গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর বড় ভাই জামিল হাসান দুর্জয়ের এক কর্মীকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। শনিবার বিকেলে গাজীপুর সদর উপজেলার একটি রিসোর্টে দলীয় নেতা কর্মী ও সম্ভাব্য নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিয়ে সমাবেশ আয়োজন করলে খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ সময় নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ৫ ধারা ভঙ্গের দায়ে তাকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন, গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) ইশতিয়াক মজনুন ইশতি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: মামুনুল করিম ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি আরো জানান, গাজীপুর সদর উপজেলাধীন সাবাহ্ গার্ডেন রিসোর্টে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জামিল হাসান দুর্জয় জনসমাবেশ আয়োজন করেন। এটি উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬ এর ৫ ধারার লংঘন। এজন্য ঐ প্রার্থীর এক কর্মী আক্তারুজ্জামোনকে ৪০ হাজার টাকা অর্থদন্ড দেয়া হয়।
নির্বাচনী আচরণ বিধির ধারা ৫ এ বলা হয়েছে, প্রচারণা সংক্রান্ত বিধান ৫ (১) কোন প্রার্থী বা তাহার পক্ষে কোন রাজনৈতিক দল, অন্য কোন ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০১৩ এর বিধি ২২ এর অধীন প্রতীক বরাদ্দের পূর্বে, জনসংযোগ এবং ডিজিটাল বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচার ব্যতীত, অন্য কোন প্রকারের নির্বাচনি প্রচার শুরু করিতে পারিবে না। (২) উপ-বিধি (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন প্রার্থী ৫ (পাঁচ) জনের অধিক কর্মী ও সমর্থককে সঙ্গে লইয়া জনসংযোগ করিতে পারিবেন না, এবং উক্তরূপ জনসংযোগকে কোনোভাবে পথসভা, মিছিল বা জনসভায় রূপান্তর করা যাইবে না”।
এদিকে, শ্রীপুর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী টুসির বড় ভাই জামিল হাসান দুর্জয় নিজ নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে গাজীপুর সদর উপজেলার একটি রিসোর্টে নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা করছেন, এমন খবর পেয়ে সেখানে তথ্য সংগ্রহ করতে যায় স্থানীয় সাংবাদিকরা। এসময় নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের প্রথমে ঢুকতে বাধা দেয়। পরে সাংবাদিকরা কৌশলে সেখানে প্রবেশ করে ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে চাইলে, তাদের বাধা দেয়া হয় এবং কয়েকজনের মোবাইল কেড়ে নেয়া হয়। পরে জয়দেবপুর থানা পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার শেষে বেরিয়ে আসার পর কয়েকজন সাংবাদিকরে সাথে সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীদের সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এসময় সেখানে উপস্থিত জয়দেবপুর থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) শাহাজাল ও মমিন হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করেন। পরে তারা সাংবাদিকদের সেখান থেকে নিরাপদে চলে আসার ব্যবস্থা করেন।
এর আগে গত ২১ এপ্রিল মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় আচরণবিধি লক্ষণের দায়ে জামিল হাসান দুর্জয়কে শোকজ করা হয়। শোকজ করেন নির্বাচনের সহকারী রির্টার্ণিং কর্মকর্তা ও শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন রাংসা।
নোটিশে বলা হয়, আপনি জনাব মোঃ জামিল হাসান, ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ এর শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, অদ্য ২১/০৪/২০২৪ খ্রিঃ রোজ রবিবার গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে ও চত্ত্বরের বাহিরে আনুমানিক বেলা ১১.১০ ঘটিকায় আপনার কর্মী সমর্থকগণ শোভাযাত্রা/শোডাউনসহ মিছিল করেন এবং কয়েকশ নেতাকর্মী নিয়ে এসেছেন তারা প্রার্থীর সমর্থনে স্লোগান দিয়েছেন এবং এতে আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে যা উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬, এর বিধি ১১ এর উপবিধি (২) এর সুস্পষ্ট লংঘন। উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ লংঘনের দায়ে কেন নির্বাচন কমিশনে আপনার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হবে না বা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে না তা এ নোটিশ প্রাপ্তির ২৪ ঘন্টার মধ্যে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা যথাযথভাবে প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো।
এ ঘটনার বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য মোঃ জামিল হাসান দুর্জয়কে মোবাইল ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।