গণবাণী ডট কম:
সারাদেশে যত মানুষ আছে তার ৩১ ভাগের একভাগ মানুষ গাজীপুর জেলায় বসবাস করে। দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে মহিলার সংখ্যা বেশী হলেও গাজীপুর জেলায় মোট জনসংখ্যার মধ্যে মহিলার তুলনায় পুরুষের সংখ্যা বেশী। এখানে শিক্ষায়ও পিছিয়ে পড়েছে নারী। জেলায় পল্লী এলাকার তুলনায় শহরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বেশী। জেলায় খানার সংখ্যা বাড়লেও খানা অনুপাতে মানুষের সংখ্যা কমেছে, অর্থাৎ পরিবারগুলো ছোট হয়ে যাচ্ছে। তবে, জনসংখ্যার ঘনত্ব বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন। সদ্য সমাপ্ত জনশুমারী ও গৃহগণনার প্রাথমিক ফলাফলে এমনসব তথ্যই ওঠে এসেছে।
২০২২ সালের জনশুমারীর তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর জেলার মোট জনসংখ্যা ৫২ লক্ষ ৬৩ হাজার ৪৭৪ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ২৭ লক্ষ ৩৪ হাজার ৮৬ জন এবং মহিলা ২৫ লক্ষ ২৪ হাজার ৮০৫ জন। জেলায় হিজড়া জনগোষ্ঠী রয়েছে ৫৫৯ জন। গাজীপুর জেলায় জনসংখ্যার লিঙ্গ অনুপাত ১০৮ দশমিক ২৯ জন। যেখানে সারাদেশে লিঙ্গ অনুপাত ৯৮ দশকি শুন্য ৪ জন।
শুমারীর ফলাফলে দেখা যায়, দেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ১৭ লক্ষ ১২ হাজার ৮২৪ জন এবং মহিলা ৮ কোটি ৩৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ২০০৬ জন। দেশে হিজড়া জনগোষ্ঠী ১২ হাজার ৬২৯ জন। এ তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, দেশে মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে মহিলার সংখ্যা বেশি হলেও গাজীপুর জেলায় মোট জনসংখ্যার মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি।
জনশুমারির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, জেলায় খানার সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু খানা অনুপাতে মানুষের সংখ্যা কমেছে। ২০১১ সালের শুমারীতে জেলায় মোট জনসংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ ৩ হাজার ৯১২ জন। তখন খানার সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ২৬ হাজার ৪৫৮টি এবং খানা প্রতি মানুষের সংখ্যা ছিল ৪ দশমিক ১২ জন। ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী জেলায় মোট খানার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৫ লক্ষ ৭৯ হাজার ৮৪৪টি। খানার সংখ্যা বাড়লেও খানাপ্রতি মানুষের সংখ্যা কমেছে। জেলায় বর্তমানে খানা প্রতি মানুষের সংখ্যা ৩ দশকি ৩৩ জন। আর জেলায় প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ২ হাজার ৯১৪ জন। যেখানে জাতীয়ভাবে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১ হাজার ১১৯ জন। ২০১১ সালে জেলায় জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১ হাজার ৮৮৪ জন। জেলায় বাসগৃহের মোট সংখ্যা ৮ লক্ষ ৩৪ হাজার ৫৭৭টি। তার মধ্যে পল্লী এলাকায় বাস গৃহের সংখ্যা ৪ লক্ষ ৫৮ হাজার ৩৫৬টি এবং শহর এলাকায় বাসগৃহের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৭৬ হাজার ২১১টি।
জনশুমারিতে দেখা যায়, জেলায় বসবাসকারী মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৪ দশমিক ২৩ শতাংশ মানুষ শহর এলাকায় বসবাস করেন। জেলার মোট জনসংখ্যার মধ্যে পল্লী এলাকায় বসবাস করেন ১৮ লক্ষ ৭৮ হাজার ৭১৮ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৯ লক্ষ ৪৮ হাজার ২৩৬ জন এবং মহিলা ৯ লক্ষ ৩০ হাজার ৩৫১ জন। পল্লী এলাকায় বসবাসকারী হিজড়া সংখ্যা ১৩১ জন। অপরদিকে গাজীপুর জেলার অধিবাসীদের মধ্যে শহরে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যা ৩৩ লাখ ৮০ হাজার ৭৭২ জন। তাদের মধ্যে শহরে বসবাসকারী পুরুষ ১৭ লক্ষ ৮৫ হাজার ৮৫০ জন। মহিলা ১৫ লক্ষ ৯৪ হাজার ৪৫৪ জন। শহরে বসবাসকারী হিজড়া সংখ্যা ৪৬৮ জন। শুধুমাত্র গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জনসংখ্যা ২৬ লাখ ৭৪ হাজার ৬৯৭ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১৪ লক্ষ ১৫ হাজার ৬৬৯ জন এবং মহিলা ১২ লক্ষ ৫৮ হাজার ৬৩৩ জন আর মহানগরীতে হিজড়ার সংখ্যা ৩৯৫ জন। সিটি এলাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব ৮ হাজার ১১৭ জন।
জনশুমারীর তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গাজীপুর জেলায় ১ লক্ষ ১৭ হাজার ৩৯৪ জন মানুষ বস্তি এলাকায় বসবাস করেন। আর জেলায় ভাসমান জনসংখ্যা মাত্র ৬৩৪ জন। জরিপ বলছে. বস্তি এলাকায় খানার সংখ্যা ৪১ হাজার ২৬৬টি এবং ভাসমান থানার সংখ্যা ৫৯২টি। বস্তি ও ভাসমান জনসংখ্যা ব্যতীত অন্যান্য খানার সংখ্যা ১৫ লক্ষ ৪৫ হাজার ৪৪৬টি। বস্তি ও ভাসমান জনসংখ্যা ব্যতীত অন্যান্য জনসংখ্যার পরিমাণ ৫১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৪৪৬ জন।
জনশুমারীর তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর জেলায় বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা ৯ হাজার ৭৭০ জন। তাদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৫ হাজার ১৫ জন এবং মহিলার সংখ্যা ৪ হাজার ৭৫৫ জন। এ জেলায় সারাদেশের মোট ক্ষুদ্র দৃষ্টি গোষ্ঠীর মধ্যে শুন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ বসবাস করে।
জনশুমারি অনুযায়ী, গাজীপুর জেলায় বসবাসকারীদের মধ্যে ৯৪ দশমিক ৪০ শতাংশ মুসলমান, ৫ শতাংশ হিন্দু, শুন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বৌদ্ধ, শুন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং শুন্য দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছেন।
জনশুমারীর তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর জেলায় সাক্ষরতার হার ৮১ দশমিক ২৫ শতাংশ। জেলায় পুরুষ সাক্ষরতার হার ৮৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং মহিলাদের সাক্ষরতার হার ৭৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। সারাদেশের তুলনায় গাজীপুরে সাক্ষরতার হার ৫৯ দশমিক ১১ শতাংশ। যেখানে সারাদেশের সাক্ষরতার হার ৫৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
জনশুমারীর বিষয়ে গাজীপুর পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপ পরিচালক সোনিয়া আরেফিন বলেন,জনশুমারি ও গৃহগননা ২০২২ এর প্রাথমিক প্রতিবেদন আমরা হাতে পেয়েছি। শুমারী পরবর্তী যাচাই (পিইসি) এবং নমুনা শুমারী সম্পন্ন হলে জেলার ইউনিয়ন, মৌজা এমনকি গ্রাম/মহল্লা ভিত্তিক সকল তথ্য পাওয়া যাবে। আশা করা যায়, এসব তথ্য এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।