গণবাণী ডট কম:
রাষ্ট্রচিন্তার লেখক মুসতাক আহমেদ রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে বন্ধি অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। গাজীপুর জেলা প্রশাসন দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করেছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম তরিকুল ইসলাম এ খবর নিশ্চিত করেন।
জেলা প্রশাসক জানান, গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী মুশতাক আহমেদের মৃত্যুবরণ করেছেন। এঘটনা তদন্তের জন্য দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন—গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াসিউজ্জামান চৌধুরী ও উম্মে হাবিবা ফারজানা।
জানা যায়, গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে বন্ধি ছিলেন রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার রাষ্ট্রচিন্তার লেখক মুসতাক আহমেদ। ৫৩ বছর বয়সী মুশতাক বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন৷ পরে দ্রুত তাকে শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেলে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মুশতাক আহমেদ অনলাইনে লেখালেখি করতেন৷ এসব লেখার কারণে গত বছরের ৬ মে লালমাটিয়ার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। একই সময় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়৷ অন্যরা হলেন, মুশতাক আহমেদ, দিদারুল ইসলাম ও মিনহাজ মান্নান।
পরদিন ‘সরকার বিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় র্যা ব বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় এই চারজনসহ মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকিরা হলেন, প্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল ও সাহেদ আলম, সায়ের জুলকারনাইন, আশিক ইমরান, ফিলিপ শুমাখার, স্বপন ওয়াহিদ, ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, কার্টুনিস্ট কিশোর তার ‘আমি কিশোর’ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেশের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনামূলক কার্টুন-পোস্টার পোস্ট করতেন। মুশতাক তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কিশোরের সেসব পোস্টের কয়েকটি শেয়ার করেছিলেন। অভিযুক্ত ১১ জন দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জাতির জনক, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, মহামারি করোনাভাইরাস সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়। গ্রেফতার হওয়া কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, মুসতাক আহমেদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আই অ্যাম বাংলাদেশি নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, মহামারি করোনা, সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির’ অভিযোগ আনা হয়।
গত সেপ্টেম্বরে এই মামলায় গ্রেফতার মিনহাজ মান্নান ও দিদারুল ভূঁইয়া জামিনে মুক্তি পান। কার্টুনিস্ট কিশোর ও লেখক মুসতাকের জামিন হয়নি। ছয় বার মুসতাকের জামিন আবেদন নাকচ হয়। কারাগারে থাকা কার্টুনিষ্ট কিশোরও অসুস্থ্য বলে জানিয়েছেন তার বড় ভাই আহসান কবীর। গত ১১ জানুয়ারি রমনা থানা পুলিশ কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, লেখক মুসতাক আহমেদ ও রাষ্ট্রচিন্তার কর্মী দিদারুল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়।