গণবাণী ডট কম:
মাত্র ৯ বছরে ভারতে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে বর্তমানে প্রায় তিন হাজারে পৌঁছেছে। ভারতে সবশেষ বাঘ শুমারির ফলাফল প্রকাশ করে সে দেশের সরকার সোমবার দাবি করেছে ভারত সরকার।
বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতকে বাঘেদের জন্য ‘বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বাসভূমি’ বলেও বর্ণনা করেছেন। বলিউডের ব্লকবাস্টার সিনেমার নাম ধার করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এদিন বলেন ‘এক থা টাইগার’ থেকে শুরু করে ভারত এখন ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’ পর্বে পৌঁছে গেছে।
এই টাইগার সেন্সাসের ফলাফল প্রত্যেক ভারতীয় ও পরিবেশপ্রেমীকে গর্বিত করবে বলে জানিয়ে তিনি ঘোষণা করেন, “২০১০ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গ সম্মেলনে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যে দ্বিগুণ করা হবে বলে যে টার্গেট ধরা হয়েছিল, ভারত সেই লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়েছে চার বছর আগেই।” খবর: বিবিসি।
তবে, সম্প্রতি যেভাবে ভারতের নানা প্রান্তে বনভূমি সঙ্কুচিত হচ্ছে এবং মানুষ ও বাঘের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটছে, তাতে বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞরা অনেকেই এই বাঘশুমারির পরিসংখ্যান নিয়ে সন্দিহান। বলা হচ্ছে, বাঘের সংখ্যা বেড়েছে সুন্দরবনেও - যে অরণ্য ছড়িয়ে আছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের দুপাশেই।
কিন্তু মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতে বাঘের সংখ্যা কীভাবে এক-তৃতীয়াংশ বেড়ে ২৯৬৭তে পৌঁছে গেল? বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ভারতের বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বিবিসিকে বলছিলেন, “খুব যতেœর সঙ্গে পুরো বিষয়টি পরিচালনা করা হয়েছে।”
“পোচিং বা চোরাশিকারও আগের চেয়ে অনেক কমানো গেছে।”
“তা ছাড়া আমাদের বনবিভাগের কর্মকর্তাদের আবেগও বিষয়টার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।”
“সারা বিশ্বে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের তিন-চতুর্থাংশ ভারতেই, কাজেই এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা আমাদেরই নিতে হবে-এটা তারা উপলব্ধি করেছেন।”
ভারতের সুপরিচিত বাঘ গবেষক গৌরী মাওলেখি কিন্তু মনে করেন, এই সেন্সাস ডেটা বা বাঘশুমারির পরিসংখ্যান ফুলপ্রুফ নয় এবং এতে নানা ত্রুটির অবকাশ আছে।
বিবিসিকে নানা দৃষ্টান্ত দিয়ে তিনি বলছিলেন, “গত কয়েক বছরের মধ্যে যেখানে ভারতে বহু টাইগার করিডর নষ্ট হয়েছে, মানুষখেকো বাঘ অভনি-র মতো বাঘ শাবকসহ মারা পড়েছে কিংবা ছত্তিশগড় ও ঝাড়খন্ডে বাঘের বিস্তীর্ণ আবাসভূমি ধ্বংস হয়েছে - সেখানে এই তথ্য অবশ্যই সন্দেহ উদ্রেক করে।”
“করবেটে তো গুজ্জররা কোর ফরেস্টকেই হাজার হাজার মহিষের চারণভূমি বানিয়ে ফেলেছে।”
“তাদের জীবিকার সঙ্গে সামান্যতম ‘কনফ্লিক্ট’ হলে বাঘ মারতেও দ্বিধা করছে না - সেখানে কোথাও একটা মারাত্মক ভুল হচ্ছে বলেই আমার বিশ্বাস।”
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় অবশ্য সুন্দরবনের দৃষ্টান্ত দিয়ে বলছিলেন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে এবারের বাঘ গণনাকে প্রায় নিখুঁত করে তোলা সম্ভব হয়েছে।
তার কথায়, “সুন্দরবনে ২০১৪ সালে আমাদের দিকে ৭০-টার মতো বাঘ ছিল, এখন সেটা বেড়ে ৮৬ হয়েছে। আর সীমান্তের দুদিক ধরলে গোটা অঞ্চলটায় ১৮২ কি ১৮৪টার মতো বাঘ আছে বলে আমাদের সার্ভেলেন্সে ধরা পড়েছে।”
“বাঘের গণনা দুদিক থেকেই হয়, বাংলাদেশ যেমন করে - তেমনি আমরাও করি। আর এক একটা বাঘ যেহেতু খুব লম্বা পথ পাড়ি দেয় তাই সেখানে স্যাটেলাইট ম্যাপিংয়ের সাহায্যও নেওয়া হয়েছে।
“যেখানেই বাঘের গতিবিধি আছে বলে মনে হয়েছে, আমরা সেখানে প্রচুর সংখ্যায় ক্যামেরা লাগিয়েছি।”
“সেই সব ক্যামেরায় তিন লক্ষেরও বেশি ছবি এসেছে - আর মোট যে হাজার তিনেক বাঘ, তার আশি শতাংশেরই কিন্তু আসল ছবি কিন্তু আমরা ধরতে পেরেছি।”
“বাঘের গায়ের ডোরা দাগ পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা হয়েছে যাতে একই বাঘকে দুবার গোনা না-হয়। আধুনিক প্রযুক্তিই এটাকে সম্ভব করেছে”, বলছিলেন বাবুল সুপ্রিয়।
ভারতের বিখ্যাত টাইগার কনজার্ভেশন অ্যাক্টিভিস্ট বেলিন্ডা রাইট-ও বাঘের সংখ্যা বাড়াকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
তবে বাঘ বাঁচাতে সরকারের যথেষ্ঠ রাজনৈতিক সদিচ্ছা আছে কি না তা নিয়ে তিনি এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নন।
মিস রাইট বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “যে দিন সরকার এই টাইগার সেন্সাসের চমকপ্রদ ফল প্রকাশ করছে, সেই একই দিনে কিন্তু তেরোটি রেল প্রকল্পকেও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে যেগুলোতে বন বিভাগের ছাড়পত্র লাগবে না।”
“আর এই রেললাইনগুলো সব যাবে বাঘের বাসভূমি বা টাইগার করিডর চিরে।”
“তা ছাড়া ভারতে বন্যপ্রাণী বিষয়ক সরকারি সংস্থাগুলোও তাদের গবেষণা বা তথ্য অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করে না।”
“সেগুলো নিরপক্ষভাবে যাচাই করারও সুযোগ নেই - সেটাও একটা বড় দুশ্চিন্তার বিষয়”, বলছিলেন বেলিন্ডা রাইট।
সুতরাং এই টাইগার সেন্সাস নিয়ে পরিবেশবিদদের সন্দেহ ও সংশয় কিছুটা থাকছেই।
আর প্রধানমন্ত্রী মোদীর বলছেন, ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশেরই জাতীয় পশু যেখানে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার-বাঘ বাঁচানোর এই লড়াইটা লড়তে হবে দুদেশকে মিলেই।