গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিচালা এলাকায় বুধবার সন্ধ্যায় গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে ছড়িয়ে পড়া গ্যাসে রান্নার আগুন থেকে সৃস্ট অগ্নিকান্ডে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন ২৯ জন। দগ্ধদের উদ্ধার করে রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ণ ইনষ্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
এলাকবাসী ও পুলিশ জানায়, কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা টপস্টার কারখানার পাশে এক ব্যক্তি জমি ভাড়া নিয়ে সেখানে পাশাপাশি অর্ধ শতাধিক টিনশেড ঘর তৈরী করে ঘর ভাড়া দিয়েছেন। এসব ঘরে বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষ বসবাস করেন। এসব ঘরের দেখাশুনা করেন শফিকুল ইসলাম। তিনি একটি ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছিলেন। বুধবার সন্ধ্যায় তার ঘরের সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হয়ে যায়। পরে তিনি পাশের একটি দোকান থেকে নিজেই একটি গ্যাস সিলিন্ডার ক্রয় করে এনে ঘরের ভিতর চুলার সাথে সংযোগ দেয়ার চেষ্টা করেন। এসময় সিলিন্ডারটি চুলার সাথে সংযোগের চাবি ভেংগে যায়। এতে সিলিন্ডারের গ্যাস তার ঘরের ভিতর ছড়িয়ে পরছিল। এসময় তিনি গ্যাস সিল্নিডারটি তার ঘর থেকে বাইরে লোক চলাচলের গলিতে ফেলে দেন। তখন গ্যাস ঘরের বাইরে ঐ গলি ও আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় আশপাশের চলাচলকারী লোকজন ও গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা দেখতে অনেক লোক ভীড় করেন। তখন অন্য ঘরের লাকরী দিয়ে রান্নার আগুন ছড়িয়ে পড়া গ্যাসের সংস্পর্শে আসলে আগুন ধরে যায়। তখন আশপাশের ঘরের ও বাইরে থাকা নারী, পুরুষ ও শিশুদের শরীরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে অন্তত ২৯ জন দগ্ধে হয়েছেন। পরে স্থানীয়রা তাদের শরীরের আগুন নিভিয়ে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যান। সেসব হাসপাতালে তকাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ণ ইনষ্টিটিউটে পাঠানো হয়।
দগ্ধদের মধ্যে কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন , নাদিম (২২), নিরব (১০), মিরাজ (১৮), তারেক রহমান (১৮), মোন্নাফ (১৭), সোলায়মান (৯), লালন (২৩), নয়ন (৮), শিল্পী (৩০), আরিফুল ইসলাম (২১), সুমন (২৬), মাইদুল ইসলাম (২৭), সফুরা ( ৯), রাব্বি (১৪), উর্মিতা (২২), সাদিয়া খাতুন (১৮), জহিরুল (২৯) ,আরিফ (৪০), রতনা বেগম (৪০), তাইয়েবা (৩), মুনসুর আলী (৩০), নূর নবী (৩), রহিমা (৩), কবির (৩০), খাদিজা (৪৫), তাওহীদ (৭), সোলেমান (৪০), মশিউর (২২) এবং লাদেন (২২)।
শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ঘরের ভিতর সিলিন্ডারের গ্যাস ছড়িয়ে পড়তে থাকায় তিনি দ্রুত সেটি ঘরের বাইরে ফেলে দেন। পরে সিলিন্ডারের গ্যাস ছড়িয়ে পড়লে সেখানে পাশের চুলার আগুনের স্পর্শে আগুন জ্বলে দুর্ঘটনা ঘটে। তবে, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়নি।
গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী মর্ডান ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার মোঃ আশরাফ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা কাউকে পাইনি। তিনি স্থানীয়দের উদ্ধৃত করে জানান, ২৫-৩০ জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রথমে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনে সূত্রপাত হয়।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম নাসিম বলেন, টিনশেড ঘরের ভিতর গ্যাস সিলিন্ডারের সাথে চুলার সংযোগ দেয়ার সময় চাবি ভেঙ্গে গিয়ে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ার পর ঘরের মালিক নিজে বাচার জন্য সিলিন্ডার ঘরের বাইরে ফেলে দেন। পরে সিরিল্ডারের গ্যাস আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে পাশের বাড়ির চুলার আগুন গ্যাসের সংস্পর্শে এসে আগুন ধরে যায়। এতে আশপাশের লোকজন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার আহাম্মেদ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, ঘরের কেয়ারটেকার শফিকুলের ঘরের গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ হয়ে গ্যাস ছড়িয়ে পড়লে তিনি সিলিন্ডারটি ঘরের বাইরের গলিতে ফেলে দেন। তখন সিলিন্ডারের গ্যাস ছড়িয়ে পড়লে পাশের চুলা থেকে আগুন ধরে যায়। এ সময় পথচারী ও বিভিন্ন ঘরের বাসিন্দা নারী পুরুষ ও শিশুসহ ২৯/৩০ জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের শেখ হাসিনা বার্ণ ইনষ্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। কারো গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।