গণবাণী ডট কম:
বিশ্ব মহামারি করোনাভাইরাস বা কোভিড ১৯ এর সংক্রমণ মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত লকডাউনের ৪র্থ দিন চলছে ঢিলেঢালাভাবে। লকডাউন কার্যকর করতে বিভিন্ন স্থানে চেকপোষ্ট বসিয়ে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে গাজীপুর জেলা ও মহানগর পুলিশ।
প্রশাসনের বিধি নিষেধ সত্বেও মহাসড়ক, হাট বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষের ভীড় বাড়ছে। সেই সাথে পাল্টা দিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা।
এতকিছুর পরেও গাজীপুরে চলছে ঢিলেঢালা লক ডাউন। মহাসড়ক, হাট বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষের ভীড় বাড়ছে। সেই সাথে পাল্টা দিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। গেল ২৪ ঘন্টায় গাজীপুরে করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে গাজীপুরে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬২ জনে। তার আগের ২৪ ঘন্টায়ও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
অপরদিকে, জেলায় নতুন করে আরও ৬৯জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২৮০জনে।
শনিবার (১৭ই এপ্রিল) গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা: মো: খাইরুজ্জামান জানান, গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাবে গেল ২৪ ঘন্টায় ২৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে তাদের মধ্যে ৬৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত করা হয়। নতুন শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে কালিগঞ্জ উপজেলায় ১জন ও গাজীপুর সদরে (মহানগরীসহ) ৬৮ জনের বাস। এর আগের দিন আক্রান্তের এ সংখ্যা ছিল ১৬৬ জন। জেলা শনাক্তের সংখ্যা কমলেও মৃত্যুর সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় নতুন করে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অপরদিকে, জেলায় এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭ হাজার ৭৬৯ জন।
এছাড়াও এ পর্যন্ত বিভিন্ন উপজেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর মধ্যে কালিগঞ্জ উপজেলায় ৭২৫জন, কালিয়াকৈর উপজেলায় ৯২৪জন, কাপাসিয়া উপজেলায় ৬১৫, শ্রীপুর উপজেলায় ৮শ ৭৭জন ও গাজীপুর সদরে ৬হাজার ১৩৯ জন রয়েছেন।
শনিবার মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, লকডাউন কার্যকর করতে বিভিন্ন স্থানে চেকপোষ্ট বসিয়ে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ। এছাড়া প্রতিদিন একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন।
গত ২৪ ঘন্টায় গাজীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় ৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। এসব ভ্রাম্যমাণ আদালতে দায়িত্ব পালন করেন গাজীপুর জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না রহমান এবং সাদিয়া সুলতানা।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে করোনা ভাইরাস এর বিস্তার রোধকল্পে সরকারী নির্দেশনা বাস্তবায়ন, লক ডাউন কার্যকর ও যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, মাস্ক পড়তে জনগণকে উৎসাহিত করা হয়। এসময় অত্যাবশ্যকীয় দোকান ছাড়া অন্যান্য দোকান খোলা থাকায় এবং মাস্ক না পড়ার কারণে দোকানিদের মোট ১০টি মামলায় ৫ হাজার ৮০০ টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়। এছাড়া জনসাধারণকে অতীব প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হতে অনুরোধ করা হয়।অহেতুক ঘোরাঘুরি, আড্ডা বন্ধকরণ, সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান, এবং ঔষধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে দূরত্ব বজায়ে রেখে অবস্থান করার জন্য সতর্ক করা হয়।
গাজীপুরে শ্রীপুরে লকডাউন বাস্তবায়নে ১৯টি মামলায় ৫৯হাজার ৭শ টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা মোস্তারী। আদালত সূত্র জানায়, সরকারের ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউন না মেনে উপজেলার কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার খবরে অভিযান চালানো হয়। এসময় বরমী বাজার এলাকা শাহ্-আলী ইলেকট্রনিক্স ২হাজার, মালেক ইলেকট্রনিক্স দুই হাজার, চাঁদপুর হোটেল এন্ড রেষ্টুরেন্টকে ২হাজার, বরমী মিষ্টি ঘর ২হাজার, বরমী এলাকার দুটি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপকে ১৫হাজার, এমদাদ ষ্টোর ২হাজার, নাদিয়া টেলিকমকে দুই হাজার টাকাসহ মোট ১৯টি মামলায় ৫৯হাজার ৭শ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
শনিবার সরেজমিনে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেকা গেছে সকাল থেকে অধিকাংশ দোকান পাট, শপিং মল বন্ধ রয়েছে। তবে, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মিষ্টির দোকান, জেুয়েলারী নিত্য প্রয়োজনীয় নয় এমন অনেক দোকান খোলা থাকতে দেখা যায়। মহানগরীর কাঁচা বাজার উম্মুক্ত স্থানে স্থানান্তর করা হয়নি। ফলে আগের বাজার ও আশপাশের সড়কে মানুষের উপচেপড়া ভীর। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।
গাজীপুর মহানগরীর জোরপুকুর পাড়, রেল গেট, কাঁচা বাজার, চান্দনা চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন এলাকায় নানা অজুহাতে অবাধে মানুষজন ঘুরাঘুরি করছেন।
তবে, সরকারি নির্দেশনা মেনে বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার যানবাহনসহ সব ধরনের গণ পরিবহন। তবে সড়ক মহাসড়ক দিয়ে রিকশা, অটো রিকাশা, লেগুনা প্রাইভেটকার চলতে দেখা গেছে। গণ পরিবহন সঙ্কটে ভোগান্তিতে পড়েছেন গার্মেন্টস শ্রমিকসহ বিভিন্ন লোকজন।
শিল্প অধ্যূষিত গাজীপুরে খোলা রয়েছে অন্তত ২ হাজারের বেশি তৈরি পোশাক কারখানা। লকডাউনে নিজস্ব পরিবহন দিয়ে এসব কারখানায় শ্রমিক আনা নেয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা তা মানছেন না। ফলে পেটের দায়ে শ্রমিকরা সকাল থেকে পাঁয়ে হেটে , রিকশা ও অটো রিকশাযোগে গাদাগাদি করে কারখানায় যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে অনেক শ্রমিকের মুখে নেই মাস্ক, মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি। ফলে উপেক্ষিত থাকছে করোনা সচেতনতা।
এদিকে, গণপরিবহন ও রাইড শেয়ার বন্ধ থাকলেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভাড়ায় মোটর সাইলে চলাচল করছে বিভিন্ন রুটে। কাজের আশায় জটলা বেঁধে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করছে বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবি মানুষ। কাজ না থাকায় হতাশা প্রকাশ করছেন অবস্থানরত এসব মানুষ।
এসব বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, লক ডাউনের মেয়াদ কম থাকায় কাঁচা বাজার উম্মুক্ত স্থানে সরিয়ে নেয়ার কাজটি করা হয়নি। লক ডাউনের মেয়াদ বাড়তে কাঁচা বাজার উম্মুক্ত স্থানে সরিয়ে নেয়া হবে। বিভিন্ন শিল্প কারখানা যাতে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলে সেটি মনিটরিং করা হচ্চে। কোথায় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করা হলে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।