গাজীপুর প্রতিনিধি:
গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএ এর যৌথ উদ্যোগে মহানগরীর শিববাড়ী-রাজবাড়ী-আমতলী সড়কের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণের লক্ষে তৃতীয় দিনের মতো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। তিনদিনে বিভিন্ন অপরাধে তাকওয়া পরিবহণের ৮টি বাস ডামপিং, ৫টি বাস ও ২টি কভার্ড ভ্যানকে জরিমানা এবং একটি বাসের চালককে ৭ দিনের কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
গাজীপুর বিআরটিএ‘র পরিদর্শক মোঃ নুরুল হোসেন জানান, মঙ্গলবার বিকালে মহানগরীর শিববাড়ী-রাজবাড়ী-আমতলী সড়কের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ দস্তেগীর। এ সময় উক্ত রুটে চলাচলের রুট পারমিট না থাকা সত্বেও চলাচলের অপরাধে তাকওয়া পরিবহনের ৪টি বাসকে আটক করা হয়। পরে ২টি বাসের চালককে ৫শত টাকা করে জরিমানা করা হয়। পরে ১টি বাসের চালক জরিমানার ৫শত টাকা পরিশোধ করে ছাড়া পায়। কিন্তু অপর বাসের চালক সোহাগ জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে অস্বীকার করে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক তাকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। পরে উক্ত চালককে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া একই অপরাধে তাকওয়া পরিবহনের অপর ২টি বাস ড্যাম্পিং করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এর আগে গত রোববার শিববাড়ী-বাজবাড়ী-আমতলী সড়কের হানকাটা ব্রিজ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে অননুমোদিত রুটে চালানোর জন্য তাকওয়া পরিবহণের ৪টি বাস ডামপিং করা হয়।
সোমবার সকালে গাজীপুর মহানগরীর শিববাড়ী-রাজবাড়ী-আমতলী সড়কের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএ যৌথভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদুর রহমান। এসময় তাকওয়া পরিবহণের ৪টি বাসের চালকের লাইসেন্স না থাকা, কাগজপত্রের মেয়াদ না থাকায় এবং ২টি কভার্ড ভ্যানকে নির্ধারিত সময়ের আগে শহরে প্রবেশ করায় মোট ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং অননুমোদিত রুটে চালানোর জন্য তাকওয়া পরিবহণের দুটি বাসকে ডামপিং করা হয়।
গাজীপুর বিআরটি সূত্রে জানা গেছে, তাকওয়া পরিবহনের নামে গাজীপুর মহানগর উপজেলার মোট ছয়টি রুটে প্রায় আড়াইশো-র মতো বাস চলাচলের জন্য অনুমতি নিয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ রোড লাভজনক না হওয়ায় তাকওয়া পরিবহনের বাসগুলো কালিয়াকৈর চন্দ্রা বা শ্রীপুরের জৈনাবাজার থেকে গাজীপুর মহানগরীর জয়দেবপুর চৌরাস্তা হয়ে শিববাড়ি-রাজবাড়ী-আমতলী রুটে বেশিরভাগ সময় চলাচল করে। কিন্তু এ রুটে চলাচলকারী তাকওয়া পরিবহনের অধিকাংশ বাসের রোড পারমিট নেই। অধিকাংশ চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই। অনুমোদনহীন ও অদক্ষ চালক দিয়ে তাকওয়া বাস চলাচল বন্ধের জন্য গাজীপুর জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় বিভিন্ন সময়ে দাবি জানানো হলে জেলার সকল সড়ক মহাসড়কে সকল প্রকার অন অনুমোদিত ও অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরে এসব বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান গণ বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। মাইকিং করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো এখনো তা চলছে এবং একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে।
সোমবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের মেম্বারবাড়ী এলাকায় তাকওয়া পরিবহনের একটি বাস বেপরোয়া গতিতে যাচ্ছিল। এক পর্যায়ে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে একটি দোকানে উঠে যায়। এতে দোকানটি ক্ষতিগ্রস্থ হলেও পাশপাশে কেউ না থাকায় বড় ধরণের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে। তিনি আরো জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছার আগেই বাসের লোকজন দোকানেরমালিকের সাথে সমঝোতা করে চলে যায়।
এর আগে গত শনিবার দুপুরে গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা থেকে জৈনাবাজারগামী তাকওয়ার পরিবহনের একটি বাস বেপরোয়া গতির বাস হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকের ওপর উঠে যায়। এতে সড়ক বিভাজকে থাকা লোহার গ্রিল ভেঙে বাসটি থেমে যায়।
গত ৭ জুলাই সকালে গাজীপুর শহরের শিববাড়ি এলাকায় ভাড়া নিয়ে বিতণ্ডার পর তাকওয়া পরিবহনের বাস থেকে এক যুবককে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। পুলিশ বাসের চালক ও চালকের সহকারীকে আটক করে। পরে চালকের সহকারি আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দিয়েছে।