চন্দন রক্ষিত
১৯৯১ সনে ২৯ শে এপ্রিল প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের প্রায় দেড় লক্ষ লোক মারা গিয়েছিল। সেদিন ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছিল বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং রেডিও বাংলাদেশের সবগুলো কেন্দ্র থেকে। ১০ নম্বর বিপদ সংকেত দেখানোর পরেও এক রাতে এত লোকের প্রাণহানি ঘটেছিল।
আজ ২৯ বছর পরে সারা বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ বিপদ সংকেত বা বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণার পর দুইশর বেশী দেশে করোনা ঝড় বইছে। বাংলাদেশ ঝড়ের ঝাপটা মাত্র লাগতে শুরু করেছে। এই ঝড়ে কত প্রাণ বিলীন হবে তা কেউই বলতে পারছে না। এই ঝড় কবে থামবে তাও কেউ বলতে পারছে না। কোন বিশেষজ্ঞ এখন পর্যন্ত সে মতাদর্শে পৌঁছতে পারেননি।
আমরা শুধু শুধুই একে অপরকে দোষারোপ করছি, বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের ঝড়কে মেনে নিতেই হবে, ঝড় বয়ে যাবেই। এটি আটকানোর ক্ষমতা একমাত্র ঈশ্বর ব্যতীত অন্য কারো নেই, শুধু আমাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে থাকতে হবে ঝড় না থামা পর্যন্ত। বাংলাদেশে এমনিতেই আমাদের সচেতনতার হার খুবই কম।
যেখানে বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি দেশ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলছেন যে, আমেরিকা এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এখানে ২৪ ঘন্টায় রেকর্ড সাড়ে ৪ হাজার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
এ তো গেলো এক নম্বর পরাশক্তি দেশের কথা। যদি অন্যান্য দেশের দিকে তাকাই,তবে দেখা যায় সৌদি আরবে বাইরে ঘোরাফেরা করলে কিংবা যত্রতত্র থুথু ফেললে ১০ হাজার রিয়াল জরিমানা অথবা তিন বছরের জেলের বিধান রেখেছেন। ফিলিপাইনে ও মোজাম্বিকে কারফিউ ভেঙে বাইরে বেরিয়ে এলে দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ, উত্তর কোরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে তাকে গুলি করে মেরে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এশিয়ার সবচাইতে সুশৃংখল দেশ সিঙ্গাপুরে লকডাউন এবং বের হলেই জরিমানার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর সকল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেখানে আমরা তো বিশাল পুকুরে একটি চুনোপুঁটির মত দেশ কিংবা গোষ্ঠী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ভবিষ্যতবাণী করেছেন, নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বাংলাদেশে ২০ লক্ষ মানুষ করোনায় হারিয়ে যাবে। আমাদের দেশের বজ্র আটুনি ফস্কা গেরো, আমাদের সেদিকেই নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক সপ্তাহ করে বিরতি দিয়ে তিন দফা ২১ দিনের নিরঙ্কুশ লকডাউন মৃত্যুহার কমানোর একমাত্র পন্থা, কিন্তু ২২ দিনের মধ্যে এখনো সারাদেশে একযোগে লকডাউন করা হয়নি। তাই একযোগে লকডাউন শুরু করার প্রথম দিন থেকেই ক্ষণ গননা শুরু করতে হবে। সে হিসেবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো দুই মাস লাগতে পারে বলে আমার ধারণা৷
আমি শুধু অনুমান করতে পারছিনা এই দুর্যোগের পরে কি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। কত হাহাকার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে আমি ভবিষ্যদ্বাণী করতে চাই না। শুধু অনুমান করতে পারি কয়েক লক্ষ লোক এই দুর্যোগের পরে তীব্র খাদ্য সংকটের মুখে পড়বে। আমি পরম দয়াময় সৃষ্টিকর্তার কাছে এই মিনতি করছি প্রভু বাংলাদেশকে রক্ষা করুন।
পৃথিবীর উন্নত এবং মেধাবী দেশগুলো থেকে আমরা যদি শিক্ষা নেই আমাদের ধৈর্য ধারণ ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আমাদের দু’হাত প্রসারিত করে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় দেখছি না।
তবে, সাবধানতা অবশ্যই অবলম্বন করে ঘরে থাকতে হবে। সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছেন বাংলাদেশের সমস্ত হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন। বাংলাদেশের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যন্ত এখনো পর্যন্ত সুশৃংখল অবস্থায় দেশকে স্থিতিশীল রেখে দেশকে স্বাভাবিক রেখেছেন। এজন্য আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আমরা প্রচন্ড ঝুঁকির মধ্যে আছি৷ সরকারী নির্দেশের সাথে আমরা একাত্ম হলে এ ঝুঁকি মোকাবেলা অবশ্যই করতে পারবো। আসুন আজ থেকেই ঘরে থাকি, দেশকে নিরাপদ করি।
লেখক : সংস্কৃতিকর্মী ও সাধারণ সম্পাদক, কাপাসিয়া উপজেলা শিল্পকলা একাডেমী, প্রাক্তন সংবাদকর্মী-দৈনিক প্রথমআলো।