে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে, কোনো বাহিনী বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই ঢালাওভাবে অভিযোগ দেয়াটা ঠিক নয়। এমন অবস্থানের ব্যাপারে যুক্তি হিসেবে আইনমন্ত্রী কয়েকটি ঘটনায় র্যাবের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়কে তুলে ধরেন।
তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তাকে বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়কে।
তবে জাতিসংঘের কমিটি নারায়ণগঞ্জের ঘটনাকে ‘ব্যতিক্রমী ঘটনা’ হিসেবে বলেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর হেফাজতে নির্যাতন এবং মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে তদন্তের ব্যাপারেও জাতিসংঘের কমিটি একটি কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে। এ ব্যাপারেও সরকার রাজি নয়। এ ব্যাপারে হেফাজতে নির্যাতন বন্ধের আইনের কথা তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী ।
এছাড়া বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়েও সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের কমিটি।
আইনমন্ত্রী বলেছেন, “ওনারা যেটা দিয়েছেন, আমাদের বক্তব্যের মধ্যে তার সব কিছুই আছে। আমার যেটা ধারণা, দু:খের সাথে বলতে চাই যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সুপারিশগুলো বোধহয় ওনারা আগেই তৈরি করে রেখেছিলেন। তার কারণ হচ্ছে যে অনেক জায়গায় আমি জবাব দেয়ার পরও ঐগুলি সুপারিশের মধ্যে আসেনি।”
জাতিসংঘের এই কমিটি যখন গত ৩০ এবং ৩১শে জুলাই জেনেভায় পর্যালোচনা সভা করেছিল, তাতে আইনমন্ত্রীর নেতৃত্বেই একটি প্রতিনিধি দল অংশ নিয়ে বাংলাদেশের বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন।
জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সেখানে বক্তব্য তুলে ধরলো। মানবাধিকার কর্মী এবং আইনজীবী সারা হোসেন বলছিলেন, সরকার সুপারিশগুলো গুরুত্ব দেবে বলে তারা বিশ্বাস করতে চান।
“তারা যদি আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন, তাহলে অবশ্যই তাদের সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করা উচিত। এখন ওনারা কতটুকু করবেন, সে ব্যাপারে আস্থা রাখতে চাই।কতটা আস্থা রাখা সম্ভব বলতে পারছি না।”