নিজস্ব প্রতিবেদক, কাপাসিয়া (গাজীপুর) :
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রীতে গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত দুইজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা সম্পর্কে মামা ভাগিনা। তাদের মরদেহ ময়না তদন্ত শেষে শুক্রবার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নিহতরা হলো, ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানাধীন চাকুয়া গ্রামের মো. মাসুদ শেখের ছেলে মো. নাসির শেখ (৩২)। অপরজন একই থানাধীন পাচাহার গ্রামের আবু শহিদের ছেলে মো. হৃদয় শেখ।
গত বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে সিংহশ্রী ইউনিয়নের বড়িবাড়ি ও নামিলা গ্রামে গরুচোর সন্দেহে গণপিটুনিতে তাদের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ মর্গ থেকেই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্থানীরা জানান, গেল কয়েক বছর ধরেই কাপাসিয়া উপজেলাধীন সিংহশ্রী ইউনিয়নের বড়িবাড়ি ও নামিলা গ্রামে গরু চুরি হচ্ছিল। গত তিন মাস ধরে গরু চুরির হার অনেক বেশি বেড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা আগে থেকেই চোরের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল।
স্থানীয়দের দাবী, ওই এলাকায় গত এক বছরে কমপক্ষে দেড়শ গরু চুরি হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে বরিবাড়ি চৌরাস্তা এলাকায় চুরি করা গরু ভর্তি ট্রাক নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের সামনে পড়ে যায় একটি চক্র। পরে দ্রুত বেগে গাড়ি নিয়ে সেই রাতে চোরেরা পালিয়ে যায়। এরপর গ্রামবাসী মিলে পাহারার ব্যবস্থা করেন।
বরিবাড়ি গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, গরু চুরির শঙ্কায় তারা রাতে ঘুমাতে পারেন না। অনেকেই গোয়াল ঘরে গরুর সঙ্গে ঘুমান। তবুও গরু চুরি রোধ করা যাচ্ছে না।
সিংহশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার পারভেজ বলেন, এলাকায় গরু চুরি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। একারণে মানুষ খুব অসন্তোষ্ট হয়েছিল। তারা চুরি রোধে এলাকায় পাহারা বসিয়েছিল। রাতে গাড়িতে করে একটি কৃষকের গরু চুরি করতে কয়েকজন আসেন। গ্রামবাসী গরু চুরির বিষয়টি টের পেয়ে একজোট হয়ে দুইজনকে গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলে নামিলা গ্রামে একজন ও পাশ্ববর্তী বড়িবাড়ি গ্রামের ধানক্ষেতে আরেকজন নিহত হন। খবর পেয়ে আমি পরে ঘটনাস্থলে যাই।
তিনি আরো বলেন, নামিলা, বরিবাড়ি সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে গত কয়েক মাস ধরে গরু চুরি বেড়ে গেছে। রাতে গরু চুরি করে বনের ভেতরে নিয়ে মাংস কেটে নিয়ে যাওয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে। বেশ কয়েকবার নদীর পাড়ে ও বনের ভেতরে চুরি করা গরুর হাড়গোড়, চামড়া পাওয়া গেছে। এই সপ্তাহে বারিবাড়ি গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে ১০টি গরু চুরি হয়েছে।
কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুবকর মিয়া বলেন, কাপাসিয়া এলাকায় চুরি প্রতিরোধে পুলিশ ও ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যস্থতায় স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশ এসব অপরাধ নির্মূলে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে পিটুনিতে দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় ওই এলাকার গ্রাম পুলিশ মোঃ জালালউদ্দিন বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে কাপাসিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-২৬/০৩/২৪) হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ সজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।