গণবাণী ডট কম:
যুক্তরাষ্ট্রে ‘প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট’ বা নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম ভাষণে জো বাইডেন সকল বিভেদ ভুলে ঐক্য ও সহনশীল সমাজ গড়ে তোলার আহবান জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে উদ্দীপ্ত এক ভাষণে তিনি যারা তাকে ভোট দিয়েছেন, যারা তাকে ভোট দেননি, ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান সবাইকে শত্রুতা ভুলে সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরির আহবান জানান।
তিনি ঐক্য শব্দটির উপর বারবার বিশেষ গুরুত্ব দেন।
যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক সময় যে ধরনের বিভেদ ও তিক্ততা তৈরি হয়েছে সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমরা কি হতে চাই সে নিয়ে জোরালো সিদ্ধান্ত নেবার সময় এসেছে।”
“আমরা যদি একে অপরকে সহযোগিতা না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারি, তাহলে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্তও নিতে পারি।”
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আমিও বেশ কয়েকবার হেরেছি, আমি আপনার হতাশা বুঝতে পারছি।”
দেশটিতে পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গদের মৃত্যুকে ঘিরে সহিংস আন্দোলন, করোনাভাইরাসে বিশ্বের সবচাইতে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যুর অভিজ্ঞতা না ভুলে নতুন সমাজ গড়তে সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে বলেন তিনি।
কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারি প্রতিরোধে নেতৃত্ব দিতে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে একটি দল গঠন করার ঘোষণা দেন।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার গুরুত্ব উল্লেখ করেন।
তিনি তার ভোটার, প্রচারণা ক্যাম্পের কর্মী, নির্বাচনে নানা ধরনের কাজে যারা অংশ নিয়েছেন, নিজের পরিবার, বন্ধু ও সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানান।
দেশটির কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা যেভাবে আমার সাথে ছিলেন, সেভাবেই আমিও আপনাদের পাশেই থাকবো।”
৭৮ বছর বয়সী জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচাইতে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট।
মার্কিন ইতিহাসে যেকোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে এবারের নির্বাচনে। যার সংখ্যা ছিল সাত কোটি ৪০ লাখ।
জো বাইডেন মঞ্চে ওঠার আগে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত কমালা হ্যারিস তার ভাষণে বলেন, তিনি এখনি কাজ শুরু করতে প্রস্তুত।
জো বাইডেন এবং তিনি একসাথে বৈশ্বিক মহামারি ও বর্ণবৈষম্যকে মোকাবেলা করবেন বলে জানান।
জো বাইডেনের রানিং মেট কমালা হ্যারিস হতে যাচ্ছেন আমেরিকার ইতিহাসের প্রথম নারী, কৃষ্ণাঙ্গ এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভাইস প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের উইলমিংটনে বিজয়ী ভাষণ রাখেন দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ভাষণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ জবাব দিয়েছে। তারা আমাদের পরিষ্কার বিজয় এনে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি (৭ কোটি ৪০ লাখ) ভোট পেয়ে আমরা জয়ী হয়েছি।
শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষা আর অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে ইতিহাস গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন।বাংলাদেশ সময় শনিবার রাতে পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যে ভোট গণনায় তার জয় নিশ্চিত হয়। একই সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনে প্রেসিডেন্ট হওয়ার যে স্বপ্ন ছিল তার সেটা পূরণ হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি শপথের পর দায়িত্ব নেবেন। এর মাধ্যমে ৭৭ বছর বয়সি বাইডেন হোয়াইট হাউজে প্রথম মেয়াদে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন।
এদিকে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা। প্রথম অভিনন্দন জানান কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এছাড়া অভিনন্দন জানিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। জয় নিশ্চিত হওয়ার পর বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলে অভিনন্দন জানান সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এছাড়া সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এবং বিল ক্লিনটনও বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। করোনা মহামারির কারণে এবার রেকর্ড ১০ কোটির বেশি আগাম ভোট পড়েছে। যার বেশির ভাগই ডাকযোগের ভোট। বিভিন্ন রাজ্যে ভোটগ্রহণ ও গণনার সময় ভিন্ন হওয়ার কারণে ২০০০ সালের পর ভোট গণনায় এবারই সবচেয়ে বেশি বিলম্ব হয়েছে। ভোটগ্রহণের রাতেই ৪৪ রাজ্যের ভোট গণনায় এগিয়ে যান জো বাইডেন। জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের ২৫৩টি নিশ্চিত হয় তার। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২১৪তে আটকে থাকেন। বাকি ছয় রাজ্যে ভোট গণনায় দেরি হওয়ায় শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির তৈরি হয়। একই সঙ্গে নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। এর মধ্যেই তিনি নিজেকে জয়ী ঘোষণা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প; কিন্তু শেষ পর্যন্ত চারটি রাজ্যে ভোট গণনায় এগিয়ে যান বাইডেন। জয়ের খুব কাছাকাছি পৌঁছে যান তিনি।
গতকাল শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টায় তিনি পেনসিলভেনিয়ায় জয়লাভ করেন। এর মাধ্যমে তিনি ২৭৩টি ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত করেন। এরপর তিনি জর্জিয়া (ইলেকটোরাল ভোট ১৬), অ্যারিজোনা (১১) ও নেভাদা (০৬) অঙ্গরাজ্যে জয় পান। সব মিলিয়ে তিনি পেয়েছেন ৩০৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। অন্যদিকে বাইডেনের জয়ে দ্বিতীয় মেয়াদের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ১৯৮০ সালে জিমি কার্টার এবং ১৯৯২ সালে জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের পর এক মেয়াদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মার্কিন ইতিহাসে জায়গা হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তিনি পেয়েছেন ২৩২ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। খবর : বিবিসি।