গণবাণী ডট কম:
ভারতের অযোধ্যায় ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ‘পূর্ব পরিকল্পিত ছিল না’, এমন মন্তব্য করে সব আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছে ভারতের আদালত।
২৮ বছর আগে ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার পর বাবরি মসজিদের স্থলে রামমন্দির নির্মাণ শুরু হয়ে গিয়েছে। অযোধ্যার সেই বহুবিতর্কিত স্থলে, ২৮ বছর আগে বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় এবার বেকসুর খালাস হয়ে গেলেন লালকৃষ্ণ আদভানী, মুরলীমনোহর জোশী, উমা ভারতীসহ সব অভিযুক্ত। লখনউ-এর বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারকের রায়, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের ওই ঘটনার পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র বা পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না। গোটাটাই ‘হঠাৎ ঘটে যাওয়া’ স্বতঃস্ফূর্ত জনরোষের ফল। ঘটনায় মোট অভিযুক্তের সংখ্যা ছিল ৪৯। এর মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি ৩২ জনের সে দিনের ভূমিকায় কোনও অপরাধ খুঁজে পায়নি আদালত। উল্টে ভাঙচুরের ঘটনা এঁরা আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন বলেও বলা হয়েছে রায়ে।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর করসেবকরা মিলে মুঘল জমানার গোড়ার দিকে তৈরি বাবরি মসজিদ ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। অভিযোগ ছিল, রীতিমতো পরিকল্পনা করেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। তার জন্য শাবল-গাঁইতি নিয়ে তাঁরা জড়ো হয়েছিলেন। সেই ঘটনায় প্রবীণ বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন উপ প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুরলীমনোহর জোশী এবং মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উমা ভারতী, উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংহের মতো নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে মসজিদ ভাঙার ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা এবং করসেবকদের উস্কানি জোগানোর অভিযোগ ওঠে।
বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক তার রায় পড়ার শুরুতেই জানিয়ে দেন, মসজিদ ভেঙে ফেলার এই ঘটনা “পূর্ব পরিকল্পিত ছিল না।”
১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার দিন বিজেপি নেতারা উন্মত্ত জনতাকে ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন বলেও আদালত মন্তব্য করেছে - কিন্তু করসেবকদের ভিড় তাদের নিষেধ শুনতে রাজি হয়নি।
বিরানব্বই বছর বয়সী লালকৃষ্ণ আদভানি ও ৮৬-বছরের মুরলী মনোহর জোশী কেউই অবশ্য বয়সজনিত অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আদালতে এদিন হাজির ছিলেন না। ছিলেন না কোভিড-আক্রান্ত উমা ভারতীও।
বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পর ১৯৯৩-র অক্টোবরে বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল প্রভৃতি সংগঠনের ৪০ জন শীর্ষ নেতাকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেছিল ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই।
গত নভেম্বরে বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানটিতে একটি হিন্দু মন্দির বানানোর পক্ষে রায় দেয় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
ষোড়শ শতকে মোঘল সম্রাট বাবরের সময় তৈরি করা বাবরি মসজিদ ১৯৯২-এর ৬ই ডিসেম্বরে হিন্দুত্ববাদী ভিএইচপি, বিজেপি এবং শিবসেনা পার্টির সদস্যরা ধ্বংস করে।
কিছু হিন্দুদের মতে, মসজিদের ওই জায়গাটি ছিল হিন্দুধর্মের অন্যতম আরাধ্য দেবতা রামের জন্মস্থান এবং সেখানে মসজিদ হওয়ার আগে একটি মন্দির ছিল।
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পর হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে হওয়া দাঙ্গায় ভারতে দুই হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়।
এরপরেও অযোধ্যা ইস্যু নিয়ে ভারতে একাধিকবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রাণহানি হয়েছে বহু মানুষের।