গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন আদেপাশা এলাকায় প্রবাসীর পাঠানো স্বর্ণালংকার ও টাকা লুট করতে প্রবাসীর বৃদ্ধা মা খুন হওয়ার দেড় বছর পর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বাসার কাজের বুয়ার ছেলেসহ এ ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেফতারের পর গতকাল বৃহস্পতিবার তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধি দিয়েছে।
নিহতের নাম মোসা: সাহেরা বেগম (৬০)। তিনি গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন আদেপাশা উত্তর পাড়ার মৃত আঃ ছাত্তারের মেয়ে।
গ্রেফতার আসামীরা হলো, গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া পশ্চিম পাড়া (মাটির মসজিদ) এলাকার মোঃ বাচ্চু মিয়া মোঃ আল আমিন (২৬) এবং গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন আদেপাশা উত্তর পাড়ার পিতা-সফিজ উদ্দিনের ছেলে মোঃ মামুনুর রশীদ (৩৮)। তাদের মধ্যে আল আমিনকে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এবং মামুনুর রশীদকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে এসব তথ্য জানান।
তিনি আরো জানান, নিহত সাহেরা বেগম তার সৌদী প্রবাসী ছেলে বাবুলের মেয়ে সারা মনি (০৩) কে সাথে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন আদেপাশা উত্তর পাড়া এলাকায় নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। ২০২০ সালেল গত ২৫ আগস্ট দুপুরে তার প্রবাসী ছেলে মাকে মোবাইল ফোন পায়নি। পরে প্রতিবেশীদের বিষয়টি জানিয়ে বাড়ীতে খোজ নেয়ার অনুরোধ করলে প্রতিবেশীরা বাড়িতে গিয়ে সাহেরা বেগমকে ডাকাডাকি করে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে বাড়ির মেইন গেট তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পায়। পরবর্তীতে তার ছেলের অনুরোধে তারা মেইন গেটের তালা ভেঙ্গে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে সারা মনিকে কান্নারত অবস্থায় এবং বাড়ির উত্তর-পশ্চিম কোনের রুমের ভিতরে ভিকটিমের মৃতদেহ গলায় গামছা পেঁচানো এবং নাক মুখ দিয়ে হালকা রক্ত বের হওয়া অবস্থায় দেখতে যায়। পরে খবর পেয়ে বাসন থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এ সংক্রান্তে নিহতের মেয়ে পারভীন আক্তার বাদী হয়ে বাসন থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
মামলাটি বাসন থানা পুলিশ প্রায় এক বছর তদন্ত করে। হত্যার রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় মামলাটি তদন্তাধীন অবস্থায় মামলাটি পিবিআই গাজীপুরের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
তিনি আরো জানান, পরে তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত আসামীদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, সাহেরা বেগমের একমাত্র ছেলে বাবুল স্ত্রীসহ বিদেশে থাকেন। বাবুলের দ্বিতীয় স্ত্রীর কন্যা সন্তান সারা মনি (০৩) বৃদ্ধা মা বাড়িতে বসবাস করতেন। তাদের বাসায় ফরিদা বেগম নামে একজন কাজের বুয়ার কাজ করতেন। উক্ত কাজের বুয়ার ছেলে আল আমিন সালেহার বাসায় মাঝে মাঝে যাতায়াত করতেন। সেই সুবাদে ভিকটিম সাহারা বেগম আল আমিনকে দিয়ে বিভিন্ন কাজকর্ম করাতেন। একারণে আল আমিন জানতে পারে সালেহার ছেলে মার জন্য স্বর্ণালংকার ও টাকা পাঠিয়েছে। এসব স্বর্ণাংলকার ও টাকা লুট করার জন্য অপর আসামীর সহায়তায় ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট আসামী মামুন বাড়ীতে ঘরের ভিতরে ঢুকেই ভিকটিমের গলায় গামছা পেচিঁয়ে নীচে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে ভিকটিম জ্ঞান হারিয়ে ফেললে আসামী মামুন ঘরের ভিতরের আলমারি হতে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে মেইন গেট বাহির হতে তালাবদ্ধ করে দিয়ে উভয় আসামী ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ঘটনার সময় অপর আসামীকে গেইন গেটে পাহাড়ায় ছিল। এজন্য আসামী মামুন অপর আসামী আল আমিনকে ১০ হাজার টাকা দেয়।
এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন যে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ভিকটিম সাহারা বেগম তার ৩ বছরের নাতনী সারা মনিকে নিয়ে ঘটনাস্থলের বাড়িতে বসবাস করতেন। ভিকটিম এর একমাত্র ছেলে দেশে বাইরে থাকেন এবং মায়ের জন্য নিয়মিত স্বর্ণালংকার ও টাকা পয়সা সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র পাঠাতেন। এই বিষয়টি জানতে পেরে আসামীগন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিম এর বাড়িতে প্রবেশ করে ভিকটিমের গলায় গামছা পেচিঁয়ে শ্বাষরোধ করে হত্যা করে নগদ টাকা সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এ সংক্রান্তে আসামী আল আমিন গতকাল বৃহস্পতিবার বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।