গণবাণী ডট কম:
কাজ শুরুর প্রায় এক দশক পর বহু প্রত্যাশিত বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের একটি ফ্লাইওভারের ঢাকামূখী দুটি লেন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। শনিবার সকালে বিআরটি প্রকল্পের ৪.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারের আংশিক আব্দুল্লাহপুর হাউজ বিল্ডিং থেকে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পর্যন্ত অংশের ঢাকামুখী দুটি লেন যান চলাচলের জন্য খুলে দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি।
এসময় মন্ত্রী আরো বলেন, ‘গাজীপুরে মহাসড়কে দুর্ভোগ কমাতে রাজধানীমুখী ফ্লাইওভারের ২ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘের দুটি লেন খুলে দেওয়া হলো। আগামী জুনের মধ্যে বিআরটির প্রকল্প সম্পূর্ণ খুলে দেওয়া সম্ভব হবে।’
তিনি আরও বলেন,‘আগামীকাল সোমবার সিলেটসহ তিনটি বিভাগের ১০০টি ব্রিজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী নতুন কোনো মেঘা প্রকল্প হাতে নেবেন না।’
যদিও, গত শনিবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানা আওয়ামী লীগের ত্রি বার্ষিক সম্মেলেন বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ৮ জানুয়ারি ভোট হবে।
এ সময় মন্ত্রী বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন বিআরটি প্রজেক্টে ভুলত্রুটি হতেই পারে উল্লেখ করে বলেন, ‘বিএনপি শুধু সমালোচনা করে। জাতীয় পার্টি চিৎকার করে। কিন্তু তারা কি করেছে? বিএনপির সময় কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি।’
এসময় মন্ত্রীর সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি,ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র আতিকুর রহমান,সড়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবিএম আমিনুল্লাহ নুরী, সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মঞ্জুর হোসেন, বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ।
এসময় বিআরটি প্রকল্পের কাজের জন্য সৃষ্ট দুর্ভোগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, প্রকল্পের ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে, এই প্রকল্পে আর দুর্ভোগ হবে না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, বিএনপি দেশে কোন মেগা প্রকল্প করেনি। কোন উন্নয়ন হয়নি। তিনি বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, আপনারা নির্বাচনে আসুন। সরকার বদলের একমাত্র পথ নির্বাচন। আর কোন উপায়ে সরকার পরিবর্তন সম্ভব নয়। কারা ক্ষমতায় যাবে আর কারা সেফ এক্সিট নেবে তা জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।
এর আগে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর সড়ক ও সেতুমন্ত্রী গাজীপুরে টঙ্গী এলাকায় বিআরটি প্রকল্প পরিদর্শনে এসে বলেছিলেন, ২০২২ সালের (আগামী) ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজীপুরের বিআরটি এবং চট্রগ্রামের কর্ণফুলী ট্যানেল উদ্বোধন করবেন। কিন্তু বিআরটি প্রকল্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি, ঠিকাদারের অর্থ সংকটসহ নানা কারণে এটির কাজের গতি কমে যায়। ফলে এখন পর্যন্ত বাস র্যা পিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের মোট কাজের গড়ে প্রায় ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অপরদিকে, নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা সন্তোষজক ন হওয়ায় রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে টঙ্গী অংশের কাজ বন্ধ রয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়কের যানজট দূর করতে ২০১২ সালে হাতে নেওয়া হয় বিআরটি প্রকল্প। কিন্তু, প্রকল্প শুরুর পর চার দফা সময় বাড়িয়েও সর্বশেষ নির্ধারিত সময়েও শেষ হচ্ছে না বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের কাজ। ৬ বছরে কাজ শেষ করার থাকলেও নানা অজুহাতে সময় বাড়ানো হয়েছে চারবার। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রকল্প ব্যায়। সময় ফুরিয়ে গেলেও কাজ এখনো ফুরোয়নি।
সূত্র আরো জানান, বিআরটি প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ২০.৫ কিলোমিটার। এ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে একটি বাস ডিপু ৪.৫ কিলোমিটার উড়াল সড়ক ও ২৫ টি স্টেশন নির্মাণ। এয়ারপোর্ট ও শিববাড়িতে দুটি বাস টার্মিনাল, ছয়টি ফ্লাইওভার, একটি সেতু নির্মাণ, বিভিন্ন অংশে ১১৩ টি সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ৪১ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ এবং ২০.৫ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ।
সূত্র আরো জানায়, ২০১২ সালে বিআরটি প্রকল্পের শুরুতে এর প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। পরে মেয়াদ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয় এবং ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৪ কোটি ৮২ লাখ ১৪ টাকা। এরপরও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করতে পারেনি। একারণে পরে আরও দুই দফা প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সময় বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যয়ও বেড়েছে। ২ হাজার ৪০ কোটি টাকার কাজ এক দশকে ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি
বিআরটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রকল্পটি নির্মাণ হলে এটিই হবে গাজীপুর, টঙ্গী ও উত্তরা এলাকায় চলাচলকারী দ্রুত, নিরাপদ এবং পরিবেশ বান্ধব প্রথম গণপরিবহন ব্যবস্থা। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে গাজীপুর সিটির যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটবে। গাজীপুরসহ দেশের উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় ৩৭টি জেলার মানুষ উপকৃত হবে।