গণবাণী ডট কম:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের পাঁচটি সংসদীয় আসনে অংশগ্রহণ করেছিলেন ৩৮ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে বিজয়ী ও নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী ছাড়া বাকী ২৮ জনই জামানত হারিয়েছেন। জামানত হারানো প্রার্থীদের মধ্যে আলোচিত যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলামও রয়েছেন।
জামানত হারানো প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, ইসলামী ঐক্য জোট, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা রয়েছেন।
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, যদি কোন প্রার্থী মোট প্রদত্ত ভোটের ৮ ভাগের এক ভাগের কম অর্থাৎ এক অষ্টমাংশ এর কম ভোট পান, তাহলে তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
রোববার রাতে নির্বাচনের রিটার্ণিং কর্মকর্তা ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোঃ শফিকুল ইসলাম নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন। আর সোমবার সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভাওয়াল সম্মেলন কক্ষে বিজয়ী প্রার্থী অথবা তার প্রতিনিধির নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফলাফল সিট হস্তান্তর করেন।
রিটার্ণিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত নির্বাচনের ফলাফলের বার্তা প্রেরণ শীটের তথ্য থেকে জানা যায়, গাজীপুর জেলায় এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাঁচটি সংসদীয় আসনে মোট ৩৮ প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে চারটি সংসদীয় আসনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী ও একটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাত্র পাঁচ জন প্রার্থী তাদের জামানত ফেরত পাবেন। অবশিষ্ট ২৮ জনপ্রার্থী নিজ নিজ সংসদীয় আসনে মোট প্রদত্ত ভোটের এক অষ্টমাংশের কম ভোট পেয়েছেন। এ কারণে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
বার্তা প্রেরণ শীট থেকে জানা যায়, গাজীপুর-১ সংসদীয় আসনে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন ৭ জন। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক নৌকা প্রতীক নিয়ে ১ লক্ষ ৯ হাজার ২১৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ রেজাউল করিম রাসেল ট্রাক মার্কায় পেয়েছেন ৯২ হাজার ৭৮৮ ভোট।
এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৬ লাখ ১৫ হাজার ৮৫২টি। নির্বাচনে ২৩৭টি কেন্দ্রে মোট ভোট পড়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৭৬২টি। এ আসনে ৩ হাজার ১৭৫টি ভোট বাতিল হয়েছে। বৈধ ভোটের সংখ্যা ২ লাখ ৫ হাজার ৫৮৭টি।
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, এই আসনে যেসব প্রার্থী ২০ হাজার ৮৬২ ভোটের কম ভোট পেয়েছেন, তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। ফলে এই আসনের বিজয়ী ও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়া অন্য ৫ প্রার্থীর সকলের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
ফলাফল শীটের তথ্য অনুযায়ী, এই আসনের অপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন পেয়েছেন ১ হাজার ২৭৬ ভোট, তৃণমূল বিএনপি’র প্রার্থী চৌধুরী ইরাদ আহমদ সিদ্দিকী সোনালী আঁশ প্রতীকে পেয়েছেন ৩২২ ভোট, ইসলামী ঐক্য জোটের প্রার্থী ফজলুর রহমান মিনার প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৪৯৩ ভোট, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রার্থী মোঃ আরশেদুজ্জামান নোঙ্গর প্রতীকে ২০২ ভোট ও বাংলাদেশ তরিকুল ফেডারেশনের প্রার্থী মোঃ শফিকুল ইসলাম ফুলের মালা প্রতীকে পেয়েছেন ২৮৮ ভোট।
গাজীপুর ১ আসনে মোট ভোট পড়েছে শতকরা ৩০ ভাগ।
গাজীপুর-২ আসনের ফলাফল শীটের তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনে মোট ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের মধ্যে আলোচিত যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলামসহ ৭ জন জামানত হারিয়েছেন।
এ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী যুব ও্র ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল নৌকা প্রতীক নিয়ে ১ লক্ষ ৪ হাজার ৪৭৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী আলিম উদ্দিন ট্রাক মার্কায় ৮৪ হাজার ১২৯ ভোট পেয়েছেন।
ফলাফল শিট অনুযায়ী এ আসনে মোট ভোটার ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৬ টি। ২৭২ টি কেন্দ্রে এ আসনে মোট ভোট পড়েছে ১লাখ ৯৭ হাজার ৮২১টি। এখানে বাতিল ভোটের সংখ্যা ৩ হাজার ৬৩৪ টি। বৈধ ভোটের সংখ্যা ১লাখ ৯৪ হাজার ১৮৭টি।
নির্বাচনের আইন অনুযায়ী, এ আসনে যারা ১৫ হাজার ৮২৫ ভোটের কম ভোট পেয়েছেন, তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। সেই হিসেবে এ আসনে ৭ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া প্রার্থীরা হলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর আলম একতারা প্রতীকে পেয়েছেন ৫৪২ ভোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী কাজী হাসিবুর রহমান রাব্বি আমার মার্কায় পেয়েছেন ২৩৭ ভোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী মোঃ আমির হোসাইন চেয়ার প্রতীকে ১০২ ভোট, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোঃ জয়নাল আবেদীন লাঙ্গল মার্কায় ১ হাজার ৫৯ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ঈগল মার্কায় ৩ হাজার ২৬২ ভোট, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির রেহানা আক্তার রিনা ডাব মার্কায় ১১৫ ভোট ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী সৈয়দ আবু দাউদ মুসনবী হায়দার ফুলের মালা নিয়ে ২৬৪ ভোট পেয়েছেন।
প্রাপ্ত ফলাফলে গাজীপুর-৩ সংসদীয় আসনের প্রাপ্ত ফলাফল শীট থেকে দেখা যায়, এ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা রহমত আলীর কন্যা রুমানা আলি টুসি নৌকা প্রতীক নিয়ে ১ লক্ষ ২৬ হাজার ১৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে ন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ ইকবাল হোসেন সবুজ ট্রাক প্রতীকে ১ লক্ষ ১ হাজার ৬৭৪ ভোট পেয়েছেন।
এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ১০ হাজার ৭৪৭ টি। ১৮০ টি কেন্দ্রে এ আসনে মোট ভোট পড়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৭২৮টি। এখানে বাতিল ভোটের সংখ্যা ৩ হাজার ২৩৩ টি। বৈধ ভোটের সংখ্যা ২ লাখ ৩১ হাজার ৪৯৫টি।
নির্বাচনের আইন অনুযায়ী এ আসনে যারা ১৮ হাজার ৭৭৮ ভোটের কম ভোট পেয়েছেন তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। সেই হিসেবে এ আসনে সাত প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া প্রার্থীরা হলেন, ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম সাখাওয়াত হোসেন খান পেয়েছেন ১৫৪ ভোট, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এফ এম সাইফুল ইসলাম পেয়েছেন ১ হাজার ২২৪ ভোট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের গামছা প্রতীকের প্রার্থী মোঃ আব্দুর রহমান পেয়েছেন ১ হাজার ৭১৭ ভোট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ৪ মশাল মার্কার প্রার্থী মোঃ জহিরুল হক মন্ডল বাচ্চু পেয়েছেন ২২৭ ভোট ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ফুলের মালা প্রতীকের প্রার্থী মো: জয়নাল আবেদীন পেয়েছেন ৩০৩ ভোট।
এ আসনে মোট ভোট পড়েছে শতকরা ৪৭ দশমিক ৪৭ ভাগ।
গাজীপুর-৪ আসনের বার্তা প্রেরণ শীটের তথ্য অনুযায়ী, এ আসনে মোট প্রার্থী ৭ জন। তাতের মধ্যে ৫ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী, বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি নৌকা প্রতীক নিয়ে ৮৯ হাজার ৭২৯ ভোটে পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আলম আহমেদ ঈগল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৪৫ ভোট।
এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ১০হাজার ৭৪৭টি। ১২২ টি কেন্দ্রে এ আসনে মোট ভোট পড়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬৩৪টি। এখানে বাতিল ভোটের সংখ্যা ১ হাজার ৩৭২ টি। বৈধ ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৬২টি।
নির্বাচনের আইন অনুযায়ী এ আসনে যারা ১০ হাজার ৯৩০ ভোটের কম ভোট পেয়েছেন তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। সেই হিসেবে এ আসনে সাত প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া প্রার্থীরা হলেন, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির আব্দুর রউফ খান ডাব প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৮৭ ভোট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মাসুদ চৌধুরী একতারা প্রতীকে পেয়েছেন ৩৭৮ ভোট, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট এর প্রার্থী মোঃ সারোয়ার ই কায়নাথ টেলিভিশন প্রতীকে ১০৫ ভোট, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোঃ শামসুদ্দিন খান থেকে ৪৭৫ ভোট ও প্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শামসুল হক পেয়েছেন ৩৪৩ ভোট।
আসলে প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার ৪৩ দশমিক ৯৭ ভাগ।
গাজীপুর পাঁচ সংসদে আসনের বার্তা প্রেরণ শীটের তথ্য অনুযায়ী এখানে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন আটজন। তাদের মধ্যে ৬ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এই আসলে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারউজ্জামান। তিনি ট্রাক প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৮২ হাজার ৭২০ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৬৭ হাজার ৭৮৩ ভোট।
এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫৭৫ টি। ১২৪ টি কেন্দ্রে এ আসনে মোট ভোট পড়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৭০টি। এখানে বাতিল ভোটের সংখ্যা ২ হাজার ৪৯৮ টি। বৈধ ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৭২টি।
নির্বাচনের আইন অনুযায়ী এ আসনে যারা ১২ হাজার ৭২৫ ভোটের কম ভোট পেয়েছেন তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। সেই হিসেবে এ আসনে ৬ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া প্রার্থীরা হলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী একতারা প্রতীক নিয়ে ১ হাজার ৯৬ ভোট, জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন লাঙ্গলপ্রতিকে ৩৫০ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে মোঃ আমজাদ হোসেন পেয়েছেন ৩৮২৭ ভোট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ৪ গোল ইসলাম আকন্দ মশাল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১০০ ভোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী মোঃ আল-আমিন দেওয়ান চেয়ার প্রতীক নিয়ে ৫৮৯ ভোট এবংগণফোরামের প্রার্থী মোঃ সোহেল মিয়া তৃতীয় মান সূর্য প্রতীকে ১০৭ ভোট পেয়েছেন।