গণবাণী ডট কম:
বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি একটি সতর্কতামুলক নির্দেশিকা জারি করেছে সরকার। এ নির্দেশিকায় সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং কর্মচারীদের করণীয়-বর্জনীয় নির্ধারণ করা এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯ (পরিমার্জিত সংস্করণ)’ শীর্ষক এক পরিপত্রে এনব নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার (৭ মে) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব কাজী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়েছে, কেউ নির্দেশনা না মানলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য সংবলিত কোনও পোস্ট দেওয়া ও লাইক-শেয়ার করতে পারবেন না। এমনকি ফেসবুক ফ্রেন্ড নির্বাচনেও সতর্ক থাকতে হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে বর্তমানে যে অস্থিরতা চলছে তার প্রেক্ষিতেই এই সতর্কতা।
এ নিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, সরকার মনে করে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বর্তমান সময়টি একটি খুবই অস্থির সময়। এবং এ সময়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরনের গুজব এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন পোষ্টের কারণে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, বিশেষ করে যদি সেটি সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে আসে।
সেই কারণে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে বলা হয়েছে।
উদাহরণ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হবার পর থেকে প্রশাসন, পুলিশ এবং চিকিৎসকসহ বিভিন্ন সেক্টরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কয়েকটি ফেসবুক পোষ্ট দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত ঘটায়।
ফলে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়িত্বশীলতার বিষয়টি আরেকবার মনে করিয়ে দেয়া ও জোর দেয়ার জন্য এই নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
জারি করা নির্দেশনার আলোকে সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং এর আওতাধীন অধিদফতর/পরিদফতর/সংস্থার কর্মচারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও কতগুলো বিষয় অনুসরণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
- সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে সরকার বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনও পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড, কমেন্ট, লাইক, শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী, জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টিকারী, বা ভিত্তিহীন, অসত্য ও অশ্লীল এমন তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
- কোনও সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন বা ধর্মনিরপেক্ষতা নীতির পরিপন্থী কোনও তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে এমন কোনও পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড, কমেন্ট, লাইক, শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- ‘জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোন সার্ভিস বা পেশাকে হেয় প্রতিপন্ন করে’ এমন কোন পোস্ট দেয়া থেকে বিরত থাকতেও বলা হয়েছে।
- লিঙ্গবৈষম্য বা এ সংক্রান্ত বিতর্কমূলক কোনও তথ্য প্রকাশ করা যাবে না।
- জনমনে অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনও বিষয়ে লেখা, অডিও বা ভিডিও ইত্যাদি প্রকাশ বা শেয়ার করা যাবে না।
- ভিত্তিহীন, অসত্য ও অশ্লীল তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকারও কথা বলা হয়।
- অন্য কোনও রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য সংবলিত কোনও পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড, কমেন্ট, লাইক, শেয়ার করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, কোনও ‘কন্টেন্ট’ বা ‘ফ্রেন্ড’ সিলেকশনে সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন এবং অপ্রয়োজনীয় ট্যাগ, রেফারেন্স বা শেয়ার করা পরিহার করতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার বা নিজ অ্যাকাউন্টে ক্ষতিকারক কন্টেন্টের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মচারী ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হবেন এবং সেজন্য প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।