গণবাণী ডট কম:
বিচার ব্যবস্থা আধুনিকায়নের লক্ষ্যে গাজীপুরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে আধুনিক বিচার ভবন। ইতিমধ্যে প্রকল্পটি প্রি একনেকে অনুমোদন হয়েছে। এখন এটি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী লাগোয়া গাজীপুরে প্রায় ৬০ লাখের মানুষের বাস। এখানে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অধীনে ৫টি আদালত ও চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অধীনে ১২টি আদালতে বিচার কাজ পরিচালিত হচ্ছে। এসব আদালতের জন্য পর্যাপ্ত কক্ষ ও জায়গা না থাকায় বিচারকাজ মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও জেলা জজকোর্ট আছে। শ্রম আদালত ভাড়া বাসায় কাজ করছে। অনেক আদালত টিনশেড বিল্ডিং করে সেখানে এজলাস বসিয়ে বিচার কাজ করতে হচ্ছে। এসব আদালতে গরমে অত্যধিক গরম আবার বর্ষায় বৃষ্টি পড়ে। জায়গা কম থাকায় এসব আদালতের বিচারক, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের অনেকের বসারও জায়গা থাকে না। এতে বিচার কাজে যুক্ত ও এবং বিচার প্রার্থী সবাইকে অবর্ণনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হয়। প্রতিনিদিন হাজার হাজার মানুষ বিচারের আশায় আদালতে আসেন। কিন্তু তাদের প্রয়োজনীয় জায়গার অভাবে কোথাও বসার জায়গাও দেয়া সম্ভব হয় না। ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে বিচার কাজের জন্য কষ্ট করতে হয়।
সূত্র আরো জানা যায়, ইতিমধ্যে দেশের ৬৩টি জেলার মধ্যে ৪০টি জেলায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত দৃষ্টি নন্দন ভবন নির্মাণ সমাপ্ত হয়েছে। কিন্তু গাজীপুরেই প্রয়োজন থাকা সত্বেও এখনো এ ধরণের ভবন নির্মাণ করা হয়নি। এজন্য গাজীপুরের বর্তমান চীফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ মোঃ কায়সারুল ইসলাম এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন হচ্ছে।
এ লক্ষে গাজীপুর মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র রাজবাড়ীর পূর্বপাশে এবং বর্তমান জজকোর্ট আদালত ভবনের সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে গণপূর্ত অধিদপ্তরের পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ কয়েকটি ভবন অপসারণ করে সে জায়গাটি এই প্রস্তাবিত ভবন নির্মাণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। শনিবার সকালে নির্ধারিত স্থানে একটি সাইন বোর্ড টানানো হয়েছে।
গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন জানান, গাজীপুর মহানগরীর জজ কো্র্ট ভবন সংলগ্ন কোয়ার্টার মাঠে গণপূর্ত অধিদপ্তরের বেশকিছু জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত কোয়াটার ভবন রয়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ পরিত্যক্ত ভবনগুলো অপসারণ করে সেখানে ১ দশমিক ৫ একর জমির উপর প্রস্তাবিত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ করা হবে। গণপূর্ত বিভাগের জায়গাটি আইন বিভাগের অধীনে হস্তান্তর করা হবে। এটি আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়িত হবে।
তিনি আরো বলেন, এ লক্ষ্যে দুটি বেসমেন্টসহ ২০ তলা ভবন নির্মাণের জন্য ২৯৫ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রকল্পটি আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর প্রি-একনেক সভায় অনুমোদিত হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নতুন এ ভবনটিতে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অধীনের সকল বিচারকগণ ওই ভবনে স্থানান্তরিত হবে। নতুন ভবনটিতে বিচারকগণের বিচারালয়, খাস কামড়া, বিচার আদালত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কক্ষ থাকবে। এছাড়া বিচার প্রার্থীদের অপেক্ষার জন্য নির্ধারিত কক্ষ, বসার জন্য স্থান, তাদের প্রস্রাব পায়খানার জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে, আসামী রাখার জন্য আলাদা হাজতখানা থাকবে। বিচারকদের সভাকক্ষ থাকবে।
তিনি আরো বলেন, একনেক সভায় অনুমোদনের পর এই প্রকল্পের ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হবে এবং আশা করা হচ্ছে, পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে এই ভবন নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে আইন ও বিচার বিভাগের নিকট হস্তান্তর করা সম্ভব হবে।
গাজীপুর বারের বিশিষ্ট আইনজীবী ও গাজীপুর নাগরিক ফোরামের সভাপতি অ্যাডঃ মোঃ জালাল উদ্দিন বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে গাজীপুরের বিচার ব্যবস্হায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। আইনজীবী, বিচারক, বিচার প্রার্থীদের একই ভবনে সেবা পাওয়া যাওয়া যাবে। বর্তমানে ভবন ও জায়গার অভাবে বিভিন্ন আদালত বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত। এতে করে সবারই একটি হয়রানী পোহাতে হয়। স্থান সংকুলান না হওয়ায় সবাইকে নানা সমস্যা পোহাতে হয়। নতুন ভবন হলে সব আদালত এক ছাতার নীচে আসলে, আশাকরি এই সমস্যা দূরীভূত হবে।
তিনি আরো বলেন, দেশের অন্যান্য জেলায় এই ভবন অনেক আগেই হয়েছে। গাজীপুরে সঠিক নেতৃত্বের অভাবে এটা এতদিন হয়নি। বর্তমান সিএমএম মিঃ মোঃ কায়সারুল ইসলাম ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই দূরুহ কাজটি সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। গাজীপুর নাগরিক ফোরামের পক্ষ থেকে তাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।