গণবাণী ডট কম:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-৩ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ একজন সফল কৃষক। গত ৫ বছরে কৃষি খাতে সবুজের আয় বেড়েছে। আর ব্যবসা থেকে তার স্ত্রী নিগার সুলতানা ঝুমার সম্পদ বেড়েছে।
২০১৮ সালে ইকবাল হোসেন সবুজের কৃষিখাত থেকে আয় ছিল এক লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। ৫ বছর পর ২০২৩ সালে কৃষিখাতে তার আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ কৃষি খাতে ইকবাল হোসেন সবুজের আয় বেড়েছে সাড়ে ৭ গুন।
তবে, ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি হওয়ার পর ব্যবসায় সফল হতে পারেননি। তবে, তার উপর নির্ভরশীলরা ব্যবসায় সফলতা পেয়েছেন। এমপি হওয়ার আগে ২০১৮ সালে তিনি ব্যবসা থেকে আয় করেছিলেন ২ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা। এমপি হওয়ার পরে ব্যবসা থেকে তার কোন আয় নেই। আবার ২০১৮ সালে তাঁর উপর নির্ভরশীলদের ব্যবসা থেকে কোন আয় ছিল না। কিন্তু, বর্তমানে ব্যবসা খাতে ইকবাল হোসেন সবুজের উপর নির্ভরশীলদের আয় হয়েছে ৯ লক্ষ ৯৫ হাজার ৫শ টাকা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় প্রদত্ত হলফনামার তথ্য থেকে এসব জানা গেছে।
২০১৮ সালে শেয়ার সঞ্চয়, ব্যাংক আমানত থেকে ইকবাল হোসেন সবুজ ও তাঁর উপর নির্ভরশীলদের কোন আয় ছিল না। তবে, ২০২৩ সালে তিনি শেয়ার সঞ্চয়, ব্যাংক আমানত থেকে মুনাফা পেয়েছেন ১ লাখ ১৮ হাজার ৭২৫ টাকা এবং তার ওপর নির্ভরশীলদের মুনাফা ৪২ হাজার ৮৫৩ টাকা।
তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা বাবদ ৬ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ও বিশেষ সুবিধাদি হিসেবে প্রাপ্ত ভাতা বাবদ ১৬ লক্ষ ৬৫ হাজার ৫৫০ টাকা আয় করেছেন।
৫ বছর আগে ইকবাল হোসেন সবুজের গৃহস্থালী আয় ৭৬ হাজার ৫শ টাকা থাকলেও বর্তমানে এখাত থেকে কোন আয় নেই।
সংসদ সদস্য হওয়ার পর ইকবাল হোসেন সবুজের নগদ টাকার পরিমাণ চার ভাগের তিনভাগ কমেছে, তবে তার স্ত্রীর বেড়েছে ৫০ গুন। ৫ বছর আগে ২০১৮ সালে ইকবাল হোসেন সবুজের নগদ টাকা ছিল ২০ লাখ ৫০ হাজার ৮১২ টাকা। তখন তার স্ত্রীর কোন নগদ টাকা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে ইকবাল হোসেন সবুজের কাছে নগদ ৫ লক্ষ টাকা এবং তার স্ত্রীর কাছে নগদ ৫০ লক্ষ ২০ হাজার ৬৬০ টাকা আছে।
অপরদিকে, পাঁচ বছরে তাদের উভয়ের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুনের বেশি। বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে সবুজের নামে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৪৭ লক্ষ ৬১ হাজার ৫৯ টাকা এবং তার স্ত্রীর নামে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ১০ লক্ষ ৮১ হাজার ১৪৩ টাকা। ২০১৩ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সবুজের নামে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ২২ লক্ষ ৩৯ হাজার ৫২৩ টাকা এবং তার স্ত্রীর নামে ছিল ৫ লক্ষ ২৬ হাজার ৬৭৮ টাকা।
২০১৮ সালের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, তখন ইকবাল হোসেন সবুজের কোন গাড়ি ছিল না। কিন্তু সংসদ সদস্য হওয়ার পর তিনি করমুক্ত কোটায় একটি গাড়ি আমদানি করেছেন, যার মূল্য ৮৩ লক্ষ ৭১ হাজার ৬৯৫ টাকা।
ইকবাল হোসেন সবুজের নিজের ১০ তোলা স্বর্ণ এবং তার স্ত্রীর ১০০ তোলা স্বর্ণ রয়েছে। হলফনামায় এসব বিয়ের সময় উপহার হিসেবে প্রাপ্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৮ সালের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, ইকবাল হোসেন সবুজের ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী এবং ১ লক্ষ টাকার আসবাবপত্র ছিল, এগুলো এখনো রয়েছে। কিন্তু তখন তার স্ত্রীর কোন ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাব ছিল না। কিন্তু ২০২৩ সালের হলফনামা তথ্য অনুযায়ী তার স্ত্রীর ৭ লক্ষ টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও ৫ লক্ষ টাকার আসবাব রয়েছে।
ইকবাল হোসেন সবুজের একটি পিস্তল ও একটি শর্টগান রয়েছে, যার মূল্য যথাক্রমে ৩ লক্ষ টাকা ও ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে বর্তমানে ইকবাল হোসেন সবুজ যৌথভাবে শ্রীপুরের দমদমা মৌজায় পৈত্রিক সূত্রে ১৫ বিঘা কৃষি জমির মালিক, যার মূল্য জানা নাই, একই মৌজায় পৈত্রিক সূত্রে যৌথভাবে মোট ১৪৯ শতাংশ অকৃষি জমির মালিক, যার মূল্য ১ লাখ ৯৯২৩৮ টাকা দেখানো হয়েছে। এছাড়া হেবামূলে যৌথভাবে শ্রীপুরের তেলিহাটি ২০৫ শতাংশ জমির মালিক, যার মূল্য জানা নাই। যৌথভাবে দমদমা মৌজায় পৈত্রিক সূত্রে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ অকৃষি জমির মালিক, যার মূল্য ২ লাখ ২৪ হাজার টাকা। তবে ২০১৮ সালের হলফনামায় পৈত্রিক সূত্রে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ জমির মালিকানার বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। ইকবাল হোসেন গাজীপুর মহানগরীর জয়দেবপুর এলাকায় পৈত্রিক সূত্রে যৌথ মালিকানাধীন ১৫ শতাংশ জমির ওপর একটি ৩ তলা বাড়ীর মালিক। এছাড়াও তিনি ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার মূল্যের একটি গরুর খামারের মালিক।
অপরদিকে, ইকবাল হোসেন সবুজের স্ত্রী ২০১৮ সালে ৪ বিঘা কৃষি জমি ও আধা বিঘা অকৃষি জমির মালিক ছিলেন। তবে বর্তমানে ইকবাল হোসেন সবুজের স্ত্রী ঢাকার নবাবগঞ্জের চুরাইন মৌজায় পৈত্রিক হেবামূলে ১৯ দশমিক ২৫ শতাংশ, যার মূল্য জানা নাই, দানপত্র দলিলমূলে বলে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যার মূল্য জানা নাই এবং সাব কবলা দলিল মূলে ২ দশমিক ৫ শতাংশ জমির মালিক, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩৯হাজার ৫০ টাকা।
ইকবাল হোসেন সবুজ তার হলফনামায় দায় দেনা হিসাবে জমি বন্ধকী বাবদ ব্যক্তির নিটক থেকে ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
ইকবাল হোসেন সবুজ স্নাতক পাস। তার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে শ্রীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের হয় কিন্তু তিনি ওই মামলা থেকে অব্যাহতি লাভ করেছেন।